দাদরি নিয়ে এনসিপির প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।
গোমাংস খাওয়া নিয়ে গুজবের ফলে দাদরির বিসারায় পিটিয়ে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দশ জনের মধ্যে সাত জনই বিজেপির সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত বলে অভিযোগ। তাতে বিচলিত হয়নি বিজেপি। উল্টে গোহত্যা বন্ধ নিয়ে বিতর্ককে আক্রমণাত্মক ভাবে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। ফলে, ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সংযত ও সতর্ক কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীদের আশঙ্কা, এই বিষয়ে বিজেপি-বিরোধী সমালোচনার তীব্রতা বাড়ালে বিহার ভোটের আগে ধর্মীয় মেরুকরণের পরিবেশ আরও জোরালো হতে পারে। এবং তাতে লাভ বিজেপিরই।
আকলাখ মহম্মদের হত্যার তদন্তে ইতিমধ্যেই নেমেছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে প্ররোচনা দেওয়ার হোতা দশ জনের মধ্যে সাত জনই স্থানীয় বিজেপি সমর্থক বা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে জড়িত। তা ছাড়া লোকসভা ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশের মজফ্ফরপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম গত কাল বিসারা গ্রামে যে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন, তারও তদন্ত শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। কিন্তু এর পরেও আজ ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশেষ আক্ষেপ শোনা যায়নি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে। বরং মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য সঞ্জীব বলিয়ান আজ বলেন, ‘‘গত পঞ্চাশ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশে গোহত্যায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দলের মদতে যে ভাবে বেআইনি পথে গোহত্যা রাজ্যে চলছে, তাতে হিন্দু ভাবাবেগ আহত হচ্ছে।’’ আবার দাদরির ঘটনার কথা টেনে বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুশীল মোদী আজ ভোটের প্রচারে বলেন, ‘‘রাজ্যে ক্ষমতায় এলে সবার আগে গোহত্যা নিষিদ্ধ করবে বিজেপি।’’
বিজেপি এক দিকে যখন কৌশলে এই চরম অবস্থান নিয়েছে, তখন পাল্টা চরম অবস্থান নিয়েছে উত্তরপ্রদেশে শাসক দল সমাজবাদী পার্টি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব দু’দিন আগে বলেছিলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে বিজেপি গোমাংস রফতানি বন্ধ করে দেখাক।’’ আজ আবার সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা আজম খান বলেন, ‘‘দাদরির ঘটনাকে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিয়ে যাবে সমাজবাদী পার্টি।’’
এমন একটা পরিস্থিতিতেই ঘোর ধন্দে পড়ে গিয়েছে কংগ্রেস। বিসারা গ্রামে নিহত আকলাখের আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে শনিবার দেখা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু রাহুলের যাওয়া উচিত না উচিত নয়, তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত অবধি চিন্তায় ছিল কংগ্রেস। আজ আবার বিসারার ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছে ঠিকই, কিন্তু সে জন্য সাংবাদিক বৈঠক করতে দলের কোনও কেন্দ্রীয় নেতাকে নামাননি রাহুল। মাঠে নামানো হয়, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রমোদ তিওয়ারিকে।
প্রমোদ তিওয়ারি আজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রে মন্ত্রিসভা সমষ্টিগত দায়বদ্ধতার সূত্রে চলে। বিসারার ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নীরব হলেও মন্ত্রিসভায় তাঁর সতীর্থরা উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। মোদী যখন মৌন তখন বুঝতে হবে সঞ্জীব বলিয়ান বা মহেশ শর্মাদের মতের সঙ্গে তাঁর মতের মিল রয়েছে।’’ সুশীল মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস জানিয়েছে, ১৯৫৫ থেকেই বিহারে গোহত্যা নিষিদ্ধ। সেটা সুশীল মোদীর জানা উচিত। কংগ্রেসের শীর্ষ সারির নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ বলেন,‘‘সব দিক থেকে মোদী সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। সেই কারণেই দৃষ্টি ঘোরাতে গোহত্যা বন্ধের বিতর্কে হাওয়া দিচ্ছে বিজেপি।’’ তবে ঠিক মতো যে প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না তা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। কারণ, এখন সরকার-বিরোধিতায় শব্দ বাছাও কংগ্রেসের পক্ষে চ্যালেঞ্জ।