পি জয়রাজন
প্রায় আক্ষরিক অর্থেই হাতে মাথা কাটার তত্ত্বে বিশ্বাস করেন! পিনারাই বিজয়নের খাস তালুকে তিনি দলের বাহুবলী নেতা। খুনের মামলায় সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিট ঝুলছে তাঁর নামে। তবু এত দিন চলছিল সব নির্বিঘ্নে। হঠাৎই সুর বদল করতে গিয়ে কেরল সিপিএমে বিপদে পড়ে গেলেন পি জয়রাজন।
সিপিএমের কান্নুর জেলা সম্পাদক জয়রাজনকে ভর্ৎসনা করেছে কেরল রাজ্য কমিটি। দলীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এবং রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন তাঁর উপরে এতটাই ক্ষুব্ধ এখন যে, আসন্ন সম্মেলনে জেলা সম্পাদকের পদ ছাড়তে হতে পারে তাঁকে। ভর্ৎসনার আগে রাজ্য কমিটির একের পর এক সদস্য তাঁকে তুলোধোনা করছেন দেখে দু’দিন আগে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন জয়রাজন। কিন্তু দলের হাওয়া অনুকূল নয় বুঝে আবার বিবৃতি দিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য করার কথা বলতে হয়েছে তাঁকে।
আপাতদৃষ্টিতে কান্নুরে তৈরি হওয়া একটি ভিডি়ওই জয়রাজনের বিড়ম্বনার কারণ। যেখানে দলের জেলা সম্পাদককে ‘গরিবের মসিহা’ এবং ‘ঈশ্বরের দূত’ বলে বন্দনা করা হয়েছে! কমিউনিস্ট পার্টিতে এ ভাবে ব্যক্তি পূজা করা যায় না বলেই তাঁকে তীব্র তিরস্কার করা হয়েছে রাজ্য কমিটিতে। তবে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সূত্রের খবর, কয়েক মাসের আগের ওই ভিডি়ওকে সামনে রেখে ভর্ৎসনা করা হলেও জয়রাজনকে বার্তা দেওয়ার নেপথ্য কারণ অন্য। বিজয়ন, বালকৃষ্ণনদের কান্নুর জেলার শিবিরই কেরল সিপিএমে দণ্ডমুণ্ডের নিয়ন্তা। বিজয়নেরা কখনওই বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বের পক্ষে নন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কেরল সিপিএমে অন্দরে জয়রাজন সওয়াল করেছিলেন, বিজেপি-আরএসএসের রমরমা যে ভাবে দক্ষিণী ওই রাজ্যে বাড়ছে, তাতে কংগ্রেসের হাত ধরাই উপযুক্ত কৌশল। এর পরেই তাঁর মাথায় খাঁড়া নামছে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত।
আরএসএসের সঙ্গে সিপিএমের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং খুনোখুনির ঘটনা কান্নুর জেলাতেই সব চেয়ে বেশি। জেলা সম্পাদক হিসাবে জয়রাজনও প্রতি বার মারের বদলে মারের কথা বলে এসেছেন। প্রায় ১৭ বছর আগে হামলার জেরে একটি হাত প্রায় হারাতে হচ্ছিল জয়রাজনকে। সেলাই করে সে বার হাত জুড়ে দেওয়া হয় এবং সিপিএমও তখন থেকে জয়রাজনকে ‘জীবন্ত শহিদ’ বলে থাকে। ওই ঘটনার জন্য আরএসএসকে দায়ী করেন জয়রাজন। এখনও তাই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে যুদ্ধের ডাক দিয়ে থাকেন। সেই সূত্রেই বিজেপি মোকাবিলায় কংগ্রেসের প্রতি তাঁর সুর নরম এবং তার পরেই ভিডিও-র দৌলতে শাস্তি!
কয়েক দিন আগেই ত্রিশূরে এক আরএসএস সমর্থক খুনের জেরে রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সিপিএমের কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমরা অশান্তি চাই না, ব্যক্তি পূজাও চাই না। তার জন্য যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার, করা হবে।’’ আর চাপের মুখে জয়রাজন বলেছেন, ‘‘দলই আমাকে নেতা করেছে। শাস্তি বা সমালোচনার সব অধিকার দলের আছে।’’