আসনের লোভে মান খোয়াবে না কংগ্রেস

তৃণমূল, না কি সিপিএমের সঙ্গে জোট? না কি একলা চলো? এই সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যের নেতাদের উপরেই ছেড়ে দিয়ে কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, আগে যা হয়েছে, হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৬
Share:

রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র।

কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভা ভোটে যদি একটি আসনও না পায়, না পাবে। কিন্তু জোটের জন্য কংগ্রেসের গরিমা কারও কাছে সমর্পণ করা যাবে না। তবে পাশাপাশি নিজের জমিও শক্ত করতে হবে।

Advertisement

এই শর্ত বেঁধে দিয়ে আজ লোকসভা ভোটে জোটের প্রশ্নে নীতি তৈরির ভার প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের উপরেই ছেড়ে দিলেন রাহুল গাঁধী। তৃণমূল, না কি সিপিএমের সঙ্গে জোট? না কি একলা চলো? এই সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যের নেতাদের উপরেই ছেড়ে দিয়ে কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, আগে যা হয়েছে, হয়েছে। তাঁর জমানায় রাজ্যের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। রাহুলের যুক্তি, তিনি কোনওরকম সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চান না। কারণ অতীতে দিল্লি থেকে চাপিয়ে দেওয়ার ফলে আখেরে দলের ক্ষতিই হয়েছে।

তাঁর শর্তের মধ্যেই অবশ্য কংগ্রেস সভাপতি সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন। তা হল, নিজের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে জোট করতে হলে আগে নিজস্ব সংগঠনের শক্তি বাড়াতে হবে। নিজের পায়ের নিচের জমি শক্ত করতে হবে। দৃশ্যমানতা বাড়াতে হবে।

Advertisement

কংগ্রেসের সাংগঠনিক রদবদলের পর আজ প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে নিজের তুঘলক লেনের বাসভবনে বৈঠক করেন রাহুল গাঁধী। অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরানোর পরে অনেক রাজ্য নেতারাই মনে হয়েছিল, এবার রাহুল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী। কারণ অধীরকেই মমতার সঙ্গে জোটের প্রধান বাধা হিসেবে দেখা হত। আবার সোমেনের সঙ্গে মমতার সম্পর্কের শীতলতা কাটিয়ে কীভাবে জোট হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

আজ বৈঠকের শেষে অধীর চৌধুরী, সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা বলেন, রাহুল গাঁধী সকলের কথা শুনেছেন। তাঁর মূল কথা একটাই। তা হল, কংগ্রেসের নিজস্ব শক্তি বাড়াতে হবে। সোমেন বলেন, ‘‘রাজ্যে কংগ্রেস যে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তৃণমূল ও বিজেপির মাঝখানে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে হচ্ছে, কংগ্রেস সভাপতি তা-ও মেনে নিয়েছেন।’’

কংগ্রেস পরিচালনার জন্য রাহুলের তৈরি ১১ জনের কমিটিতে প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির অনুগামী ও সোমেন শিবিরের নেতাদের মধ্যে ভারসাম্য রাখা হয়েছিল। কমিটির মধ্যে থেকে সভাপতি হিসেবে সোমেনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও হাল্কা খোঁচা দেওয়া হয়। প্রিয়-অনুগামী বলে পরিচিত অমিতাভ চক্রবর্তী ও আরও কয়েকজন বৈঠকে যুক্তি দেন, অধীর চৌধুরী এখনও কংগ্রেসের সবথেকে জনপ্রিয় ও লড়াকু নেতা। সোমেনের সামনেই রাহুলও তাতে সায় দেন। অধীর তাঁর অপরসারণের খবর প্রচারমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন বলে ক্ষোভ জানালে রাহুল বিষয়টি রাজ্যের পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈয়ের নজরে এনে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে বলেন। রাহুলের নির্দেশ, সব নেতাকে এক সুরে কথা বলতে হবে। কারও কিছু বলার থাকলে, তিনি তা ঘরোয়া ভাবে রাহুলকে জানাবেন।

তৃণমূলের সঙ্গে জোট না হলে, কংগ্রেসের অনেকেই নিজেদের আসন ধরে রাখতে বা টিকিট পেতে তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন। রাহুল আজ প্রশ্ন করেন, কেন তৃণমূল ছাড়ছে? রাজ্যের নেতারা বলেন, কেউ ভয়ে, কেউ লোভে। বৈঠকে নতুন চার কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর মালাকার, নেপাল মাহাতো, আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, প্রিয়-জায়া দীপা দাশমুন্সিও হাজির ছিলেন। অমিতাভ চক্রবর্তী, শুভঙ্কর সরকার, সন্তোষ পাঠক, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়রাও হাজির ছিলেন বৈঠকে। বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে সোমেন নিয়ে এসেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ সর্দার আমজাদ আলিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন