কোন শ্রেণির নাগরিক তিনি, প্রশ্ন সুস্মিতার

নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করতে গিয়ে অসমের নাগরিকদের ভাষার ভিত্তিতে দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হচ্ছে বলে দেশের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অভিযোগ জানালেন শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করতে গিয়ে অসমের নাগরিকদের ভাষার ভিত্তিতে দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হচ্ছে বলে দেশের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অভিযোগ জানালেন শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর বক্তব্য, বিশেষ করে বাঙালিরা সবাই বাইরে থেকে এসেছে, এটা প্রমাণ করতে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এর বিরুদ্ধে বরাক জুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন সুস্মিতা।

Advertisement

সুস্মিতা আজ নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি (সিআরপিসি) নামে অসমের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে রেজিস্ট্রার-জেনারেল সঙ্গে দেখা করেন। সমিতির স্মারকলিপি ছাড়াও সুস্মিতা দেবী রেজিস্ট্রার-জেনারেলকে একটি চিঠিও দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, এনআরসি-তে নাম তোলার ক্ষেত্রে ‘অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট’ (ওআই) এবং ‘নন-অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট’ (এনওআই)—এই দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা হচ্ছে। ভাষার ভিত্তিতে এমন শ্রেণি-বিভাজন বৈষম্যমূলক বলে তিনি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অভিযোগ করেন।

বিষয়টি তিনি লোকসভায় উত্থাপন করেছেন বলেও শিলচরের সাংসদ জানান। সেই বক্তব্যের একটি প্রতিলিপিও তিনি রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দেন। কীসের ভিত্তিতে এই বিভাজন? রাজ্যের এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে উদ্ধৃত করে সাংসদ লোকসভায় বলেন, হাজেলা বলেছেন, হিন্দু কি মুসলমান, বাঙালিরা অসমের আদি বাসিন্দা হতে পারে না। প্রতীক হাজেলার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি লোকসভায় মনে করিয়ে দেন: ১৮৭৪ সালে কাছাড় অসমের অন্তর্ভুক্ত হয়। বাঙালিরা তার আগে থেকেই কাছাড়ে বসবাস করছিল। চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকেও বাঙালির এই অঞ্চলে বসবাসের উল্লেখ রয়েছে বলে জানান তিনি।

Advertisement

সুস্মিতা দেব আজ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে সোজাসুজি জানতে চান, তাঁর দাদু অসমের মন্ত্রী ছিলেন। বাবা দীর্ঘ দিন কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব করেন। এখন তিনি কি ওআই নাকি এনওআই। রেজিস্ট্রার জেনারেল তাঁকে জুতসই জবাব দিতে পারেননি বলেই সুস্মিতার দাবি। এ নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলতে সাংসদকে অনুরোধ করেন তিনি। সাংসদ দেব তাঁর কাছে আরও জানতে চান, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সব ক’টি জেলায় অসমিয়া ও উপজাতিদের ওআই করা হলে বরাকের ক্ষেত্রে এর কী শর্ত। সেখানকার তিন জেলায় কি কোনও আদি বাসিন্দা নেই। সুস্মিতা দেব পরে বলেন, ‘‘কোনও জবাব পাইনি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে।’’ বিষয়টি নিয়ে যে তিনি শিলচরে ফিরেই লড়াই গড়ে তুলবেন, জানিয়ে দেন আজই। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসককে বলতে হবে আমি কি ওআই নাকি এনওআই।’’

এ দিকে, সিআরপিসি-র স্মারকপত্রে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ৬৮ লক্ষ ৮ হাজার আবেদন পত্র জমা পড়েছে এনআরসি-তে নাম তোলার জন্য। তাদের দেওয়া নথির পরিমাণ ৬ কোটি ৬৩ লক্ষ। এর মধ্যে মাত্র ৭৫ লক্ষ নথি আদি বাসিন্দার। সেগুলি পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। বাকি নথিপত্র ভাল করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাতেই তীব্র আপত্তি সিআরপিসি-র। তাঁরা সকল ভারতীয় নাগরিককে এক শ্রেণিতে রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দাবি করেন।

রেজিস্ট্রার জেনারেল অবশ্য তাঁদের জানান, এনআরসি চূড়ান্ত হলে এনআই, এনওআই লেখা থাকবে না। এখন শুধু কাজের সুবিধের জন্য তা করা হচ্ছে। কারণ আদি বাসিন্দারা যেন কোনওমতে এনআরসি থেকে বাদ না পড়ে, সে জন্যই এখন ওআই লেখা হচ্ছে। তাদের আবেদন বা নথির পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন