দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
১৩, ১৩, ১১, ৮, ১১, ১২, ১২ হাজার— গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যাটা এ রকমই। গত দু’সপ্তাহ ধরে দৈনিক মৃত্যু ১৫০-র নীচেই রয়েছে। সক্রিয় রোগী আছেন মাত্র দেড় লক্ষ মতো। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, চুম্বকে এটাই দেশের করোনা-চিত্র। কিন্তু এই চিত্রের সঙ্গে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর করা সেরলজিক্যাল সমীক্ষার বিস্তর ফারাক। সেই সমীক্ষা জানাচ্ছে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ২১.৪ শতাংশ সেরোপজিটিভ। অর্থাৎ তাঁরা কোনও না কোনও সময় করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪০৮ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, এখনও অবধি দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮ লক্ষ ২ হাজার ৫৯১ জন। মোট আক্রান্তের নিরিখে বিশ্বে প্রথম আমেরিকা। সেখানে মোট আক্রান্ত ২ কোটি ৬৬ লক্ষ পেরিয়েছে। এখনও সেখানে ১ লক্ষের বেশি রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন। ভারতের পিছনে তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলেও দৈনিক সংক্রমণ গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ছে। সেখানে মোট আক্রান্ত ৯৩ লক্ষ ৯৬ হাজার।
করোনাভাইরাস দেশে এখনও অবধি ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮২৩ জনের প্রাণ কেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১২০ জন। দেশে মোট মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশই মহারাষ্ট্রে (৫১ হাজার ২১৫ জন)। কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুতে তা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। দিল্লিতে তা সাড়ে ১০ হাজার পার করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই সংখ্যা ১০ হাজার পেরিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে সাড়ে ৮ হাজার এবং অন্ধ্রপ্রদেশে তা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। পঞ্জাবেও মোট মৃত্যু সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। গুজরাত, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, বিহার হরিয়ানাতেও মৃত্যু ৩-৪ হাজারের বেশি।
এ সবের পাশাপাশি দেশে সুস্থতার হার শুরু থেকেই বেশি। ১ কোটি ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩০৮ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ। মোট আক্রান্তের ৯৭ শতাংশের বেশি সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৫৩ জন। এই সুস্থতার জেরে কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। কমতে কমতে তা হয়েছে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৪৬০ জন। দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৭ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সংক্রমণের হার ১.৭৩ শতাংশ।
কেরল বাদে দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে দৈনিক সংক্রমণ। একটানা বাড়তে বাড়তে মোট সংক্রমণের নিরিখে কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমাণ্বয়ে পিছনে ফেলেছে কেরল। সাড়ে ৯ লক্ষ মোট আক্রান্ত নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। ২০ লক্ষ ৩৬ হাজার আক্রান্ত নিয়ে প্রথম মহারাষ্ট্র। যদিও সেখানে আগের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণ অনেক কম। কেরলে এখনও তা নিয়ন্ত্রণে নয়। সেখানে ৫-৬ হাজার মানুষ রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন। দিল্লিতেও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে দৈনিক সংক্রমণ। পশ্চিমবঙ্গেও দৈনিক সংক্রমণ অনেকটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০৬ জন। এ রাজ্যে মোট আক্রান্ত ৫ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৮৭ জন। যদিও এর মধ্যে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪৯১ জন মানুষই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)