বিচারপতি বিল নিয়ে সংসদে একঘরে কংগ্রেস

বিচারপতি নিয়োগ বিল নিয়ে রাজ্যসভায় কার্যত একঘরে হয়ে পড়ল কংগ্রেস। আবার বিচারবিভাগের সম্মানহানি করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। এক বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে দাবি করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু। এর পরে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

বিচারপতি নিয়োগ বিল নিয়ে রাজ্যসভায় কার্যত একঘরে হয়ে পড়ল কংগ্রেস। আবার বিচারবিভাগের সম্মানহানি করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। এক বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে দাবি করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু। এর পরে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। তিন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক চাপে সমঝোতা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কাটজু। সুপ্রিম কোর্টের ওই প্রাক্তন বিচারপতি কোনও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ করছেন বলে দাবি করে কোনও কোনও শিবির।

এই বিতর্কের আবহে বিচারব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে দ্রুত এগোতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, বিচারব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে ইউপিএ সরকার যে দু’টি বিল এনেছিল তার মেয়াদ ফুরিয়েছে। তাই তারা ওই দু’টি বিল তুলে নিয়ে নয়া বিল আনতে চায়। রবিশঙ্কর বলেন, “ইউপিএ সরকারের বিলটি স্থায়ী কমিটিতে গিয়েছিল। সেটি বাতিল করেছিল স্থায়ী কমিটি।”

Advertisement

আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য শোনার সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানান স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস সাংসদ শান্তারাম নাইক। তিনি জানান, কমিটি কিছু সুপারিশ করেছিল, বিল বাতিল করেনি। নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন রবিশঙ্কর। কিন্তু নয়া বিচারপতি নিয়োগ বিল নিয়ে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ায় সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, এডিএমকে, ডিএমকে ও তৃণমূল। বাম ও জেডিইউ-ও আপত্তি জানায়নি। ফলে, বিরোধী আসনে কার্যত একঘরে হয়ে যায় কংগ্রেস। এমনকী, কোনও কোনও বিরোধী দল কংগ্রেসকে কেবল বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা না করার ‘পরামর্শ’ দেয়। শেষ পর্যন্ত ইউপিএ সরকারের বিল দু’টি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। আইনমন্ত্রী জানান, স্থায়ী কমিটির সব সুপারিশই নয়া বিলে রাখা হবে। বিচারপতি নিয়োগ কমিশনের চেহারাও সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরে অবশ্য কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা দাবি করেন, তাঁরা নয়া বিলের বিরোধিতা করেননি। বিলটির সব বিষয় বুঝতে চেয়েছিলেন মাত্র।

বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থার পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢা। তবে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আলোচনার পরিধি আরও বাড়ানো যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কলেজিয়ামের বাইরে দু’তিন জন বিচারপতি ও দু’তিন জন কৌঁসুলির সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একের পর এক বিচারপতির নিয়োগ নিয়ে বিতর্কে তিনি যে ক্ষুব্ধ তা আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি লোঢা।

বিচারবিভাগের সম্মানহানি করার ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে আজ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলায় দাবি করা হয়েছে, কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি কে এল মঞ্জুনাথের নাম পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদের জন্য সুপারিশ করেছে কলেজিয়াম। সেই সুপারিশ কার্যকর করার বিরুদ্ধে আর্জি জানিয়েছেন জনৈক রামশঙ্কর। প্রধান বিচারপতি ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, “মঞ্জুনাথের নাম সুপারিশ করা হয়েছে এটা আপনি জানলেন কী ভাবে? আমি কলেজিয়ামে রয়েছি, আমি এ কথা জানি না।” প্রধান বিচারপতির কথায়, “বিচারপতিরা সমাজেরই অংশ। তাঁদের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। কিন্তু এক বা দু’জন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের জন্য বিচারবিভাগের সম্মানহানি করা উচিত নয়। সেই উদ্দেশ্যেই ষড়যন্ত্র চলছে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ঙ্কর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন