সারা জীবন যিনি ‘বাবজি’-কে দেখেছেন, সেই নমিতাই করলেন মুখাগ্নি

ইতিহাস বলে, বাজপেয়ীর এই ‘পরিবার’ নিয়ে আরএসএস বরাবরই ক্ষুব্ধ ছিল। বাজপেয়ী নিজেও প্রচারক ছিলেন। বিয়ে করেননি। কিন্তু পরবর্তী কালে তাঁর কলেজ জীবনের সহপাঠী রাজকুমারী কউলের কন্যা নমিতাকে তিনি পালিত কন্যার মর্যাদা দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫০
Share:

অন্ত্যেষ্টি: অটলবিহারী বাজপেয়ীর শেষকৃত্যে মেয়ে নমিতা ভট্টাচার্য। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি।

মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই কন্যা নমিতাকে স্বীকৃতি দিয়ে গেলেন তাঁর ‘বাবজি’। পালিত কন্যা নমিতাই আজ মুখাগ্নি করলেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর।

Advertisement

সকাল থেকেই আলোচনা চলছিল, কে করবেন এই শেষ কাজটি। বাজপেয়ীর ভাগ্নে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী অনুপ মিশ্র দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, আত্মীয়দের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। কিন্তু প্রাচীনপন্থী নেতারা বললেন, মামার মুখাগ্নি ভাগ্নে করবেন কেন? করলে ভাইপোরা কেউ করেন। দুই ভাইপো আগরা থেকে এসেছেন। কিন্তু নমিতা নিজেই মুখাগ্নি করতে চান।

ইতিহাস বলে, বাজপেয়ীর এই ‘পরিবার’ নিয়ে আরএসএস বরাবরই ক্ষুব্ধ ছিল। বাজপেয়ী নিজেও প্রচারক ছিলেন। বিয়ে করেননি। কিন্তু পরবর্তী কালে তাঁর কলেজ জীবনের সহপাঠী রাজকুমারী কউলের কন্যা নমিতাকে তিনি পালিত কন্যার মর্যাদা দেন। অটলবিহারী ও রাজকুমারী, গ্বালিয়রের ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়তেন একসঙ্গে। কলেজের পরে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। বহু বছর পরে ফের যোগাযোগ হয় দিল্লিতে। রাজকুমারীর স্বামী তখন দিল্লির রামজাস কলেজের দর্শন বিভাগের প্রধান। বাজপেয়ী বিরোধী নেতা থাকার সময়েই কউল পরিবার তাঁর সঙ্গে থাকতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও বাজপেয়ীর সঙ্গেই তাঁরা থাকতেন। নমিতা ও তাঁর স্বামী রঞ্জন ভট্টাচার্য দেশে-বিদেশে সর্বত্র ছিলেন বাজপেয়ীর ছায়াসঙ্গী। কিন্তু দলের কাছে বরাবর অস্পৃশ্যই থেকে গিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

এক সময় সরসঙ্ঘচালক কে সুদর্শন এক সাক্ষাৎকারে পালিত কন্যা ও জামাতাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ পর্যন্ত করেন। লালকৃষ্ণ আডবাণী সে যাত্রা আরএসএস-এর সঙ্গে কথা বলে মিটমাট করিয়েছিলেন। আজ বর্তমান সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সামনেই মুখাগ্নি করলেন নমিতা।

অন্ত্যেষ্টির আগে জাতীয় পতাকা নিয়ে ফিরছেন নীহারিকা। ছবি: এপি।

আডবাণীর পুত্র-কন্যা জয়ন্ত ও প্রতিভা শুধু দলের অফিসে আসতেন, তা-ই নয়। তাঁরা আডবাণীর রথযাত্রার সময় দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু নমিতা-রঞ্জনকে কোনও দিন দলের অফিসে দেখা যায়নি। কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তাঁরা থাকেননি।

আজ নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নেতৃত্বে সেই বিজেপিই বাজপেয়ীর শেষকৃত্যের পুরো অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয়। মোদীই বলে দেন, অন্য কেউ নন। নমিতাই মুখাগ্নি করবেন। সারা জীবন যিনি ‘বাবজি’-কে দেখেছেন, তিনি এ কাজ করবেন না তো কে করবেন? কন্যাকে দিয়ে মুখাগ্নির প্রশ্নে বিজেপির রক্ষণশীল নেতারা খুশি নন। তবু বিজেপি-সঙ্ঘের নেতাদের সামনে নমিতাই যখন মুখাগ্নি করছেন, তখন, তাঁর চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেঁদে চলেছেন নাতনি নীহারিকা। বাজপেয়ী আদর করে ডাকতেন নেহা বলে। বাড়িতে দীর্ঘ সময় কাটাতেন তাঁর সঙ্গে। বাজপেয়ীর দেহ যে জাতীয় পতাকায় মোড়া ছিল, সেটা এ দিন তুলে দেওয়া হল নেহার হাতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন