CAA

সিএএ বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত পুলিশকর্মী-সহ ৪, আগুন-ইটবৃষ্টি

পিস্তল উঁচিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যেতেও দেখা যায় এক যুবককে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:২৩
Share:

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে জাফরাবাদ, পিস্তল হাতে এক যুবক। ছবি: পিটিআই।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রাজধানী দিল্লি। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সঙ্ঘর্ষ চলাকালীন মাঝখানে পড়ে প্রাণ গেল পুলিশের এক হেড কনস্টেবলের। পাশাপাশি তিন জন সাধারণ নাগরিকেরও মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক জায়গায় নতুন করে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে। আজই দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন সস্ত্রীক ডোনাল্ড ট্রাম্প। সন্ধ্যায় আগরা থেকে তিনি দিল্লি আসেন। তার মধ্যে এই ঘটনায় চিন্তা বেড়েছে সাউথ ব্লকের।

Advertisement

শনিবার রাত থেকে শাহিন বাগের ধাঁচে বিক্ষোভ চলছে জাফরাবাদের রাস্তায়। কয়েকশো মহিলা জড়ো হয়েছেন সেখানে। তা নিয়ে রবিবারই পুলিশকে হুমকি দিয়েছিলেন বিজেপির কপিল মিশ্র। তিন দিনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের না হঠালে তাঁরাও পাল্টা রাস্তায় নামবেন। সেই নিয়ে গতকালই তেতে উঠেছিল জাফরাবাদ। সোমবার দুপুরেও তা নিয়ে বিক্ষোভ চলছিল গোকুলপুরি, ভজনপুরা এলাকায়। তখনই সিএএ-র সমর্থনে একদল মানুষ সেখানে এসে হাজির হয় বলে অভিযোগ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে দিতে সিএএ বিরোধী মিছিলের সামনে হাজির হয় ওই দলটি। তাতেই পরিস্থিতি তেতে ওঠে। রাস্তার উপরই দু’পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ বেধে যায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি করতে থাকে। বেশ কিছু গাড়িও দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি একটি পেট্রোল পাম্পেও আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশের একটি বাহিনী। লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে সংঘর্ষ চরম আকার নেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করেই ইটবৃষ্টি শুরু হয়। তাতেই মাথায় গুরুতর আঘাত পান রতনলাল নামের এক হেড কনস্টেবল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ইটের আঘাতে আরও বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জিটিবি হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

Advertisement

অন্য দিকে সংঘর্ষে আহত হন মহম্মদ ফুরকান নামে আরও এক সাধারণ নাগরিক। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলের দিকে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

ঘটনার সময়কার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে পিস্তল উঁচিয়ে পুলিশকে শাসানি দিতে দেখা গিয়েছে এক যুবককে। এমনকি গুলির শব্দও শোনা গিয়েছে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার ডিজিটাল।

সোমবারই সপরিবারে দু’দিনের ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার সকালে আমদাবাদ হয়ে আগরা গিয়েছেন তাঁরা। সেখান থেকে দিল্লি ফেরেন। তার মধ্যেই পরিস্থিতি এমন চরম আকার ধারণ করায় উদ্বেগ বাড়ছে সাউথ ব্লকের। শান্তি বজায় রাখতে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। অশান্তি থেকে দূরে থাকতে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলও।

তবে এ দিনের ঘটনার জন্যও বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে দায়ী করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।গতকাল জাফরাবাদে অশান্তির পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় টুইটারে একাধিক মন্তব্য পোস্ট করেছেন কপিল মিশ্র। কোথাও তিনি লেখেন, ‘‘দিল্লিতে দ্বিতীয় শাহিন বাগ হতে দেব না।’’ কোথাও আবার বিক্ষোভের ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘‘জাফরাবাদে বিক্ষোভের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। ফের একটা এলাকায় আইনের শাসন নেই। মোদীজি ঠিকই বলেছিলেন যে, শাহিন বাগ দিয়ে শুরু হয়েছে, এ বার ধীরে ধীরে রাস্তা, গলি, বাজার হারানোর জন্য প্রস্তুত হন। আপনাদের দরজা পর্যন্ত না এসে পৌঁছনো পর্যন্ত চুপ করেই থাকুন আপনারা।’’

এই ধরনের মন্তব্য করে কপিল মিশ্রই জাফরাবাদে হিংসায় মদত জুগিয়েছেন বলে এ দিন অভিযোগ করেছেন ওয়াইসি। নাম না করে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘প্রাক্তন বিধায়ক এবং এক বিজেপি নেতার উস্কানিমূলক মন্তব্যই এ দিনের দাঙ্গার জন্য দায়ী। এখন তো পুলিশের যুক্ত থাকার প্রমাণও স্পষ্ট। ওই প্রাক্তন বিধায়ককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। হিংসা রুখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে এটা আরও ছড়িয়ে পড়বে।’’

ওয়েইসির টুইট।

ওয়াইসির অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি কপিল মিশ্র। তবে টুইটারে বিক্ষোভকারীদের শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘সকলের কাছে আমার আনুরোধ, হিংসার মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দিল্লিতে ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকুক। তাতেই সকলের মঙ্গল। সিএএর সমর্থক হোন বা বিরোধী, হিংসা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। সকলের কাছে আমার অনুরোধ, হিংসা বন্ধ করুন।’’

কপিল মিশ্রর টুইট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন