প্রথমে নির্বাচন কমিশন, তারপর রাষ্ট্রপতি ভবন। ইভিএম-কে সামনে রেখে বিরোধীদের একজোট করতে এ বার সুপ্রিম কোর্টে ঝাঁপিয়ে পড়ল কংগ্রেস। ইভিএম নিয়ে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন মায়াবতী। তা নিয়ে আজ সওয়াল করতে নামলেন পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বল, অভিষেক মনুসিঙ্ঘভিরা।
বিরোধীদের একজোট করলে কী হবে, ইভিএম নিয়ে ফাটল ধরছে কংগ্রেসের অন্দরেই। ইভিএমে কারচুপি হয় বলে প্রথমে মানতে চাননি বীরাপ্পা মইলি। মানবেনই বা কী করে! মনমোহন সরকারের আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি ইভিএম চালুতে ভূমিকা নিয়েছিলেন। গুলাম নবি আজাদরা তাঁকে সামলাতে বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার আগে কংগ্রেসের স্মারকলিপি পড়িয়ে সই করিয়ে নেন। তারপর বেঁকে বসেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। প্রশ্ন তোলেন, ইভিএমে কারচুপি হলে তিনি পঞ্জাবের গদি দখল করলেন কী করে! তাঁকে সামলাতে মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারিকে আসরে নামাতে হয়েছিল। মণীশ যুক্তি দেন, পঞ্জাবের প্রদেশ সভাপতি থাকার সময় ক্যাপ্টেনই ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
ক্যাপ্টেনকে সামলে সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেসের নেতারা যুদ্ধে নামতে না নামতেই আর এক বোমা ফাটান কর্নাটকের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া। উপনির্বাচনে জেতার পর সিদ্ধারামাইয়া সাফ জানিয়ে দেন, ইভিএমে কোনও কারচুপি নেই। ইভিএম বিরোধী অবস্থান নিতে সুপ্রিম কোর্টেও অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কংগ্রেসের কপিল সিব্বলকে। সিব্বল যুক্তি দিয়েছিলেন, দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও ইভিএম ব্যবহার হয় না। তা শুনে বিচারপতি জে চেলামেশ্বর কটাক্ষ করেন, ‘‘আমি যদি ভুল না করে থাকি, আপনার দলই ইভিএম চালু করেছিল।’’
ইভিএমে হ্যাকিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে বহুজন সমাজ পার্টির আর্জি শুনতে অবশ্য শীর্ষ আদালত আজ রাজি হয়েছে। মায়াবতীর দলের আর্জি ছিল, ইভিএমে কোন চিহ্নে ভোট পড়ল, তার প্রমাণ-সহ কাগজ ছাপার ব্যবস্থা হোক। কারণ সুপ্রিম কোর্ট নিজেই ২০১৩-তে ভিভিপ্যাট (ভোট-ভেরিফিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল।
এই দাবিতে বিরোধীদের ঐক্যও দেখা গিয়েছে। মায়াবতীর দলের হয়ে চিদম্বরমের সঙ্গে সওয়াল করতে নেমেছেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের হয়ে যুক্তি দিয়েছেন সিব্বল ও মনু সিঙ্ঘভি। তৃণমূল কংগ্রেস নিজে অবশ্য এই মামলায় ঢুকবে কি না, এ নিয়ে দলই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান কল্যাণ। তবে তাঁর যুক্তি, এ বিষয়ে তৃণমূলের অবস্থান পৃথক নয়। কমিশন ও রাষ্ট্রপতির কাছেও তৃণমূল বিরোধীদের সঙ্গে গিয়ে তা জানিয়ে এসেছে।
২০১৩-য় সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর আর্জির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট কাগজে ভোটের প্রমাণ ব্যবস্থা চালু করতে বলেছিল। স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সাপে-নেউলে হলেও সেই রায়কেই হাতিয়ার করে চিদম্বরম যুক্তি দেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে হ্যাকিংও বাড়ছে। কোথায় ভোট পড়ল, তার প্রমাণ কাগজে থাকলেই ভোটাররা নিশ্চিত হতে পারেন। ইভিএমে এই ব্যবস্থা চালুর জন্য ৩০০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কমিশন অর্থ চাইলেও কেন্দ্র তাতে কান দেয়নি। যে ভাবে কাজ এগোচ্ছে, তাতে আরও দেড়শো বছর লেগে যাবে। এ বিষয়ে কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি হয়েছে।