থানার লকআপে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল তরুণ-তরুণীর। সোমবার বেশি রাতে রাঁচির আরগোড়া থানার লকআপের এই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, ওই তরুণ-তরুণী বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম পূজা কুমারী ও মহম্মদ গফ্ফর (২৫)। তাঁরা গোড্ডার মহাগামা থানা এলাকার ভাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। পূজা ইন্টারমিডিয়েট পড়ছিলেন। তিনি নাবালিকা কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। গত দু’মাস ধরে এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পূজার আত্মীয়রা মহাগামা থানায় গফ্ফরের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ তাঁদের খুঁজছিল বলে জানিয়েছে মহাগামা থানার পুলিশ। আগাম খবর পেয়ে গত কাল রাতে রাঁচির আরগোড়া থানা এলাকার হরমুতে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পূজা ও গফ্ফরকে পেয়ে যায় পুলিশ। মহাগামা থানার পুলিশ তাঁদেরকে গত কাল রাতে আরগোড়া থানার লকআপেই রেখে দেয়। রাঁচির এসএসপি কুলদীপ ত্রিবেদী বলেন, “আজ সকালে এই দু’জনকে গোড্ডা পুলিশের নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই থানার লকআপে এই ঘটনা ঘটে যায়।” প্রশ্ন উঠেছে কী ভাবে লকআপে সকলের নজরের মধ্যে তাঁরা বিষ খেলেন? বিষ পেলেনই বা কোথায়? সঙ্গে করে তাঁরা কী লুকিয়ে বিষ এনেছিলেন? তাই যদি হয় তবে তাঁদের যখন লকআপে নিয়ে যাওয়া হল তখন কেন ভাল করে পরীক্ষা করা হয়নি? কুলদীপ ত্রিবেদী বলেন, “থানার লকআপে পুলিশের উপস্থিতিতে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই একজন মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর সহ তিনজন কর্তব্যরত পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরও কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লকআপের সিসিটিভি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।”
গত কাল রাতে আরগোড়া থানায় কর্তব্যরত এক পুলিশ জানিয়েছেন, ওই দু’জনকে আলাদা আলাদা লকআপে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পরে তাঁরা দু’জনেই শৌচালয়ে যান। শৌচালয় থেকে ফিরে আসার পরেই তাঁরা অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। শরীরে খিঁচুনি শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের রিমসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বিষক্রিয়ায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে রিমস প্রাথমিক পরীক্ষার পরে জানিয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ দু’টি পাঠানো হয়েছে।
গফ্ফর ও পূজার বাড়ির লোকেরা খবর পেয়ে আজ সকালেই গোড্ডা থেকে রাঁচি রওনা দেন। গফ্ফরের বাড়ির লোকেদের মতে, পুলিশের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। কী ভাবে লকআপে ওঁরা এক সঙ্গে মারা গেলেন, তার বিচার চাই। অন্য দিকে, পূজার আত্মীয়রা বলেন “গত দু’মাসে ওঁরা বিষ খেলেন না, লকআপে গিয়ে কেন বিষ খেতে যাবেন? এর বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব।”