ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের মুক্তির দাবিতে জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ঘটনায় দেশের যুব ও শিক্ষিত সমাজের বড় অংশে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। তাই ঘটনার ফায়দা নিতে পুরোপুরি আসরে নেমেছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের গ্রেফতারি ও তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাকে আজ সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন কপিল সিব্বল। পাশাপাশি কানহাইয়াকেও তলে তলে আইনি সাহায্য দিচ্ছেন সিব্বলেরা।
আজ প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চে কপিল সিব্বল জানান, গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে বদনাম করার ছুতো খুঁজছে সরকার। কোনও ছাত্র দেশ-বিরোধী স্লোগান দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই পদক্ষেপ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ক্যাম্পাসে আসার এক্তিয়ার নেই। সিব্বল আরও জানান, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও এ ক্ষেত্রে খাটে না। কারণ, স্লোগান দেওয়া ছাড়া কেউ কিছু করেননি। এক সময়ে আলাদা খলিস্তান গঠনের জন্য স্লোগান দেওয়ায় পঞ্জাবের কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, শুধু স্লোগান তুললেই তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে ধরে নেওয়া যায় না। সিব্বল বলেন, ‘‘এর পরেও কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হলে বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজের বিরুদ্ধেও হওয়া উচিত। কারণ, তিনি নাথুরাম গডসের পুজো করেছেন।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিতেও আর্জি জানিয়েছেন সিব্বল। আগামিকাল সিব্বলের মামলাটির শুনানি হবে।
গোড়া থেকেই জেএনইউ কাণ্ড নিয়ে সক্রিয় রাহুল গাঁধী। গত কালও অসমের জোরহাটের সভায় জেএনইউ এবং হায়দরাবাদে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল। আজ শিবসাগরের সভায় অবশ্য এই বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি। তবে সভার পরে রাহুল দাবি করেন, ‘‘সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করছে আরএসএস। এ ভাবে তারা ছাত্রদের কণ্ঠরোধ করছে। আমরা লড়াই চালাব।’’
রাজনীতিকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের এ ভাবে সক্রিয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। কপিল সিব্বলেরা জানেন, আইনগত দিক থেকেও জেএনইউ কাণ্ডে প্যাঁচে পড়তে পারে সরকার। কারণ, ওই ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিয়ে সোলি সোরাবজির মতো আইনজীবীরাও নেতিবাচক মত দিয়েছেন। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন সোরাবজি। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘সেই সোরাবজির মতও এখন বিজেপি মানতে রাজি নয়।’’
কংগ্রেসের এক আইনজীবী নেতা জানাচ্ছেন, ইউরোপের দেশগুলিতে রাষ্ট্রদ্রোহ-বিরোধী আইন লোপ পেয়েছে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় আইন আছে। কিন্তু কেবল স্লোগান দেওয়ার জন্য পুলিশি পদক্ষেপ সেখানে এখন বিরল। জেএনইউ কাণ্ড নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচনা শুরু হয়েছে। তাই ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ-বিরোধী আইন নিয়ে বিতর্কও উস্কে দিতে চাইছে কংগ্রেস। তাই এখন আদালতে সক্রিয় সিব্বলেরা।