টিপুর সেই গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ। —নিজস্ব চিত্র।
সেগুন কাঠের স্তম্ভ ছুঁয়ে বোঝার উপায় নেই, তার বয়স ২০০ পেরিয়েছে। পাথরের ভিতের উপরে এই কাঠের প্রাসাদ তৈরি শুরু হয়েছিল হায়দর আলির আমলে। ১৭৯১-এ কাজ শেষ করেন তাঁর ছেলে টিপু সুলতান। ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য রীতিতে তৈরি এই প্রাসাদের দোতলাতেই গ্রীষ্মকালে টিপুর দরবার বসত।
শনিবার সকালে পুরনো বেঙ্গালুরুর এই প্রাসাদের শান্ত আবহ দেখলে কে বুঝবে, কর্নাটকের ভোট-নাটকের মঞ্চেও প্রবেশ করেছেন টিপু। রাজ্যে তাঁকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে মেরুকরণের রাজনীতি।
কর্নাটকের রাজনীতিতে টিপু সুলতান ও মেরুকরণ বরাবরই সমার্থক। গত নভেম্বর থেকে সিদ্দারামাইয়ার কংগ্রেস সরকার টিপুর জন্মজয়ন্তী পালন শুরু করায় সেই মেরুকরণ আরও চরমে। অমিত শাহ একে ‘মুসলিম তোষণ’ বলেছিলেন। বিজেপির চোখে, টিপু হিন্দু-হত্যাকারী। এ বার কর্নাটকে ভোটের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন শুক্রবার টিপুর ২১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মহীশূরের প্রাক্তন শাসককে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য কুর্নিশ জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
বিজেপি প্রচারে নেমেছে, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীর ‘নায়ক’-কেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছে পাকিস্তান। বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষি লেখির যুক্তি, এই মন্তব্যই বুঝিয়ে দেয়, পাকিস্তানের সমর্থন কোন দিকে।
গুজরাত ভোটের প্রচারের শেষ পর্বে নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ তুলেছিলেন, কংগ্রেসের আহমেদ পটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইছে পাকিস্তান। মণিশঙ্কর আইয়ারের বাড়িতে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে পাক কূটনীতিকদের নৈশভোজের দিকেও আঙুল তোলেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, ফের কি পাকিস্তানি তাস খেলতে চলেছেন মোদী-অমিত শাহ?
কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, মোদী গদিতে থাকলে পাক কট্টরপন্থীদেরই লাভ। তারাই বিজেপিকে সুবিধে করে দিতে টিপু-অস্ত্র জোগাচ্ছে না তো! ব্রিটিশ রাজ নিয়ে একাধিক বইয়ের লেখক, কংগ্রেসের শশী তারুরের যুক্তি, “ইতিহাসে কোনও শাসককেই সাদা-কালোর হিসেবে বিচার করা যায় না। টিপু সুলতান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন বলে অনেকের চোখে নায়ক। আবার নিজের রাজত্ব বাড়াতে গিয়ে কারও চোখে তিনি হামলাকারী। বিজেপি শুধুই পুরনো ইতিহাস নিয়ে রাজনীতি করে।” টিপুর প্রাসাদে সপরিবার ঘুরতে আসা ম্যাঙ্গালুরুর স্কুলশিক্ষক নাজিমুল হুসেনও বিরক্ত। তিনি বলেন, “এটাই বিজেপির দোষ। শুধু একে-অপরকে লড়িয়ে দেয়”।
কর্নাটকের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ মুসলমান। ২২৪টির মধ্যে ১৯টি আসনের নির্ণায়ক মুসলিম ভোট। তার সবটাই ঝুলিতে পুরতে চাইছেন সিদ্দারামাইয়া। উল্টো দিকে বিজেপির প্রচারে এসে যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, কর্নাটকে জেহাদিদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। অমিত শাহের অভিযোগ, মুসলিম ভোট পেতে সিদ্দারামাইয়া হিন্দু মন্দির থেকে গেরুয়া পতাকা সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাহুল গাঁধী যখন মঠে-মন্দিরে গিয়ে নরম হিন্দুত্ব করছেন, তখন অমিতরা কংগ্রেসকে মুসলিম তোষণকারীর তকমা দিতে বদ্ধপরিকর। পাকিস্তানের টিপুকে নিয়ে মাতামাতি সেই মেরুকরণের তূণীরেই নতুন তির।