ভাল করে থ্যাংক ইউ বলা হল না যে!

আগমনের প্রহরী ছিলেন তিনি। তিরোধানেও শেষ সঙ্গী! পরম আনন্দের ঘোর না কাটতেই, চরম ধাক্কা অপেক্ষা করে থাকবে ভাবতেই পারেননি মেঘালয় পুলিশের সশস্ত্র ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল এস এ লাপাং।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ১৯:৪৪
Share:

কনস্টেবল এস এ লাপাং।

আগমনের প্রহরী ছিলেন তিনি। তিরোধানেও শেষ সঙ্গী! পরম আনন্দের ঘোর না কাটতেই, চরম ধাক্কা অপেক্ষা করে থাকবে ভাবতেই পারেননি মেঘালয় পুলিশের সশস্ত্র ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল এস এ লাপাং।

Advertisement

সামান্য এক কনস্টেবল হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে বহু ভিআইপির কনভয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। কখনও জিপসির পিছনের আসনে, কখনও সামনে মেশিনগান হাতে দাঁড়িয়ে। নিয়মমাফিক কাজ শেষ হয়েছে। সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও পরবর্তী ডিউটিতে পা বাড়িয়েছেন।

কিন্তু, সোমবার প্রথম ভিভিআইপি-র ঘর থেকে ডাক পড়ল। বেজায় ঘাবড়ে গিয়েছিলেন লাপাং। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘‘ডাক পড়ায় ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই কোনও ভুল করেছি। না হলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আমায় তলব করবেন কেন! না জানি কী ভাষায় কথা বলবেন! কোন মুখে ক্ষমা চাইব! কিন্তু, ঘরে ঢুকতেই একগাল হেসে আমায় কাছে ডাকলেন স্যর। এর পর হিন্দি ও ইংরেজি মিশিয়ে বললেন, ‘থ্যাংক ইউ বাডি। এ ভাবেই মন দিয়ে কাজ করুন। ভাল ভাবে বাঁচুন। আমার সঙ্গে হাত মেলালেন তিনি। তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। এই প্রথম কোনও এত বড় মানুষ আমার খোঁজ করে ঢেকে পাঠিয়ে হাত মেলালেন।’’

Advertisement

কালামের সফরসঙ্গী সৃজনপাল সিংহ জানান, কার্যত যাত্রাপথের অর্ধেকই কালাম অস্বস্তিতে ছিলেন লাপাংকে নিয়ে। তাঁর বক্তব্য ছিল, কেন এক জন জওয়ান তাঁর জন্য গোটা রাস্তা দাঁড়িয়ে যাবে! সৃজনকে বার বার অনুরোধ করছিলেন, রেডিওতে খবর পাঠিয়ে ওই জওয়ানকে বসার জন্য বলা হোক। সম্ভব না হওয়ায় হাতের ইশারায় জওয়ানকে বসতেও বলেন। কিন্তু, আড়াই ঘণ্টার রাস্তা নিয়ম মেনে বসতে পারেননি লাপাং। আইআইএম পৌঁছেই কালাম জেদ ধরেন ওই কনস্টেবলকে ডেকে পাঠাতে হবে। এত ক্ষণ দাঁড়াবার জন্য লাপাং-এর কাছে ক্ষমাও চান তিনি। আপ্লুত লাপাং জানিয়েছিলেন, স্যর তিন ঘণ্টা কোন ছার, আপনার জন্য ৬ ঘণ্টাও দাঁড়াতে পারি।

মুগ্ধতাকে সঙ্গী করে বাইরে এসে দাঁড়ান লাপাং। সহকর্মীদের জানান, অনন্য অভিজ্ঞতার কথা। এর পর ফের গাড়িতে গিয়ে বসেন সকলে।

এ দিন, কালামকে ফের গুয়াহাটি পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর দলেরই। কিন্তু, তা হল কই! লাপাং বলেন, ‘‘বক্তৃতা শুরু হওয়ার পরেই শুনলাম চেঁচামেচি। অফিসার দৌড়ে এসে বললেন, গাড়ি ঘোরাও, বেথেনি হাসপাতাল যেতে হবে। অবাক হয়ে দেখলাম, একটু আগে হাত মেলালাম যাঁর সঙ্গে, তাঁর সংজ্ঞাহীন দেহ বের করে আনা হচ্ছে!

লাপাংরাই ফের এসকর্ট করে কালামকে বেথেনি হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে সব শেষ।

কিন্তু, এক বার হাত মিলিয়ে কালাম যেন লাপাংকেই ভিভিআইপি বানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। সকলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। কেউ চাইছেন তাঁর ছবি। লাপাং কিন্তু মনমরা। তাঁর মতে, ওই মিনিটখানেকের দেখা হওয়াটাই হয়তো তাঁর জীবনের সেরা সুখ ও দুঃখের সময় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বার উত্তেজনায় কিছু বলতেই পারিনি। ইচ্ছে ছিল ফেরার সময় ফের স্যরের সঙ্গে একটি বার হাত মিলিয়ে কথা বলব। আমায় যে সম্মান দিলেন, তার বদলে ভাল করে থ্যাংক ইউটাই বলা হল না যে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন