জেল থেকে ছিনতাই শীর্ষ খলিস্তানি জঙ্গি

অপারেশন ১০ মিনিটের! রবিবার সকাল ৮টা ৪৫। দু’টি গাড়িতে জেলের ফটকে হাজির হল জনা দশেক পুলিশ। গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এল দু’জন। উর্দিতে স্পষ্ট, এক জন এএসআই, অন্য জন কনস্টেবল। সঙ্গে হাতকড়া পরানো এক বন্দিও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৬
Share:

অপারেশন ১০ মিনিটের!

Advertisement

রবিবার সকাল ৮টা ৪৫। দু’টি গাড়িতে জেলের ফটকে হাজির হল জনা দশেক পুলিশ। গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এল দু’জন। উর্দিতে স্পষ্ট, এক জন এএসআই, অন্য জন কনস্টেবল। সঙ্গে হাতকড়া পরানো এক বন্দিও। একে রাখতে এসেছে জানাতেই খুলে দেওয়া হয় দরজা। ভিতরে ঢুকেই দুই পুলিশের দাবি, চাবি দাও। নিজেরাই এই বন্দিকে সেলে ঢুকিয়ে দিয়ে যাব। জেলরক্ষী আপত্তি করতেই তার মুখে ভোজালি চেপে ধরে এক পুলিশ। দ্বিতীয় জন বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে আর এক জেলরক্ষীর মাথায়। এর পরে চিৎকার করে ডেকে নেয় বাইরে অপেক্ষায় থাকা বাকি সঙ্গীদের। তারা ঢুকেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র থেকে। আর কয়েক জনের নাম ধরে ডাকতে থাকে চিৎকার করে। সেই ডাকেই ছুটে এসে হাজির হয় ৬ বন্দি। তাদের নিয়ে নিজেদের আনা গাড়িতে উধাও হয়ে যায় গোটা দলটি।

খলিস্তান লিবারেশন ফোর্সের শীর্ষনেতা হরমিন্দর সিংহ মিন্টু এবং তার গোষ্ঠীর ৪ সদস্যকে আজ ঠিক এ ভাবেই পঞ্জাবের পাটিয়ালা জেলার নাভা জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল তাদের সঙ্গীরা। জঙ্গিরা নিয়ে গিয়েছে দুর্বৃত্ত চক্রের এক পাণ্ডাকেও।

Advertisement

গত মাসেই ভোপালে ৮ সিমি সদস্যের জেল পালানো ও পুলিশের গুলিতে তাদের মৃত্যুর পরে এ বার পঞ্জাবে জেল থেকে বন্দি ছিনতাইয়ের ঘটনায় গোটা দেশে আলোড়ন প়ড়ে যায় এ দিন সকালেই। পঞ্জাবের ভোটের আগে শীর্ষ খলিস্তানি জঙ্গি নেতাদের ছাড়ানোর চেষ্টা হতে পারে, রাজ্য সরকারকে আগেই সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পরেও জঙ্গিরা আজ এ ভাবে জেলের কড়া নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙল দেখানোয় রাজ্যের শাসক অকালি-বিজেপি জোট ভোটের আগে কিছুটা চাপে পড়ে গেল। ঘটনার পরই তড়িঘড়ি ওই জেলের সুপার ও পুলিশের কয়েক জন শীর্ষকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় জেলের গাফিলতির দিকটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের থেকে এ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

দিল্লির অস্বস্তির একটা বড় কারণ হল, মিন্টুর মতো বড় মাপের জঙ্গির হাতছাড়া হওয়া। খলিস্তান লিবারেশন ফোর্সের এই শীর্ষনেতাকে ২০১৪ সালে দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছিল পঞ্জাব পুলিশ। তাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরছিল সে। দেশে প্রায় দশটি নাশকতার ঘটনায় তার নাম জড়িয়ে রয়েছে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে। পঞ্জাবে ভোটের প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। জনসভা করছেন জাতীয় স্তরের নেতারা। তার আগে এমন কুখ্যাত এক জঙ্গি নেতা ও তার সঙ্গীরা জেল থেকে বেরিয়ে নাশকতার কী ধরনের ছক কষবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

এ দিনের ঘটনায় ভোটের আগে বিজেপি-অকালির বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্রও পেয়ে গেল বিরোধীরা। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি এ দিন বলেন, ‘‘পঞ্জাবে আইনশৃঙ্খলা বলে আর কিছু নেই।’’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অমরেন্দ্র সিংহের সন্দেহ, এই ঘটনার সঙ্গে অকালি সরকারের যোগসাজশ থাকতে পারে। তাঁর অভিযোগ, পঞ্জাবে উগ্রপন্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। আপ নেতা সঞ্জয় সিংহের দাবি, ইস্তফা দিতে হবে উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুখবীর সিংহ বাদলকে।

ভোপালের ঘটনা ঘটেছিল রাতে। সেই ঘটনা কী ভাবে ঘটেছিল, পরে তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নাভায় সবটাই হয়েছে দিনের আলোয়। সকালের খাবার দেওয়ার সময়টুকু যে বন্দিদের সেলের বাইরে আসতে দেওয়া হয়, তা জানা থাকায় সেই মতোই ছক কষেছিল জঙ্গিরা। একেবারে অঙ্ক কষে যে ভাবে তারা জেলরক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে গিয়েছে তাতে জেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। জেলের ভিতরে মোট প্রায় দু‘শো রাউন্ড গুলি চললেও বন্দি ছিনতাই পর্বে কোনও কার্যকর প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি রক্ষীরা। নিজেদের আনা টয়োটা ফরচুনার গাড়িতে অক্ষত উধাও হয়েছে জঙ্গিরা। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সে রাজ্যের শামলি জেলা থেকে ওই গাড়িটির চালক পরমিন্দর সিংহকে গ্রেফতার করতে পারলেও রাত পর্যন্ত মিন্টু বা তার সঙ্গীদের কোনও হদিস মেলেনি।

বিতর্কের ঝড় বাড়িয়েছে পুলিশের গুলিতে এক তরুণীর মৃত্যু। পঞ্জাবের শামরালা এলাকায় এ দিন সন্দেহের বশে একটি গাড়িকে থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। গাড়িটি না থামায় গুলি চালায় তারা। এতে রিনা নামে ২৪ বছরের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। আহত হন আর এক তরুণী।

পঞ্জাবের লাগোয়া সব রাজ্যে তল্লাশি শুরু হয়েছে। গড়া হয়েছে বিশেষ তদন্ত-দল। জেলের কেউ যুক্ত ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরো ঘটনা নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে আলোচনা করেছেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিংহ বাদল। তাঁর সন্দেহ, পাক যোগ রয়েছে এই ঘটনায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন