মোদীকে ‘নীচ’ বলতেই মণিকে সরালেন রাহুল

এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মণিশঙ্করকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করেছে কংগ্রেস। ধরানো হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিস। অনেকেই মনে করছেন, কংগ্রেসের রাশ যে এখন রাহুল গাঁধীর হাতে, সারা দিনের ঘটনাপ্রবাহেই তা স্পষ্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫২
Share:

মণিশঙ্কর আইয়ার। ছবি- সংগৃহীত।

গত লোকসভা ভোটের সময়ে নরেন্দ্র মোদীকে ‘চা-ওয়ালা’ বলে কটাক্ষ করে বিজেপির পালেই হাওয়া লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ক’দিন আগে কংগ্রেস সভাপতি পদে রাহুল গাঁধীর মনোনয়ন পেশের দিনেও মোগল সম্রাটদের বিনা ভোটে অভিষেকের কথা বলে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন মোদীর হাতে। যে কথার সূত্র ধরে গাঁধী পরিবারের ঐতিহ্যকে ‘ঔরঙ্গজেব রাজ’ বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর আজ মোদীকে ‘নীচ আদমি’ বললেন সেই কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার।

Advertisement

এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মণিশঙ্করকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করেছে কংগ্রেস। ধরানো হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিস। অনেকেই মনে করছেন, কংগ্রেসের রাশ যে এখন রাহুল গাঁধীর হাতে, সারা দিনের ঘটনাপ্রবাহেই তা স্পষ্ট। বাবা রাজীবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মণিশঙ্করকে প্রথমে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন রাহুল। কংগ্রেসের ‘হবু-সভাপতি’ টুইটারে আজ প্রথমে লেখেন, ‘বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসকে আক্রমণ করে আখছার অভদ্র ভাষা ব্যবহার করেন। কিন্তু কংগ্রেসের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মণিশঙ্কর আইয়ার যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন, তা ভুল। আমি ও কংগ্রেস চাই, তিনি ক্ষমা চান।’ শুধু ‘নীচ’ নয়, নাম না করে মোদীকে ‘অসভ্য’ও বলেছিলেন মণিশঙ্কর। রাহুলের চাপে উর্দুতে ছ’বার ক্ষমা চান তিনি। বলেন, ‘‘আমি তো কংগ্রেসের কোনও পদেও নেই। ‘ফ্রিলান্স কংগ্রেসি’। প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন, তার জবাব দেওয়ার হক আছে। তবু আমার হিন্দি কমজোরি। ‘নীচ’ শব্দের অন্য মানে হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’

কিন্তু কে আর ক্ষমাপ্রার্থনার অপেক্ষায় বসে আছে? লালু প্রসাদ পত্রপাঠ বলেন, ‘‘মণিশঙ্কর মানসিক ভাবে অসুস্থ।’’ আর সুরাতের সভায় মোদী তত ক্ষণে তাতিয়ে দিয়েছেন জনতাকে। অতীতে সনিয়া গাঁধীর ‘মওত কা সওদাগর’ মন্তব্যও টেনে এনেছেন। যার জোরে এর আগে গুজরাত জিতেছিলেন তিনি। মোদী আজ বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি নীচ জাতির, গরিব। ওবিসি, দলিত, আদিবাসী, গরিবদের জন্য কাজ করি। আমাকে জেলে পাঠানোর ষড়যন্ত্রও হয়েছিল। মোগল সংস্কার দিয়ে গুজরাতের সন্তানের অপমান! আমাকে ‘গাধা’, ‘নর্দমার কীট’ বলা হয়েছে। ভোটে এর জবাব দিন।’’ অমিত শাহ-অরুণ জেটলিরা বলেছেন, ‘যমরাজ’ থেকে ‘ভস্মাসুর’— সবই বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। জেটলির বক্তব্য, ‘‘দুর্বল শ্রেণি থেকে উঠে আসা প্রধানমন্ত্রীকে ওঁদের সহ্য হয় না।’’ পরে মণিশঙ্করের সাসপেনশনকেও ‘লোকদেখানো’ বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

আজই আবার প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ মহম্মদ কাসুরির সঙ্গে এক আলোচনাচক্রে গিয়েছিলেন মণিশঙ্কর। কংগ্রেসের মতে, এতেও ভোটের আগে মেরুকরণের অস্ত্র পেয়েছে বিজেপি।

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, ভোটের আগে গুজরাতে পড়ে থেকে রাহুল যে জমি তৈরি করছেন, কখনও কপিল সিব্বল, কখনও মণিশঙ্করের মতো নেতাদের ‘সেমসাইডের’ জন্যই তা তছনছ হয়ে যাচ্ছে। গুজরাতের প্রচারে এত দিন অনেকটাই চালকের আসনে ছিলেন রাহুল। গত কাল সেখানে যোগী আদিত্যনাথের সভায় সাবান ছুড়ে প্রতিবাদ করেছিলেন এক দলিত। কারণ, অতীতে দলিত গ্রামে যাওয়ার আগে সাবান বিলি করিয়েছিলেন যোগী। ধর্মের জিগির তুলেও গুজরাতে প্রচার পর্বে কখনও টানা ‘মোদী-মোদী’ স্লোগান শুনতে হয়নি প্রধানমন্ত্রীকে। আজ মণিশঙ্করের মন্তব্যের পরে সেই ধ্বনিই উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর সভায়। সকালে দিল্লিতে অম্বেডকর ভবনের উদ্বোধনে মোদী যখন অনেকটাই ব্যাকফুটে ছিলেন, রাহুলকে ‘বাবাসাহেবের’ বদলে ‘ভোলে বাবা’র আরাধনা করতে হচ্ছে বলে আক্রমণ করতে হচ্ছিল তাঁকে— তখন মণিশঙ্করের একটি শব্দ সঞ্জীবনী বটিকা হয়ে দাঁড়ায় বিজেপির জন্য। কংগ্রেস সূত্রের মতে, সেই শব্দকে মোদী অস্ত্র করতেই সাসপেনশনের মতো পাল্টা হাতিয়ারে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিলেন রাহুল। কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, কংগ্রেসে তাঁর জমানা শুরু হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন