বাড়তি সমর্থনে আগ্রাসী সনিয়া

রাতভর বৃষ্টিতে রাজধানী ঠান্ডা হল, কিন্তু সংসদের উত্তাপ কমল কই! বরং প্রতিবাদের মঞ্চে আজ আরও ‘বন্ধু’ জুটল কংগ্রেসের। কংগ্রেসের ২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার বিরোধিতায় সরব হলেও কাল তবু দূরত্ব বজায় রাখেন বাম ও সংযুক্ত জনতা দলের নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

কেন্দ্র-বিরোধী বিক্ষোভ দেখিয়ে ধৃত যুব কংগ্রেস সভাপতি অমরেন্দ্র সিংহ রাজা ব্রার। বুধবার স্পিকারের বাসভবনের সামনে।— নিজস্ব চিত্র।

রাতভর বৃষ্টিতে রাজধানী ঠান্ডা হল, কিন্তু সংসদের উত্তাপ কমল কই! বরং প্রতিবাদের মঞ্চে আজ আরও ‘বন্ধু’ জুটল কংগ্রেসের।

Advertisement

কংগ্রেসের ২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার বিরোধিতায় সরব হলেও কাল তবু দূরত্ব বজায় রাখেন বাম ও সংযুক্ত জনতা দলের নেতারা। আজ তাঁরা খোলাখুলি গিয়ে দাঁড়ালেন সনিয়া গাঁধীর পাশে! এমনকী বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হাও এ দিন তাঁর টুইটে ‘কংগ্রেসের ২৫ সাংসদ বন্ধুর’ পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সাসপেনশনে অসন্তোষ জানিয়েছেন। আর সেই বর্ধিত সমর্থনের অক্সিজেন পেয়ে কংগ্রেস সভানেত্রীও আক্রমণের তেজ বাড়িয়ে বললেন, ‘‘বিরোধিতার এখনও কী দেখেছে সরকার, আরও আগুন জ্বলবে!’’

সনিয়ারই এমন মেজাজ হলে দল হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। সংসদের চত্বরে ধর্নায় বসে কংগ্রেস সাংসদরা যখন সরকার-বিরোধী উগ্র স্লোগান দিচ্ছেন, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তখন ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধালেন যুব কংগ্রেস সমর্থকরা। খোদ যুব কংগ্রেস সভাপতি অমরেন্দ্র সিংহ রাজা ব্রার ব্যারিকেড ভাঙতে নামেন! শেষ পর্যন্ত জল কামানে কাক ভেজা পঞ্জাবের এই যুবনেতাকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যেতে হয় পুলিশকে। গত দেড় দশকে যুব কংগ্রেসের কোনও সভাপতিকে এমন আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায়নি।

Advertisement

আর এ ভাবেই জাতীয় রাজনীতিতে প্রায় খুইয়ে ফেলা প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে চাইছে কংগ্রেস। সুষমা-বসুন্ধরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং কংগ্রেস সাংসদদের সাসপেন্ড করার বিরুদ্ধে অন্য বিরোধী দলগুলিও যে ভাবে জোট বেঁধে এখন সরকারের সমালোচনা করছে, তাতে শাসক দল তো চাপে পড়ছেই, তার থেকেও বড় ব্যাপার, সংসদে আর্থিক সংস্কারের সব কর্মসূচি ও বিল পাশ আটকে গিয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ইউপিএ জমানায় এ ভাবেই সংসদ অচল রেখে সরকারের উপর নীতিপঙ্গুত্বের তকমা লাগাত বিজেপি। এ বার ওরাও ঠ্যালা বুঝুন।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, স্পিকারের পদ নিরপেক্ষ, তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখানো রাজনৈতিক ভাবে কতটা ঠিক? রাহুল অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘স্পিকারের সিদ্ধান্ত আমাদের পছন্দ হয়নি। তবে ওঁর পদকে মর্যাদা দিই।’’ কিন্তু পরে দলের এক নেতা বলেন, স্পিকারের সিদ্ধান্তের নেপথ্যেও সরকার তথা শাসক দল রয়েছে। তাই তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে সরকারের বিরুদ্ধেই বার্তা দিতে চেয়েছে যুব কংগ্রেস। কাল তাঁরা অভিনব উপায়ে ধর্নায় বসছেন। যুব কর্মীরা মাথা কামিয়ে খালি গায়ে বিক্ষোভ দেখাবেন সাংসদদের সাসপেনশনের বিরুদ্ধে।

সংসদ অচল থাকায় সরকার যে তলে তলে উদ্বিগ্ন, সে ব্যাপারটা এখন পরিষ্কার। দোরগোড়ায় বিহার ভোট। তার আগে দুর্নীতি প্রশ্নে বা অন্য বিষয়ে নমনীয় না-হওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন অমিত শাহ-অরুণ জেটলিরা। তাই আজও রাজীবপ্রতাপ রুডি-সহ বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা বলেন, কংগ্রেসের উচিত সংসদে ফিরে আসা। স্পিকারের কাছে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইলেই সব মিটে যায়।

কিন্তু কংগ্রেস মিটমাটে রাজি নয়। গত কালই রাজনৈতিক একটি সূত্রে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, স্পিকার কংগ্রেসের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন— তাদের সাংসদরা মুচলেকা দিলেই তিনি বরখাস্তের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। আজ সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সনিয়া সাফ জবাব দেন— ‘‘কেউ কোনও প্রস্তাব দেননি, কালও ধর্না চলবে।’’

গত কাল দলের কিছু শীর্ষ নেতা সনিয়া-রাহুলকে পরামর্শ দেন, আজ আর তাঁদের বিক্ষোভ মঞ্চে না-এলেও চলবে। কিন্তু মা-ছেলে উভয়েই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। তা ছাড়া সনিয়া সশরীরে উপস্থিত না থাকলে অন্য বিরোধী নেতা-সাংসদরা সেখানে আসবেন না। সূত্রের খবর, কাল মুলায়ম সিংহকেও ধর্না মঞ্চে হাজির করানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস।

এর মধ্যে দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা টুইট করেন, ‘‘কংগ্রেসের ২৫ সাংসদ বন্ধুকে যে ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাতে আমি খুশি হতে পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন