হিমন্তবিশ্ব শর্মা
হিমন্তবিশ্ব শর্মার পথে এগোতে পারেন দলের জনাদশেক বিধায়ক— এমনই আশঙ্কায় ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি— ১০ বিধায়ক বিজেপিতে গেলেও কংগ্রেস সরকার পড়বে না।
এই পরিস্থিতিতে হিমন্ত জানিয়েছেন, ২-৩ দিনের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করবেন। তাঁর অনুগামী ৯ জন কংগ্রেস বিধায়ক— রহার পীযূষ হাজরিকা, নলবাড়ির জয়ন্তমল্ল বরুয়া, বিহালির পল্লবলোচন দাস, শদিয়ার বলিন চেতিয়া, রাতাবাড়ির কৃপানাথ মালাহ, গোলকগঞ্জের আবু তাহের বেপারি, জোনাইয়ের প্রদান বরুয়া, সিপাঝারের বিনন্দ শইকিয়া ও তেজপুরের রাজেন বরঠাকুর গত কাল দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করে আসেন। তাঁরাও স্পষ্ট জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেবেন। হিমন্তের কেন্দ্র জালুকবাড়িতে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের ওয়ার্ড কমিশনার, জেলা পরিষদ সদস্য, উত্তর গুয়াহাটি টাউন কমিটি ও গ্রাম পঞ্চায়েত সভাপতি রাজ্য বিজেপি সদর দফতরে গিয়ে ওই দলে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি সূত্রে খবর, আসুর সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সভাপতি ও সম্পাদক শঙ্করপ্রদাস রয় ও তপন গগৈও ১৬ সেপ্টেম্বর বিজেপিতে যোগ দেবেন। এই অবস্থায় কংগ্রেস শিবিরে ত্রাহিরব উঠলেও রণহুঙ্কার দিয়ে চলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত ও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।
হিমন্ত-সহ ১০ বিধায়ককে হারালে ১২৬ সদস্যের বিধানসভায় কংগ্রেসের হাতে থাকবে ৬৭ জন বিধায়ক। এখনও হিমন্ত দাবি করছেন আরও কংগ্রেসি বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। বিপিএফের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিন্ন হওয়ার পর, আরও চার জন বিধায়ককে হারালেই কংগ্রেস সরকার সঙ্কটে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে এসেছেন এআইসিসি পর্যবেক্ষক সি পি যোশী, অবিনাশা পাণ্ডেরা। গত কাল দফায়-দফায় তরুণ গগৈয়ের বাড়ি ও ব্রহ্মপুত্র অশোকে কংগ্রেসের সঙ্কটমোচন বৈঠক বসে। আজ ফের মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে যোশী-দত্ত-গগৈরা রাজীব ভবনে বৈঠক করেন।
কংগ্রেসে গগৈ-বিরোধী হিসেবে পরিচিত আরও কয়েক জন বিধায়ক বৈঠকগুলিতে ছিলেন। তার মধ্যে করিমগঞ্জের বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ জানান— হিমন্ত যাই বলুন, আর কোনও বিধায়ক কংগ্রেস ছাড়ছেন না। দত্ত বলেন, ‘‘যে ৯ জন বিধায়ক হিমন্তকে সংবর্ধনা জানানোয় সাসপেন্ড ও শো-কজ নোটিস পেয়েছিলেন, তাঁরা কংগ্রেস ছাড়বেন ধরেই নেওয়া হয়। আমরা উপ-নির্বাচনের জন্য তৈরি হচ্ছি। বিশ্বাসঘাতকরা দল ছাড়ায় দল দুর্বল নয়, বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে।’’ সিদ্দেক পরে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি মিটেছে। দলে আর কোনও অসন্তোষ নেই।’’ কংগ্রেস নেতা ভূমিধর বর্মণ মেনে নেন, এত জন বিধায়ক দল ছেড়ে চলে যাওয়ায় দলের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘নেতৃত্বের পরিবর্তন চেয়েই ভাঙন।’’ কংগ্রেসের দুই পরিষদীয় সচিব— বলিন চেতিয়া (কৃষি বিভাগ) ও আবু তাহের বেপারি (বন ও পরিবেশ বিভাগ) অবশ্য দিল্লি থেকে ফ্যাক্সেই পদত্যাগপত্র পাঠান। গগৈ তা গ্রহণ করেছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রামের মতোই আমরাও বিভীষণদের নিয়েই অসম জয় করব।’’ তিনি জানান, বিজেপিতে যোগ দিলেই নির্বাচনে প্রার্থীত্ব মিলবে না। নিঃশর্ত ভাবে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিতে চান তাঁদের স্বাগত। এ দিকে কংগ্রেসের তরফে প্রদেশ সভাপতি, দোটানায় থাকা অন্য বিধায়কদের আটকাতে ঘোষণা করে দিয়েছেন, বর্তমান কংগ্রেস বিধায়কদের সকলকে পরের বারও দলের টিকিট দেওয়া হবে। কংগ্রেস বিধায়কদের দলে টানা নিয়ে রাজ্য বিজেপির ভিতরেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।