হুসেন আহমেদ।— নিজস্ব চিত্র
এআইসিসি নেতার বৈঠকস্থলে ঠাঁই পেলেন না কংগ্রেসের সমর্থক এক প্রতিবন্ধী যুবক। ভিক্ষা করতে দেখে তাঁকে কার্যত হুমকি দিয়ে সরিয়ে দিলেন রাজ্য কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা। অভিযোগের আঙুল আবুসালেহ নজমুদ্দিনের দিকে।
আজ দুপুরে জেলার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এআইসিসি নেতা সি পি জোশী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অসম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত, প্রাক্তন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, গৌতম রায়, শিলচরের বিধায়ক সুস্মিতা দেব, করিমগঞ্জ জেলার পাঁচ বিধায়ক। নেতাদের কথা শুনতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেলাসদরে এসেছিলেন কংগ্রেস কর্মীরাও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ভিড়ে ছিলেন দক্ষিণ করিমগঞ্জের ফারমপাশা গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হুসেন আহমেদ। স্নায়ুর সমস্যায় তাঁর দু’টি পা কার্যত অকেজো। বাড়িতে ৮৫ বছরের বাবা আকলাসউদ্দিন, মা নেকইবিবির এক মাত্র ভরসা হুসেনই। তিনি দু-চার টাকা রোজগার করে ফিরলে তবেই বাড়িতে দু’মুঠো ভাত জোটে। এমনই পরিস্থিতিতে অন্যের কাছে হাত পেতে টাকা নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই হুসেনের।
আজ করিমগঞ্জ শহরের এক অভিজাত হোটেলে কংগ্রেসের সভার খবর পেয়ে ফারমপাশা থেকে সেখানে পৌঁছন হুসেন। ইচ্ছে ছিল, নেতাদের কথা শুনবেন, দলের সহকর্মীদের কাছ থেকে মিলবে সামান্য টাকাও।
কিন্তু সব কিছুই উলটপালট হয়ে যায়। হোটেলের সামনে হাজির কয়েক জন কংগ্রেস কর্মী জানান, সি পি জোশীর বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ নজমুদ্দিন। গাড়ি থেকে নেমে হুসেনকে দেখেই চটে যান তিনি। জানতে চান, তিনি কেন এ ভাবে হামাগুড়ি দিয়ে ভিক্ষে করছেন! হুসেনকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দেন। বেগতিক দেখে সেখান থেকে চলে যান হুসেন। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় অনেকে সেই ছবিও তুলে রাখেন। যদিও এ নিয়ে আবুসালেহের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
পরে, হুসেনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘জীবনে দু’বার ভোট দিয়েছি। দু’বারই দিয়েছি কংগ্রেসকেই। আমি দু’টাকা রোজগার করে ফিরলে তবেই যে বাড়িতে ভাত হবে।’’ তাঁর আক্ষেপ, যে দলের উপর তিনি এত ভরসা করেন, সেই দলের নেতাই তাঁর সঙ্গে এ রকম আচরণ করলেন!
কাকতালীয় ভাবে এ দিনের বৈঠকে এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী বলেন, ‘‘কংগ্রেসে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক। গরিব মানুষের বন্ধু কংগ্রেসই।’’ জোশীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদী শুধু বিত্তশালীদের স্বার্থেই কাজ করেন। এ দিনই হাফলংয়ে দলীয় সভায় জোশী জানান, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়াতেই ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর নির্মাণে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজেপি মুখেই উন্নয়নের কথা বলে। বাস্তবে কিছুই হয় না।’’ গত কাল দলের সাংগঠনিক কাজে হাফলং পৌঁছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত জানান, ভোটের আগে অসমকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বিজেপি। ক্ষমতায় এসে সব ভুলে গিয়েছেন মোদী। বৃহৎ নদীবাঁধ ও জমিচুক্তি নিয়ে যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁরাই এখন নদীবাঁধ তৈরিকে সমর্থন করছেন। বাংলাদেশে গিয়ে স্বাক্ষর করছেন জমিচুক্তিতে।
একইসঙ্গে অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ডিমা হাসাওয়ে কংগ্রেসের ভিত মজবুত রয়েছে।’’