পঞ্জাবের সন্ত্রাসে চাঙ্গা কংগ্রেস, সংসদ চালাতে মরিয়া বিজেপি

সন্ত্রাসই ঢাল। শাসকের। বিরোধীরও। দুর্নীতির আবহে হঠাৎ সন্ত্রাসের প্রবেশ। আর তখনই ’৫৬ ইঞ্চির বেলুন চুপসে দিতে ফের তেড়েফুঁড়ে আসরে নামল কংগ্রেস। আর শাসক বিজেপি? সন্ত্রাসকে ঢাল করেই এ বারে সংসদ চালাতে মরিয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ২১:১৭
Share:

ছবি: এএফপি।

সন্ত্রাসই ঢাল।

Advertisement

শাসকের। বিরোধীরও।

দুর্নীতির আবহে হঠাৎ সন্ত্রাসের প্রবেশ। আর তখনই ’৫৬ ইঞ্চির বেলুন চুপসে দিতে ফের তেড়েফুঁড়ে আসরে নামল কংগ্রেস। আর শাসক বিজেপি? সন্ত্রাসকে ঢাল করেই এ বারে সংসদ চালাতে মরিয়া। অন্তত অচল সংসদ জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে এককাট্টা হয়ে সচল হোক।

Advertisement

পঞ্জাবের সন্ত্রাস হামলা শুরুর ঘণ্টা কয়েক পর কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণের ক্ষেত্রটি আসলে প্রস্তুত করে দিয়েছিল বিজেপি-রই শরিক দল অকালি। নিজেদের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে কেন্দ্রের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা তুলে সরব হন সে দলের নেতারাই। ফলে মোদী সরকারের সমালোচনা করতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়নি কংগ্রেসকে। দলের কটাক্ষ, গত দশ বছর কেন্দ্রে ‘দুর্বল সরকারের’ জমানায় পঞ্জাবে একটাও সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়নি। কিন্তু এখন মজবুত সরকারের জমানায় পঞ্জাবে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পুরোদস্তুর শুরু হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ভারত-পাক সীমান্তে মোদীর মেয়াদে আটশো বার যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে ইসলামাবাদ।

সংসদে মওকা বুঝে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, কেন্দ্রের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বলছেন। আসলে পঞ্জাব ও কেন্দ্রের সরকার, উভয়েই দু’মুখে কথা বলছে। দুই সরকারের ব্যর্থতার কারণেই ফের সন্ত্রাস কবলিত হয়ে পড়েছে পঞ্জাব। পরে দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও আক্রমণ করে বলেন, ‘‘এ হল গোয়েন্দা ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যর্থতা এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার একটা মিশ্রণ।’’

কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্রে মোদী সরকার গঠনের পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীর ও পঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লম্ফঝম্ফ শুরু হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে কেন্দ্র ও বিজেপি এবং তাদের শরিক-শাসিত এই দুই রাজ্য। এমনকী, খলিস্তানি জঙ্গিদের ফাঁসি মকুবের জন্য অকালি সরকার খোলাখুলিই দাবি করছে। গতকালই খলিস্তানিরা পঞ্জাবে তাদের পতাকা উড়িয়েছে। পঞ্জাবে অকালি শাসনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও অত্যন্ত খারাপ। তারই পরিণতি হিসাবে এই সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে।’’

কংগ্রেসের আক্রমণের মুখে সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর জবাব, ‘‘যখন সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়াই চলছে, সেই সময় জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করা উচিত নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ কাল সংসদে বিবৃতি দেবেন।’’ বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির মাধ্যমেই অচল সংসদকে সচল করে তুলতে। গত সপ্তাহের পর আজ লোকসভা তা-ও কিছুটা গতি পেয়েছে। কিন্তু দলের নেতারা মনে করছেন, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে সকলে নিশ্চয়ই একজোট হবে। অতীতেও যেমন হয়েছে। বিজেপি-র এই কৌশলে আজ কিছুটা স্বস্তি এসেছে তৃণমূল শিবির থেকে। তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, সন্ত্রাসের ইস্যু দিয়ে শুরু করে জমি বিল, দুর্নীতি— সব বিষয়েই আলোচনা হওয়া উচিত। বিজেপি ঠিক যেটি চাইছে। বিজেপি-র মতে, কংগ্রেস আলোচনা থেকে পালিয়ে বাইরে গর্জন করছে। কিন্তু আলোচনা হলেই যাবতীয় দুর্নীতির অভিযোগ চুপসে যাবে। উল্টে অস্বস্তিতে পড়বে কংগ্রেসই।

মোদী সরকারের এক শীর্ষমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক বার আলোচনা শুরু হলেই সব বিতর্কিত বিষয় এমনিতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসবে। তখন দেখা যাবে কার কত ধানে কত চাল।’’ কংগ্রেসও বুঝতে পারছে, দুর্নীতির প্রসঙ্গে সংসদ যখন অচল তখন গুরুদাসপুরের ঘটনা সামনে রেখে সরকার সংসদ চালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, ‘‘পঞ্জাব নিয়ে আলোচনা করলে অবশ্যই আলোচনায় অংশ নেব। কারণ, এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। কিন্তু দুর্নীতি নিয়েও আপস করব না।’’ বিজেপি-র ফাঁদে পা দিতে চাইছে না কংগ্রেস। সন্ত্রাস নিয়ে কেন্দ্রকে দুষে ফের দুর্নীতি নিয়ে সরব হতে চায় তারা। আর দেড় বছর বাদেই পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট। কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজ্য কংগ্রেস নেতারাও এ ব্যাপারে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছেন। খলিস্তানিদের প্রতি নরম হওয়ার কারণে তাই আজ বিজেপি, অকালি-র পাশাপাশি আম আদমি পার্টিকেও দুষতে শুরু করেছে কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন