Coronavirus

ধাপে ধাপে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা গোটা দেশে

সংক্রমণের রেখচিত্র (এপিডেমিক কার্ভ) কবে শীর্ষে পৌঁছবে, তা নিয়ে সর্বত্র চর্চা শুরু হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:০৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

এক-একটি রাজ্যে এক-এক সময়ে শীর্ষে পৌঁছবে করোনা সংক্রমণ। অর্থাৎ, দেশ জুড়ে এক বারে নয়, বরং বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্ন ভাবে একাধিক বার (মাল্টিপল) সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটবে করোনার। এই তথ্যই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশকে। কারণ, ‘মাল্টিপল পিক’-এর অর্থই হল দেশে সংক্রমণের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হওয়া।

Advertisement

তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত-সহ একাধিক রাজ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে। যার অর্থ সেখানে রেখচিত্র শীর্ষে পৌঁছেছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে সেই রেখচিত্র বর্তমানে ঊর্ধ্বগামী। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে।

সংক্রমণের রেখচিত্র (এপিডেমিক কার্ভ) কবে শীর্ষে পৌঁছবে, তা নিয়ে সর্বত্র চর্চা শুরু হয়েছে। চর্চার মধ্যেই স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, এত দিনে করোনাভাইরাস নিয়ে যা কিছু প্রচার হয়েছে, তাতে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, রেখচিত্র শীর্ষে পৌঁছনোর পরেই সংশ্লিষ্ট দেশে বা রাজ্যে সংক্রমণের হার তুলনামূলক ভাবে আস্তে আস্তে কমেছে। অবশ্য বিজ্ঞানী-গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এটা শুধু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেই নয়, যে কোনও সংক্রমণের হয়ে থাকে। এপিডেমিক কার্ভ শীর্ষে পৌঁছনোর পরেই তা নীচে নামতে শুরু করে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোঝিকোড়ে নামার সময় পিছলে গিয়ে দু’টুকরো বিমান, হত অন্তত ১৭, আহত বহু​

‘দ্য সেন্টার ফর ডিজ়িজ়, ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ জানাচ্ছেন, এই সংক্রমণ সব জায়গায় সমান ভাবে হচ্ছে না বা আগামী দিনেও হবে না। সংক্রমণের হার কোথাও তুলনামূলক ভাবে বেশি, কোথাও কম হবে। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তর ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে আস্তে আস্তে এপিডেমিক কার্ভ উপরে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে সংক্রমণের মেয়াদ স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পাবে।’’

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, যে সমস্ত রাজ্য সফল ভাবে লকডাউন করতে পেরেছে, সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। কিন্তু যে রাজ্যগুলির লকডাউন প্রক্রিয়াতেই ফাঁক রয়েছে, সেখানে ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এখন সেটাই হচ্ছে। তা ছাড়া তাঁরা এ-ও বলছেন, এমনিতেই লকডাউন প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হয়েছে। তত দিনে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তার পরেও নিয়ন্ত্রণ করা যেত, যদি লকডাউন ঠিক ভাবে মানা হত। সেখানে প্রশাসনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু ফাঁক থেকে গিয়েছে ওখানেই। এক গবেষকের মতে, ‘‘মানুষের সঙ্গে মানুষের কন্ট্যাক্ট বন্ধ করাই লকডাউনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। শুধু খাতায়কলমে লকডাউন হলে সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। যে সব রাজ্যে লকডাউন সফল হয়নি, তাদেরই ভুগতে হয়েছে বা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: এক দিনে ৫২ জন মারা গেলেও রাজ্যে কমল সংক্রমণের হার​

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, বিদেশে সংক্রমণের হার দেখেই কেন্দ্রীয় সরকারের বোঝা উচিত ছিল, এক বার সংক্রমণ শুরু হলে কত দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই অনুযায়ী নীতি তৈরি করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ‘মাইক্রোবায়োলজিস্টস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখ জানাচ্ছেন, ভারতের মতো দেশে লকডাউন কোনও সমাধান নয়। তাতে অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হবে। লকডাউন পর্বে কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও লকডাউন উঠলে কী কী করতে হবে, তার সুনির্দিষ্ট নীতি তৈরির দরকার ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘দূরত্ব-বিধি মানা এবং মাস্ক পরাটা শুধু বাধ্যতামূলক করাই নয়, সেগুলো ঠিক ভাবে মানা হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার ছিল। কিন্তু সেই মনিটরিং ঠিক ভাবে হয়নি বলেই সংক্রমণ এ ভাবে ছড়িয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন