চা শ্রমিকের সংখ্যায় কারচুপি, তদন্তের দাবি

রাজ্যে নথিভুক্ত চা-শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ন’লক্ষ হলেও গত দেড় দশক ধরে ১৯ লক্ষ চা-শ্রমিকের রেশন বাবদ তোলা হয়েছে মাসে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল-গম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৯
Share:

রাজ্যে নথিভুক্ত চা-শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ন’লক্ষ হলেও গত দেড় দশক ধরে ১৯ লক্ষ চা-শ্রমিকের রেশন বাবদ তোলা হয়েছে মাসে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল-গম। আজ বিধানসভায় এই তথ্য প্রকাশ করে কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলেছেন চা-শ্রমিক উন্নয়ন ও শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী পল্লবলোচন দাস। বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিও উঠেছে বিধানসভায়।

Advertisement

এ দিন বিজেপির দুলিয়াজানের বিধায়ক থেরাস গোয়ালা চা শ্রমিকদের রেশন বন্ধ হওয়ার প্রসঙ্গটি বিধানসভায় উত্থাপন করেন। জবাব দিতে উঠে পল্লববাবু জানান, চা-শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার এতদিনের পুরো প্রক্রিয়াই ছিল বেআইনি। আগের কংগ্রেস সরকার ও এখনও কংগ্রেসের হাতে থাকা চা-মজদুর সঙ্ঘ মালিকপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শ্রমিকদের বোকা বানিয়ে আসছে। রাজ্যে প্রতি পদে প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্টকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে অন্ত্যোদয়, বিপিএল ও এপিএল কোটার চাল আসে। আগের সরকার বাগানের জন্য নিয়মবহির্ভূত ভাবে এপিএল কোটার চাল পাঠাচ্ছিল। বাগান মালিকরা সেই চালই কম দরে কিনে ৫০ পয়সা দরে শ্রমিকদের দিচ্ছিল। কিন্তু একই সঙ্গে শ্রমিকদের কাছ থেকেই টাকাও কাটা হচ্ছিল। যা শ্রমিকরা জানতেও পারছিলেন না।’’ পল্লববাবু তথ্য দিয়ে জানান, কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনস (সিসিপিএ) রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল চা-শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লক্ষ! সেই হিসেবেই তারা ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৫ হাজার মেট্রিক টন গম প্রতি মাসে ভর্তুকিমূল্যে কিনেছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে চা-শ্রমিকদের সংখ্যা ৯ লক্ষ ১৮৪ জন। তার মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক চার লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৩১ জন। অস্থায়ী শ্রমিক চার লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৫৩ জন। অস্থায়ী শ্রমিকরা বছরে ছ’মাস কাজ করেন। মন্ত্রী কংগ্রেসের উদ্দেশে প্রশ্ন ছোড়েন, ওই অতিরিক্ত চাল কোথায় গেল?

Advertisement

পল্লববাবু ও পরিষদীয় ও শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি সামনে বসা কংগ্রেস আমলের খাদ্যমন্ত্রী নজরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রথম চালু হওয়ার সময় তা মেনে নিয়ে দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে অসম কেন্দ্রকে চিঠি দেয়। পাটোয়ারি বলেন, ‘‘আমরা তখনই বাগানের প্রসঙ্গ তুলেছিলাম। কিন্তু সর্বত্র তিন টাকা দরের চাল দেওয়া ও খাদ্য সুরক্ষা আইন লাগু করার পক্ষে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈই মত দিয়ে গিয়েছিলেন। আগের সরকারের কাজের দায় এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন চা-মজদুর সঙ্ঘ বিজেপির উপরে চাপাচ্ছে।’’

পল্লববাবু বলেন, চা-মজদুর সঙ্ঘ ও সিসিপিএ চুক্তি করে চা শ্রমিকদের যে বেতন কাঠামো তৈরি করেছে তা শ্রম দফতরে পাঠানোই হয় না। আগের সরকার কমিটি গড়ে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক বেতন ১৭৯ টাকা করার কথা বলেছিল। যার মধ্যে নগদ মেলার প্রস্তাব ছিল ১৪৯ টাকা। কিন্তু পরে সিসিপিএ ও সঙ্ঘ চুক্তি করে ন্যূনতম বেতন ১১৫ করায় সম্মত হয়। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘ন্যূনতম মজুরি রাজ্যে এক হওয়া উচিত। কিন্তু বরাক ও ব্রহ্মপুত্রে শ্রমিকদের মজুরিও ভিন্ন।’’

গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে পল্লববাবু জানান, বাগান মালিকরা কম মূল্যে শ্রমিকদের রেশন দিতে বাধ্য। সরকারকে দোষ দিয়ে রেশন বন্ধ করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। বাগানগুলিতে প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট না মানা হলে ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি হলে মালিকপক্ষকে গ্রেফতারও করা হতে পারে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে বলেও তিনি জানান।

হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে দিয়ে বা সিবিআইকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করানোর দাবি ওঠে বিধানসভায়। বর্তমান সরকারের সব অভিযোগ চুপ করে মেনে নেন নজরুল ইসলাম। সিবিআই তদন্তের দাবি উঠলে ক্ষিপ্ত কংগ্রেস বিধায়ক রেকিবুদ্দিন বলেন, এ আসলে বিরোধীদের জেলে পাঠানোর চক্রান্ত। স্পিকার হিতেন্দ্রনাথ গোস্বামী বিচারবিভাগীয় তদন্ত বা সিবিআই তদন্তের আবেদন জানানো প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চেয়েছেন। মতামত জানার পরে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন