নারী নির্যাতনকে কেন্দ্র করে ফের সরগরম রাজধানীর রাজনীতি। এ বার শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্য রাস্তায় এক তরুণীকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল দিল্লির আনন্দপর্বত এলাকায়। যার জেরে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের চাপানউতোর।
বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় আজ বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। একই সঙ্গে সোচ্চার হয়েছেন দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। ঘটনার প্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশ কমিশনার বি এস বাস্সির কাছে আগামী দু’দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে দিল্লি সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও সরাসরি নিশানায় রেখেছেন কেজরীবাল। আপের দাবি, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা খতিয়ে দেখতে সপ্তাহে অন্তত ঘণ্টা চারেক সময় দেওয়া উচিত মোদীর। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, কৌশলে নিজের উপর থেকে দায় ঝেড়ে ফেলতেই তৎপর আপের প্রধান।
দিল্লির মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায় কেন্দ্রে মোদীর, না বিধানসভায় জিতে আসা কেজরীবাল সরকারের— বস্তুত এই তরজাতেই মশগুল দুই পক্ষ। অভিযোগ, এর সুযোগ নিয়েই দিল্লিতে বাড়ছে নারী নিগ্রহের ঘটনা।
গত সপ্তাহেই ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়েছিল দিল্লি পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে। তার রেশ মিটতে না মিটতেই ফের অভিযোগ শ্লীলতাহানি ও খুনের। বৃহস্পতিবার সন্ধের ঘটনা। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সময় বাজার সেরে ফিরছিলেন বছর উনিশের সেই ছাত্রী। বাড়ি ঢোকার মুখেই তাঁকে উদ্দেশ করে কটূক্তি শুরু করে দুষ্কৃতী দুই ভাই। অভিযোগ, তার প্রতিবাদ করাতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তরুণীকে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের শরীরে ৩৫টি আঘাতের চিহ্ন চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জয় প্রকাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, নিহত ছাত্রী এর আগেও একাধিক বার ধৃত যুবক ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিল থানায়। অনুমান, তার জেরেই এই ঘটনা।
প্রকাশ্য রাস্তায় এ ভাবে কুপিয়ে খুনের ঘটনা সামনে আসতেই ফের ময়দানে মুখোমুখি আপ ও বিজেপি। দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু কেন্দ্রের হাতে, তাই আজও কেন্দ্রকেই একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খুব খারাপ। কেন্দ্র এর দায় এড়াতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর উচিত এ নিয়ে পদক্ষেপ করা। না পারলে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের হাতেই পুলিশের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হোক। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এ ভাবে মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে দিল্লিতে।’’ প্রতি সপ্তাহে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক করা উচিত বলেও বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ দিকে কেজরীবাল মুখ খুলতেই সরব হয়েছে বিজেপি শিবির। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নির্ভয়া কাণ্ডের সময় দিল্লিতে কংগ্রেসের সরকার ছিল। সে সময়ে এই কেজরীবালই শীলা দীক্ষিত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন।
দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে দিল্লির মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়ার যে দাবি তুলে কেজরীবাল সরব থাকতেন, এখন ক্ষমতায় এসে সেই দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।’’
কেন্দ্র-রাজ্যের এই দ্বন্দ্বের মধ্যে আজ আবার আঙুল উঠল রাজধানীর আম জনতার দিকেও। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে বছর ছত্রিশের এক ব্যক্তির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠল তাঁরই এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। ভিড় করে জনতা শুধুই দেখে গিয়েছে। এগিয়ে আসেনি বাঁচাতে। শনিবার রাতের ঘটনা। গুরুতর জখম ওই ব্যাক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের দাবি, ঘটনার সময় দু’জনেই মদ্যপ ছিলেন।