হোঁচট দিয়েই যাত্রা শুরু করল জিএসটি

শিল্পমহল সূত্র বলছে, দিনটা ভাল কাটেনি। নয়া ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করায় মার খেয়েছে ব্যবসা। জিএসটি ব্যবস্থায় পা রাখার জন্য অনলাইনে ‘প্রভিশনাল আইডি’ নেওয়ার কথা সংস্থাগুলির। বণিকসভা এমসিসি-র অন্যতম কর্তা সঞ্জীব কোঠারির দাবি, অনেকেই এ দিনও ‘প্রভিশনাল আইডি’ পাননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০৩:২৪
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

প্রথম দিনেই হোঁচট খেল জিএসটি। এ রাজ্যে। গোটা দেশেও।

Advertisement

বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ছুটি ছিল। তা সত্ত্বেও অফিসে এসেছিলেন কর আধিকারিকেরা। কিন্তু নয়া কর জমানার প্রথম দিনে ‘জিএসটি নেটওয়ার্ক’ নামে সফ্‌টওয়্যারটাই ঠিকঠাক কাজ করেনি। যা কার্যত জিএসটি-র তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামোর মেরুদণ্ড। ফলে সারা দিন কর আদায় কী ভাবে হলো, সেটাই জানতে পারেননি কর-কর্তারা।

শিল্পমহল সূত্র বলছে, দিনটা ভাল কাটেনি। নয়া ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করায় মার খেয়েছে ব্যবসা। জিএসটি ব্যবস্থায় পা রাখার জন্য অনলাইনে ‘প্রভিশনাল আইডি’ নেওয়ার কথা সংস্থাগুলির। বণিকসভা এমসিসি-র অন্যতম কর্তা সঞ্জীব কোঠারির দাবি, অনেকেই এ দিনও ‘প্রভিশনাল আইডি’ পাননি। পাশাপাশি, মাল কেনাবেচার জন্য ‘ইনভয়েস’-এ কী কী বিষয় উল্লেখ করতে হবে, তা স্থির করে দিয়েছে জিএসটি পরিষদ। কিন্তু সঞ্জীববাবুর দাবি, সেগুলি একেবারে শেষ মুহূর্তে স্থির হওয়ায় সফটওয়্যারে সেগুলি ঠিকমতো অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। ফলে এ দিন ইনভয়েস তৈরি করতে পারেনি অনেক সংস্থাই।

Advertisement

কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সুশীল পোদ্দারের আবার দাবি, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ছিল না, এমন ব্যবসায়ীরা শনিবার জিএসটি পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করাতে পারেননি। কারণ, পোর্টালটিই কাজ করেনি। তা ছাড়া, মজুত পণ্যের উপর করের হার নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। ফলে অনেক সংস্থা এ দিন কেনাবেচাই বন্ধ রেখেছিল।

একই ছবি রাজধানীতে। মুদিখানার মালিক মহেশ শাহ সকাল থেকে দুশ্চিন্তায়। বুঝেই উঠতে পারছেন না হিসেব রাখবেন কী ভাবে। উপায়ান্তর না দেখে সোমবারই বড় ছেলেকে পাঠাচ্ছেন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাছে জিএসটি বুঝতে। একই অবস্থা দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক বা খান মার্কেটে। ছোট-বড় অধিকাংশ ব্যবসায়ী এখন কয়েক দিন পরিস্থিতির উপরে নজর রেখে অপেক্ষা করতে চাইছেন। তাতে ব্যবসাপাতি কম হয় হোক।

আরও পড়ুন:মধ্যরাতের ভরা সভায় মোক্ষম খোঁচা প্রণবের

দেশের অন্যত্র এ দিন পথে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। বন্ধ রেখেছেন দোকানপাট। প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাতেও কাপড় ব্যবসায়ীদের একাংশ দোকান বন্ধ রাখেন। খোলা দোকানেও তেমন লেনদেন হয়নি। জিএসটি চালু হওয়ায় কাপড়ের দাম ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ মহারাষ্ট্রের কাপড় ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসা প্রায় বন্ধ ছিল সেখানেও। চেন্নাইয়ে জিএসটির ফলে টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সিনেমা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হল মালিকেরা।

এ দিন সব থেকে বড় বিক্ষোভ হয় জম্মু-কাশ্মীরে। রাজ্যের বণিক সভাগুলির আশঙ্কা, রাজ্যের জন্য সংবিধানে যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা রয়েছে, জিএসটি চালু হলে তা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে পূর্ণমাত্রায়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অবশ্য বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরে জিএসটি চালু না হলে ওই রাজ্যই পিছিয়ে পড়বে। পাশের রাজ্য পঞ্জাবের পঠানকোটে গাড়ির দাম কম হবে। কাশ্মীরের লোক সেখান থেকে গাড়ি কিনবে। ফলে ব্যবসা ও রাজস্ব দুই-ই হারাবে জম্মু-কাশ্মীর।’’

জিএসটি নিয়ে সরব পড়ুয়ারাও। স্কুল বা কলেজের বেতন এর আওতায় নেই। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং-মেডিক্যালে ভর্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া কোচিং সেন্টারগুলির ক্ষেত্রে কর বাবদ খরচ বাড়ছে প্রায় ৩%। একই ভাবে পেশাদারি বা দক্ষতাবৃদ্ধির কোর্সে পড়ার খরচ প্রায় ৪% বাড়তে চলেছে। হোস্টেল খরচ, যাতায়াত, খাওয়ার খরচ বাড়ায় আশঙ্কায় পড়ুয়ারা।

শুক্রবার মধ্যরাতে সংসদের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জিএসটি হলো ‘গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স’। প্রথম দিনে অন্তত ভাল কিছু দেখছেন না অনেকে, সহজ তো নয়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন