Narendra Modi

২০ লক্ষ কোটি! প্যাকেজ নিয়ে ধন্দ থাকছেই

এই আর্থিক প্যাকেজ কোথায় কতখানি ব্যবহার হবে, তা প্রধানমন্ত্রী জানাননি। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সবিস্তারে জানাবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ০৪:২৫
Share:

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

খামের উপরে লেখা ২০ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু ভিতরে সত্যিই কত টাকা রয়েছে, তা জানা গেল না!

Advertisement

করোনা-সঙ্কটের গ্রাস থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তুলতে আজ ২০ লক্ষ কোটি টাকার ‘আর্থিক প্যাকেজ’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা দেশের জিডিপি-র ১০ শতাংশর সমান। তবে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, এর পুরোটাই নতুন নয়। গরিবদের সুরাহায় সরকার আগেই যে প্রকল্প ঘোষণা করেছে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নগদের জোগান বাড়াতে যে ত্রাণ ঘোষণা করেছে, তা-ও এই ২০ লক্ষ কোটি টাকার অংশ।

এই আর্থিক প্যাকেজ কোথায় কতখানি ব্যবহার হবে, তা আজ প্রধানমন্ত্রী জানাননি। বলেছেন, আগামী কয়েক দিনে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সব বিস্তারিত ভাবে জানাবেন। তবে মোদীর আশ্বাস, আর্থিক প্যাকেজে কুটির শিল্প, ছোট-মাঝারি শিল্প থেকে কর্পোরেট জগৎ, শ্রমিক-কৃষক থেকে মধ্যবিত্ত সকলের জন্যই ব্যবস্থা থাকবে। সঙ্গে থাকবে ভূমি ও শ্রম আইনের সাহসী সংস্কার। যা ভারতকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে।

Advertisement

প্যাকেজ সম্পর্কে বিশদ ঘোষণা করেননি প্রধানমন্ত্রী, ফলে ভাল-মন্দ প্রতিক্রিয়াও প্রত্যাশিত নয়। শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রার মতে, বিশদ জানা গেলে তবেই বোঝা যাবে, এই সিদ্ধান্ত ১৯৯১-এর মতো মোড় ঘোরাতে পারবে কি না!

কিন্তু অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, ২০ লক্ষ কোটি টাকার দায়ই তে কেন্দ্র বহন করবে না,‌ এটা স্পষ্ট। লকডাউন শুরুর পরে মোদী সরকার ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার গরিব কল্যাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ত্রাণের পরিমাণ ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা। দুই মিলিয়ে ৬.২ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আরও প্রায় ১২.৮ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক দাওয়াই আসতে চলেছে।

আরও পড়ুন: মোদীর স্বদেশি আত্মনির্ভরতার ডাকেও সংশয় অনেক

আরও পড়ুন: চাকা ঘুরল ঘরে ফেরার ৮ ট্রেনের

এ দিকে, অর্থ মন্ত্রক নিজেই জানিয়েছে, চলতি বছরে বাড়তি ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা ধার নেওয়া হবে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে তার বেশি নগদ দাওয়াই বা ‘ফিস্কাল স্টিমুলাস’ দেওয়া সম্ভব নয় বলেই অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর মত। লকডাউনের জেরে জিএসটি, আয়কর, কর্পোরেট কর থেকে আয় কমে যাওয়ার ফলে, বাড়তি ধারের

অনেকখানি রাজস্ব ক্ষতি পূরণ করতে চলে যাবে। প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের মতে, আর্থিক প্যাকেজের অনেকখানিই ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। যদি সেটা হয়,‌ তা হলে আর্থিক প্যাকেজের পরিমাণ ২০ লক্ষ কোটি টাকা বলে দাবি করা কতটা‌ যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন উঠছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক এন আর ভানুমূর্তির মতে, কোথাও সরকারের প্যাকেজ ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ত্রাণ একসঙ্গে জোড়া হয় না। আমেরিকায় সরকার যে ৩ লক্ষ কোটি বলার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটা তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডেরাল রিজার্ভের দেওয়া ত্রাণের অতিরিক্ত। নির্মলা সীতারামন বাজেটে চলতি অর্থ বছরে মোট ৩০.৪২ লক্ষ কোটি টাকার খরচের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার অতিরিক্ত আরও ২০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে বা কর ছাড় দেওয়া হবে, এমন কেউই আশা করছেন না। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী হেডলাইন বললেন, কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ হারানো মানুষের জন্য হেল্পলাইন কই? রাজ্যগুলি আর্থিক প্যাকেজ দাবি করছিল যাতে তারা নিজেদের মতো করে সঙ্কট মোকাবিলা করে। তার প্রতিশ্রুতি দেননি।

অন্য দিকে, মঙ্গলবারের ভাষণে লকডাউনের চতুর্থ পর্বের কথাও জানিয়ে দেন মোদী। সেই সঙ্গে আশ্বস্ত করেছেন, চতুর্থ পর্ব চেহারায় অনেক অন্য রকম হবে।লকডাউনের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজ্যগুলির মত জানতে চেয়েছিলেন তিনি। কোন রাজ্য কোথায়, কতটা ছাড় চায়, ১৫ মে-র মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের তা লিখে জানাতেও বলেছিলেন। লকডাউনের চলতি মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৭ মে। ১৮ মে-র আগেই সেই নতুন নিয়মের ব্যাপারে দেশবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হবে, বলেও জানান মোদী। এর পরই তিনি বলেন, “সমস্ত নিয়ম মেনে চলে লড়াই করব এবং এগিয়ে চলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন