স্মৃতির আবেগে ‘বুড়ো’ দলাই

সামরিক পোশাকের এক বৃদ্ধকে দৃঢ় আলিঙ্গনে আঁকড়ে রেখেছেন দলাই লামা। অবাক অতিথি-অভ্যাগতরা। মিনিট দুয়েক কাটল সে ভাবেই। তার পরই তিব্বতি ধর্মগুরু বলে উঠলেন, ‘‘আপনাকে দেখে খুব ভাল লাগল। আপনার মুখের বলিরেখা দেখে হঠাৎ মনে হল, আমিও অনেক বুড়ো হয়ে গেলাম।’’

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০০
Share:

আলিঙ্গন: ভারতের মাটিতে তাঁর প্রথম দেহরক্ষীর সঙ্গে তিব্বতের ধর্মগুরু। রবিবার গুয়াহাটিতে। নিজস্ব চিত্র

সামরিক পোশাকের এক বৃদ্ধকে দৃঢ় আলিঙ্গনে আঁকড়ে রেখেছেন দলাই লামা। অবাক অতিথি-অভ্যাগতরা। মিনিট দুয়েক কাটল সে ভাবেই। তার পরই তিব্বতি ধর্মগুরু বলে উঠলেন, ‘‘আপনাকে দেখে খুব ভাল লাগল। আপনার মুখের বলিরেখা দেখে হঠাৎ মনে হল, আমিও অনেক বুড়ো হয়ে গেলাম।’’

Advertisement

৫ নম্বর আসাম রাইফেলসের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার নরেনচন্দ্র দাসের চোখ ততক্ষণে ভিজে। তিব্বত থেকে ভারতে পা রাখার পর প্রথম ৭ দিন তিনিই ছিলেন দলাইয়ের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। ৫৮ বছর পরেও অশীতিপর ধর্মগুরু ভোলেননি তাঁকে। রবিবার ব্রহ্মপুত্র উৎসবের মঞ্চে আসাম রাইফেলসের ডিজি এস চৌহানকে দেখেই দলাই বলেছিলেন, “আপনার বাহিনীই আমাকে ভারতে প্রথম পাহারা দিয়েছিল। এখনও ভুলিনি।” চৌহান তাঁকে জানান, সেই বাহিনীর এক জওয়ান এসেছেন প্রেক্ষাগৃহে। ডাক পেয়ে কাঁপা পায়ে মঞ্চে ওঠেন নরেনবাবু। তাঁকে বুকে টেনে নেন দলাই।

১৯৫৯ সালের ২৯ মার্চ। তখন নরেনবাবু মোতায়েন তাওয়াংয়ে। খবর এল, তিব্বত থেকে ধর্মগুরু পালিয়ে আসছেন তাওয়াংয়ে। ধাওয়া করেছে চিনা বাহিনী। তাঁকে পাহারা দিয়ে পৌঁছে দিতে হবে ভারতীয় ভূখণ্ডে। নরেন ও তাঁর সঙ্গীরা ছিলেন সীমান্ত থেকে এক দিনের দূরত্বে। নরেনের কথায়, ‘‘এখনকার মতো রাস্তা ছিল না। দৌড় শুরু করি। বুম লায় দেখা হয় খচ্চরের পিঠে মুণ্ডিতমস্তক এক দীর্ঘদেহী ব্যক্তির সঙ্গে। সঙ্গে জনা তিরিশেক সন্ন্যাসী। ভারতের ডাকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা।’’ তিনিই দলাই লামা। তাঁকে লুমলা পৌঁছে দেওয়ার পর শেষ হয় কাজ।

Advertisement

দলাই বলেন, ‘‘৫৮ বছর এ দেশের চাল, ডাল, রুটি খাচ্ছি। নালন্দার শিক্ষা আমার আদর্শ। নিজেকে ভারতীয় ভাবতে বাধা কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন