সৌজন্য: রাজীব গাঁধী স্মরণ অনুষ্ঠানে রাহুল ও সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণী। সোমবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে। ছবি: পিটিআই।
বেঁচে থাকলে আজ চুয়াত্তর হতেন।
গলাটা একটু ভারী হল সনিয়া গাঁধীর। রাজীব গাঁধীর জন্মবার্ষিকীতে আজ সকালেই বীরভূমিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাহুল-সনিয়া। রাহুল পরে টুইটও করেছেন, ‘‘বাবার কথা মনে পড়ে, তাঁর অভাব অনুভব করি। তিনি একজন ভদ্র, সদাশয়, স্নেহশীল ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অকালমৃত্যু আমার জীবনে গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে। তিনি বেঁচে থাকতে অনেক জন্মদিন একসঙ্গে কাটিয়েছি।’’
বিকেলে ‘রাজীব গাঁধী সদ্ভাবনা পুরস্কার’ তুলে দেওয়া হয় গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর হাতে। সেখানে সনিয়াও ডুবলেন স্মৃতিতে। কিন্তু রাজীবের স্মৃতিচারণায় আসলে নাম না করে বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদীকেই। সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, এমনকি পুরস্কারপ্রাপক গোপালকৃষ্ণ গাঁধীও।
সনিয়া বললেন, রাজীব গাঁধীর রাজনৈতিক জীবন খুব অল্প সময়ের। কিন্তু ওই অল্প সময়েই অর্থনীতিতে মোড় এনেছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটারে একুশ শতকের ভিত গড়েছিলেন। পঞ্চায়েত, পুরসভায় ক্ষমতায়নের পাশাপাশি যুবকদেরও ১৮ বছরে ভোটাধিকার দিয়েছেন। আর এ সবের মধ্যে সব থেকে বড় বিষয় দেশের ঐক্য স্থাপন করা। রাজীবের সেই সদ্ভাবনার ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। আজকের সমাজের বিভাজন, ঘৃণা আর ধর্মান্ধতার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
মনমোহন সিংহও বললেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে দেশে চিন্তাজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ বাড়ছে, হিংসা-অপরাধ মাথাচাড়া দিচ্ছে, কয়েকটি গোষ্ঠী ঘৃণা ছড়াচ্ছে, ভিড় আইন নিজের হাতে নিচ্ছে। রাজীব গাঁধীর ধর্মনিরপেক্ষতা, সহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি মূল্যবোধ আজকের দিনেও পথ দেখাচ্ছে।’’
সকালে রাজীব স্মরণে সংসদের সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। নরেন্দ্র মোদী দলের এই প্রবীণ নেতাকে গুরুত্ব না দিলেও রাহুল হাত ধরে তাঁকে টেনে আনেন। সনিয়া-রাহুলের সঙ্গেও আডবাণীর কথা হয়। যদিও সকালেই মোদী টুইট করে দেশের প্রতি রাজীবের ‘প্রয়াসকে’ স্মরণ করেছেন। বিকেলে যখন দিল্লির এক প্রান্তে সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মরণসভায় বিরোধীরা ঠারে ঠোরে মোদীকেই বিঁধছেন, ঠিক সেই সময় রাজধানীর অন্য প্রান্তে রাজীবের নামে পুরস্কার অনুষ্ঠানেও একই ছবি।
গোপালকৃষ্ণ গাঁধীও তাঁর বক্তৃতার পরতে পরতে ক্ষমতার ঔদ্ধত্য, মিথ্যা প্রচার, মতান্তর নামেই যে রাষ্ট্রদ্রোহ নয়— এ সব কথা টেনে আনলেন। কোনও ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলে যে উচ্চতা বাড়ে, সে কথা বলতে দৃষ্টান্ত টেনে আনলেন মনমোহন সিংহের। যিনি রাজীবের আমলেই শিখ দাঙ্গার জন্য সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন।