অসম কংগ্রেস

মাথাচাড়া দিচ্ছে বিদ্রোহ, নোটিস পাঁচ নেতাকে

ছাইচাপা আগুনের মতোই কিছুদিন শান্ত থাকার পরে ফের রাজ্য কংগ্রেসের অভ্যন্তরে মাথাচাড়া দিল বিদ্রোহ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কয়েকজন কংগ্রেস নেতা পৃথক দল গড়ারও হুমকি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পাঁচ কংগ্রেস নেতাকে শো-কজ নোটিশ ধরিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। কিন্তু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনমনীয় মনোভাব নেওয়া কংগ্রেস নেতারা সেই নোটিশের জবাব দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

ছাইচাপা আগুনের মতোই কিছুদিন শান্ত থাকার পরে ফের রাজ্য কংগ্রেসের অভ্যন্তরে মাথাচাড়া দিল বিদ্রোহ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কয়েকজন কংগ্রেস নেতা পৃথক দল গড়ারও হুমকি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পাঁচ কংগ্রেস নেতাকে শো-কজ নোটিশ ধরিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। কিন্তু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনমনীয় মনোভাব নেওয়া কংগ্রেস নেতারা সেই নোটিশের জবাব দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

গত দু’বছর ধরে অসম কংগ্রেসে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বদলের দাবিতে ও তরুণ গগৈয়ের নেতৃত্বে অনাস্থা জানিয়ে সেই বিদ্রোহে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষা-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। সঙ্গে পেয়েছিলেন অন্তত ২০ জন মন্ত্রী-বিধায়কের সমর্থন। অভ্যন্তরীণ কোঁদলের জেরে প্রথমে পঞ্চায়েত ভোট ও পুরভোট, পরে লোকসভা নির্বাচনে অত্যন্ত খারাপ ফল করে দল। শেষ অবধি তখনকার বিদ্রোহী, বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত শিবির বদলে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আসেন। দত্ত ও গগৈ হাইকম্যান্ডের সমর্থন ও ভরসা আদায় করে নেন। পদত্যগ করেন হিমন্ত। তিন মন্ত্রীকে সরিয়ে দেন গগৈ। এরপর মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটিয়ে ও কয়েকজন বিদ্রোহী বিধায়ককে পরিষদীয় সচিব নিয়োগ করে তখনকার মতো বিদ্রোহ প্রশমিত করেন গগৈ। ভুবনেশ্বর কলিতার জায়গায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন অঞ্জনবাবু।

কিন্তু বিদ্রোহের চোরাস্রোত থেকেই গিয়েছে। এনআরসি ও অসমিয়ার সংজ্ঞাকে ঘিরে গগৈয়ের সঙ্গে বিধানসভার স্পিকার প্রণব গগৈয়ের মতান্তর চরম রূপ নেয়। প্রণববাবু রাজ্যের বিভিন্ন দল-সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে অসমিয়ার সংজ্ঞা বিষয়ে সুপারিশ করে যে রিপোর্টটি তৈরি করেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি প্রবীণ কংগ্রেস তথা আইএনটিইউসি নেতা ও দু’বারের বিধায়ক হিরণ্য বরা সরাসরি সারদাকাণ্ডে নাম জড়ানো অঞ্জন দত্তের পদত্যাগ দাবি করে বসেন। পাশাপাশি, হিমন্ত রাজ্যসভা ভোটের সময় এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার দিকে ইঙ্গিত করে পরোক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ফের আঙুল তোলেন। কংগ্রেস বিধায়ক রবীন বরদলৈও দলের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা নিয়ে অঞ্জনবাবুর সমালোচনা করেন।

Advertisement

গত ২৩ জুন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ বলিন কুলি, প্রাক্তন বিধায়ক হিরণ্য বরা ও কংগ্রেস নেতা রানা খান, আদিল শাহ ও দিগন্ত কলিতার বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের জন্য শো-কজ নোটিশ পাঠান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তবে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতারা জানান, তাঁরা এর জবাব দেবেন না। পরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে নতুন দল ‘অসম কংগ্রেস’ গড়া নিয়ে এক দফা বৈঠকও করেন। সেই কথা জানাজানি হওয়ার পর এআইইসিসি নেতা অবিনাশ পাণ্ডেকে সঙ্গে নিয়ে অঞ্জন দত্ত জানান: সম্ভবত ইংরাজিতে পাঠানো কারণ দর্শাবার নোটিশের অর্থ ওঁরা বুঝতে পারছেন না। এ বার তাঁদের অসমিয়া ভাযায় নোটিশ পাঠানো হবে। দলের মধ্যে এ ভাবে বিদ্রোহ বা ব্ল্যাকমেলিং বরদাস্ত করা হবে না।

বিষয়টি নিয়ে আজ প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতর, রাজীব ভবনে বৈঠকের পরে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেন, ‘‘সভাপতির পাশেই দল আছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে বিক্ষুব্ধ নেতাদের জবাব না পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্রোহ কড়া হাতে দমন করা হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অঞ্জনবাবুকে হাইকম্যান্ড নিয়োগ করেছেন। সুতরাং তাঁর বিরোধিতা করার অর্থ দলীয় হাইকম্যান্ডের বিরোধিতা করা।

দলীয় সূত্রে খবর, গগৈয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া হিমন্ত ও তাঁর সঙ্গীরা এ বার সামনে না এলেও ওই পাঁচ বিক্ষুব্ধ নেতার পিছনে তাঁদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। সমর্থন রয়েছে বরাকের একাধিক বিধায়ক ও সাংসদেরও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, কোণ ঠাসা কংগ্রেস ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে হারাবার রণকৌশল ঠিক করার আগেই দলীয় কোঁদল থামানোর দাওয়াই খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য অঞ্জনবাবুর মতে, এখনই ভোট হলেও কংগ্রেস ৫১টি আসনে জিতবে। নির্বাচনের এখনও প্রায় ১১ মাস বাকি। ততদিনে রাজ্যের ১২৬টি আসনের মধ্যে ৬৩টির বেশি আসনে জেতার জন্য তৈরি হয়ে যাবে দল। উল্লেখ্য, বর্তমান বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়কের সংখ্যা ৭৮।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement