Coronavirus in India

কত দিনে দ্বিগুণ আক্রান্তের সংখ্যা, নজর বিশেষজ্ঞদের

বিজ্ঞানী-গবেষকদের একটি অংশের বক্তব্য, সংক্রমণ পুরো নিয়ন্ত্রিত না হলেও তার গতি বাড়ছে না কমছে, তা দেখা জরুরি।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৩:০২
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে সাড়ে সাত মাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও তা কমার কোনও লক্ষণ নেই।

Advertisement

বিজ্ঞানী-গবেষকদের একটি অংশের বক্তব্য, সংক্রমণ পুরো নিয়ন্ত্রিত না হলেও তার গতি বাড়ছে না কমছে, তা দেখা জরুরি। কারণ, সেটাই সংক্রমণের অভিমুখ নির্দেশ করে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সংক্রমণের ‘ডাবলিং টাইম/রেট’-এর (প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা যত দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে) দিকে লক্ষ রাখছেন। কারণ, এই রেট যে কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রে তার গতি বুঝতে সাহায্য করে। সেই অনুযায়ী সংক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা যায়।

কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ‘ম্যাথমেটিক্স ও স্ট্যাটিস্টিক্স’-এর অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কোভিড ১৯-এর ক্ষেত্রে ডাবলিং টাইমের অর্থ হল, প্রতিদিন যত লোক আক্রান্ত হচ্ছেন, তার সংখ্যাটা কত দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে। অর্থাৎ, ধরা যাক, প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার আক্রান্ত হচ্ছেন, সেটা কত দিন বাদে দৈনিক গড়ে ১০ হাজার হবে, সেটাই হল ডাবলিং টাইম/রেট।’’ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ডাবলিং টাইম/রেট যত বাড়বে, অর্থাৎ প্রতিদিন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে যত বেশি সময় লাগবে, বুঝতে হবে সংক্রমণের গতি কমছে। আবার ডাবলিং টাইম/রেট দ্বিগুণ হতে যদি কম সময় লাগে, তা হলে বুঝতে হবে সংক্রমণের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে দেশে কোভিডের ডাবলিং টাইম ছিল ৩.৪ দিন। জুনের প্রথম দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫.৪ দিনে। আবার জুনের মাঝামাঝি তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.৪ দিনে। চলতি মাসের শুরুতে যা দাঁড়িয়েছে ২১ দিনে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ধারাবাহিক ভাবে ডাবলিং টাইমের উন্নতি হয়েছে দেশে। সংক্রমণ প্রতিরোধে কী নীতি গ্রহণ করা হবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে ডাবলিং টাইমের উপরে।’’ তবে এখানে একটি সতর্কবার্তাও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, লকডাউন, দূরত্ব-বিধি, মাস্ক পরা, অর্থাৎ সংক্রমণের প্রতিরোধের নিয়মগুলি মানতে শিথিলতা দেখা দিলে ফের ডাবলিং টাইম কমতে পারে। অর্থাৎ, সংক্রমণ আবারও দ্রুত হারে ছড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে।

এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘সরকার কী ভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে, সংক্রমণ রোধে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। সেই সমস্ত রাজ্যেই ডাবলিং টাইমের উন্নতি হয়েছে যারা ঠিক ভাবে নিয়ম পালন করতে পেরেছে।’’ ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় আবার জানাচ্ছেন, পরীক্ষা বেশি হলে স্বাভাবিক ভাবেই আক্রান্তের সংখ্যাও প্রকাশ্যে আসে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে কত জন ভর্তি হচ্ছেন, সেটিও দেখতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আক্রান্তের সংখ্যা ও তাঁদের মধ্যে কত জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, সেই হিসেব পর্যালোচনা করেও সংক্রমণের গতি বোঝা যায়।’’

গবেষকদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, শুরু থেকেই কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের গতি বেশি ছিল। এমনিতেই শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ অনেক দ্রুত ছড়ায়। সেখানে কোভিডের গতি সাধারণ সংক্রমণের থেকে অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) একাধিক বার সংক্রমণের গতি নিয়ে সতর্ক করেছে দেশগুলিকে। এক গবেষকের কথায়, ‘‘সংক্রমিতের সংস্পর্শে না আসাই এই সংক্রমণ রোখার অন্যতম উপায়। সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা প্রয়োজন।’’ ‘ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর পূর্বাঞ্চলের সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সদস্য অয়ন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ডাবলিং টাইমের উন্নতি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এ নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই। নিয়ম পালনে অসতর্ক হলে সংক্রমণের গতি আবারও বাড়তে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন