রক্তক্ষরণটা ভিতরে হচ্ছে, না থামলে স্পন্দন থেমে যাবে

রক্তক্ষরণটা সমানে চলছে। থামছে না কিছুতেই। বহিরঙ্গে যখন হয় রক্তক্ষরণটা, তখন দেখতে পাই। ভারতভূমির গায়ে যখন আঘাতটা বাইরে থেকে লাগে, যখন কাশ্মীর আক্রান্ত হয় বা আক্রান্ত হয় মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ, গুয়াহাটি অথবা ভারতের অন্য যে কোনও অঙ্গ, তখন দৃশ্যতই রক্তাক্ত হই।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০০:১০
Share:

উনায় দলিত বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।

রক্তক্ষরণটা সমানে চলছে। থামছে না কিছুতেই।

Advertisement

বহিরঙ্গে যখন হয় রক্তক্ষরণটা, তখন দেখতে পাই। ভারতভূমির গায়ে যখন আঘাতটা বাইরে থেকে লাগে, যখন কাশ্মীর আক্রান্ত হয় বা আক্রান্ত হয় মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ, গুয়াহাটি অথবা ভারতের অন্য যে কোনও অঙ্গ, তখন দৃশ্যতই রক্তাক্ত হই। গা বেয়ে রক্তের ধারা নামার সে দৃশ্য বড় মর্মান্তিক। সময় নষ্ট না করে ক্ষতস্থানের শুশ্রূষায় নিবিষ্ট হই। স্বাভাবিক নিয়মেই কোনও এক সময়বিন্দুতে আবার ছন্দে ফিরে আসি বা ফিরে আসার চেষ্টা করি।

কিন্তু ছন্দপতনটা যখন ভিতরে ভিতরে হয়, তখন কী হয়? তখন গা বেয়ে রক্তের ধারাটা নামে না। বহিরঙ্গে কোনও উপসর্গ ফুটে ওঠে না। কিন্তু অন্তরঙ্গে ক্ষরণ চলতে থাকে অবিরাম, নিঃশব্দ। যন্ত্রণাটা টের পাই। কিন্তু কোথায় শুশ্রূষা দরকার, বুঝতে পারি না। চিকিৎসা সময় মতো না হলে, বিপদটা ভিতরে ভিতরে ঘনিয়ে ওঠে। এক দিন হঠাৎ বিকল হয়ে যায় সব। হয়তো স্পন্দনও থেমে যায়।

Advertisement

ভারতে সেই অন্তর্লীন রক্তক্ষরণটা শুরু হয়েছে আবার। কালবুর্গীর বুক থেকে যে রক্তটা ঝরে পড়েছিল, সেটা অন্দরের ক্ষরণই ছিল। সতর্ক হতে পারিনি তখন। তাই দাদরিতে আবার সেই ক্ষরণটা হল। তারও উপযুক্ত পরিচর্যা হল না। ভিতরে ভিতরে রোগটা গেল আরও বেড়ে। দিকে দিকে এ বার শুরু দলিত নিগ্রহ। তার ‘সুবাদে’ রক্তক্ষরণের বিন্দুগুলো এ বার যেন পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে এক রক্তনদীর আকার নিচ্ছে।

গুজরাতে গোচর্ম নিয়ে কাজ করার ‘অপরাধে’ দলিতদের উপর অকথ্য নিগ্রহ, তার পর উত্তরপ্রদেশে দলিত নেত্রীকে জঘন্য ভাষায় অপমান, তার পর কর্নাটকের চিকমাগালুরে গোমাংস রব তুলে দলিত পরিবারের উপর আক্রমণ, তার পর মহারাষ্ট্রে দলিত তরুণদের বাইক তথাকথিত বর্ণহিন্দুর বাইককে গতিতে পিছনে ফেলে দেওয়ায়, তিন তরুণকে অকথ্য গণপ্রহারে রক্তাক্ত করা। অন্তর্লীন রক্তক্ষরণের এক নতুন প্রকরণ এ বার দলিত নিগ্রহ।

মগজে কি কোনও সঙ্কেত পৌঁছচ্ছে? ভারতের গোটা শরীরে স্নায়ুতন্ত্রের নকশার মতো বিছিয়ে থাকা প্রশাসন কি কোনও সংকেত পৌঁছে দিচ্ছে তার ভরকেন্দ্রে? নাকি যন্ত্রণাটা এখনও যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে না?

শুশ্রূষাটা ঠিক কোথায় দরকার, চিকিৎসাটা কতটা জরুরি ভিত্তিতে শুরু হওয়া প্রয়োজন, এখনও যদি বুঝতে না পারা যায়, অন্তরঙ্গের রক্তনদীটা গোটা উপত্যকা ভাসিয়ে বইবে অচিরেই। জীবনের ছন্দটা নিঃশেষে ভেসে যাবে সে প্লাবনে। হয়তো ভারতীয়ত্বের স্পন্দনটাও থেমে যাবে কোনও এক সময়বিন্দুতে পৌঁছে।

প্রশাসনের ভরকেন্দ্রকে বলছি আজ, মনে রাখবেন বহুত্বই ভারতীয়ত্ব। দেশ-দেশান্তরে ছুটে বেড়িয়ে যে ভারতীয়ত্বের বড়াই করে প্রশস্ত ছাতি গর্বে আরও প্রশস্ত হয়, সেই ভারতীয়ত্বের মানচিত্রে কোথাও এই রক্তনদীটার স্থান নেই। এই ভয়ঙ্কর অন্তঃসলিলার স্রোতে সমস্ত বৈচিত্র্যকে ভাসিয়ে দিয়ে সব কিছু একরঙা করে তোলার চেষ্টা হলে সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন