হুমকি সরিয়ে বিতর্কে রাজি সিপিএম-বিজেপি

এই হুমকি আর হানাহানির রাজনীতি আপাতত সরিয়ে রেখে উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক চালাতে রাজি হল লাল ও গেরুয়া, দুই শিবিরই। কেরলে রাজ্য নেতৃত্বকে উন্নয়ন নিয়ে বিতর্কের পথে নিয়ে যেতে নেপথ্যে ভূমিকা নিয়েছেন দু’দলের দুই শীর্ষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও অমিত শাহ।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২১
Share:

সংঘর্ষের জেরে দুই শিবিরেই বেড়ে চলেছে প্রাণহানি। সম্প্রতি বিজেপি নেত্রী সরেজ পাণ্ডে হুমকি দিয়েছেন, চোখ রাঙাতে এলে সিপিএম কর্মীদের চোখ উপড়ে নেওয়াই কেরলে ‘জনরক্ষা যাত্রা’র উদ্দেশ্য ছিল! তার জবাবে আবার কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের কেশাগ্রও বিজেপি স্পর্শ করতে পারবে না!’’

Advertisement

এই হুমকি আর হানাহানির রাজনীতি আপাতত সরিয়ে রেখে উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক চালাতে রাজি হল লাল ও গেরুয়া, দুই শিবিরই। কেরলে রাজ্য নেতৃত্বকে উন্নয়ন নিয়ে বিতর্কের পথে নিয়ে যেতে নেপথ্যে ভূমিকা নিয়েছেন দু’দলের দুই শীর্ষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও অমিত শাহ। কেরলে রেষারেষির রেশ এসে পড়েছিল জাতীয় রাজনীতিতেও। দিল্লিতে সিপিএমের সদর দফতর এ কে গোপালন ভবনে বিক্ষোভ দেখাতে চলে আসছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা। আবার বিজেপি-র সদরে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই টক্করের পথ থেকে বেরিয়ে সুস্থ বিতর্কে বসতে রাজি হয়েছে দু’দলই। শাহের হস্তক্ষেপে কেরল বিজেপি যেমন জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক করে দেওয়া দিন ও স্থানে তারা আলোচনায় বসতে রাজি, তেমনই ইয়েচুরির পরামর্শে পিনারাই বিজয়নও রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন।

আরও পড়ুন: চিকিৎসকের শপথেও গৈরিক ছোঁয়া

Advertisement

চলতি মাসেই এক পক্ষ কালের ‘জনরক্ষা যাত্রা’য় নেমেছিল বিজেপি। স্বয়ং শাহ সেই যাত্রার সূচনা করার পরে এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যোগী আদিত্যনাথের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেরলে গিয়ে ওই যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। যাত্রার শেষ পর্বে ফের কেরলে গিয়ে শাহই প্রথম সিপিএমকে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল, হিংসার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করে মুখ্যমন্ত্রী বরং উন্নয়ন নিয়ে বিতর্কে আসুন। শাহের ওই আহ্বান শোনার পরেই ইয়েচুরি তাঁর দলের নেতৃত্বকে বলেন, সিপিএম গণতান্ত্রিক রীতিতে বিশ্বাস করে— এই বার্তা দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগানোই শ্রেয়। তার পরেই সক্রিয় হয়েছেন বিজয়ন। পাল্টা সাড়া দিয়েছে বিজেপি-ও।

বিজয়নের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক বিরোধীদের হাত ভেঙে দেওয়া বা চোখ উপড়ে দেওয়ার কথা ছেড়ে বিজেপি-আরএসএস নেতৃত্ব যে রাজনীতির আলোচনাকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন, তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আন্তরিক ভাবেই বিতর্কের আহ্বান গ্রহণ করছি। চাইলে স্বয়ং অমিত শাহও বিতর্কে আসতে পারেন!’’ বিজেপি-র কেরল রাজ্য সভাপতি কে রাজাশেখরন মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিজেপি-র তরফে কে সুরেন্দ্রন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে বিজয়নের আমন্ত্রণ স্বীকারের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চাইলে তৃতীয় কাউকেও সেখানে পর্যবেক্ষক হিসাবে রাখতে পারেন!’’

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য টুইট করে এই উষ্মাও প্রকাশ করেছেন যে, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যগুলির প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে মোদী সরকার ‘দাক্ষিণ্য’ হিসাবে দেখাতে চাইছে! প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে আগে চিঠি পাঠিয়েও সুফল মেলেনি। এখন এই বিতর্ক অবসানে তিনি ফের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান বলে জানিয়েছেন বিজয়ন।

কিছু দিন আগে তিরুঅনন্তপুরমের কাছে এক আরএসএস কর্মী খুন হওয়ার পরে কেরলের রাজ্যপাল পলানীস্বামী সদাশিবমের হস্তক্ষেপে বিজেপি এবং আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেটা ছিল আপৎকালীন শান্তি-বৈঠক। এ বার বিতর্কের অভিমুখ ঘুরছে উন্নয়নের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন