পাহাড় কেটে রাস্তা বানাতে নেমে পড়েছেন গ্রামবাসীরা।
রাস্তা না থাকায় পাহাড় ডিঙিয়ে অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে পারেননি দশরথ মাঝি। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সেই জেদেই ২২ বছর ধরে পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন বিহারের ‘মাউন্টেন ম্যান’। পলামুর মিটার গ্রামের ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত তেরো বছরের কিশোরী আরতি কুমারীকেও রাস্তা না থাকায় ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি তাঁর পরিজনেরা। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মারা যায় আরতি। ঠিক সেই জেদেই শুধু তার পরিবার নয়, জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা কাটতে নেমেছে আশপাশের আটটি গ্রামের মানুষ।
দশরথের স্ত্রী ফাগুনিয়ার মৃত্যু জাগিয়েছিল দশরথকে। ১০ সেপ্টেম্বর আরতির মৃত্যু শুধু আরতির পরিজনকেই নয়, জাগিয়ে দিয়েছে মিটার গ্রামের মানুষকে। আর তাতে সামিল হয়েছেন আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিও। ডালটনগঞ্জ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যে প্রত্যন্ত আটটি গ্রামের গ্রামবাসীরা এখন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে নিজেরাই রাস্তা বানাচ্ছেন। মাটি কেটে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করছেন ওঁরা। খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসনও। এত দিন ধরে উপেক্ষিত মানুষের চাহিদা পূরণে রাস্তা তৈরির গোটা প্রকল্পটিকে একশো দিনের প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কাঁচা রাস্তাকে পাকা করার জন্য গ্রাম সড়ক যোজনাকে কাজে লাগানো যায় কি না তা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।
আরতির আত্মীয়া মুন্নি কুমারীর কথায়, ‘‘কয়েক দিন ধরেই আরতির খুব জ্বর চলছিল। বাড়াবাড়ি হতেই ডালটনগঞ্জের সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়। কিন্তু গ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে, পাকা রাস্তা পর্যন্ত এসে অ্যাম্বুল্যান্স চালক জানিয়ে দেন, রাস্তা নেই। গ্রাম পর্যন্ত গাড়ি যাবে না। রোগীকে পাকা রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। অত জ্বরের মধ্যে আরতিকে সাইকেলে চাপিয়ে পাকা রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। সাইকেলে আসতে আসতেই ও নেতিয়ে পড়েছিল। পাকা রাস্তা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে থখন আরতিকে ডালটনগঞ্জের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ও মারা গিয়েছে। ডাক্তাররা বললেন, আরও আগে আনলে হয়তো বাঁচানো যেত।’’
আরতির এই মৃত্যু নাড়া দিয়ে যায় গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রামবাসী মনোজের কথায়, ‘‘এই রাস্তা তৈরির জন্য আমরা অনেক বার পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন করেছি। কোনও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত আরতিই ‘রাস্তা’ দেখিয়ে গেল।’’
কী ভাবে?
মনোজ বললেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছি কাঁচা রাস্তাই তৈরি করব। আমাদের সিদ্ধান্তে আশপাশের শোন, পুরান্ডি, কর্মা, শিলদা, গিতাহারের মতো আরও অনেক গ্রামের মানুষও কাঁধে কাঁধ মেলাতে এগিয়ে এসেছেন।’’ গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই জেদটা আগে চাপলে বোধহয় আরতি বেঁচে যেত!
পলামুর মাওবাদী প্রভাবিত এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলি জঙ্গলের মধ্যে কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘জঙ্গলের মধ্যে পায়ে চলা যে রাস্তাটুকু রয়েছে এই বর্ষায় তাও শেষ। মাওবাদীদের আতঙ্কে প্রশাসনও এখানে উন্নয়নের কাজ করতে ভয় পায়।’’ তবে গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসায় ভয় ভেঙেছে প্রশাসনের। পলামুর জেলাশাসক অমিত কুমার জানান, ওই এলাকা তারহাসি ব্লকের মধ্যে পড়ে। ব্লকের বিডিওকে ঘটনাস্থলে যেতে বলা হয়েছে। অমিতবাবু বলেছেন, ‘‘রাস্তার কাজকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। এই প্রকল্পে রাস্তা তৈরি হলে শ্রমদানকারী গ্রামবাসীদের মজুরিও মিলবে।’’
পরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা পাকা করা যায় কি না তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।
আরও পড়ুন- ‘ব্র্যান্ড মোদী’র ‘ভ্যালু’ বাড়িয়ে এ বার অচ্ছে দিনে ফিরতে চাইছে বিজেপি
আনন্দ উৎসব ফিরে এলো নতুন দুর্গা পূজা তথ্য নিয়ে