ঘুষ-ধাক্কা আস্থানাকে, দ্রুত তদন্ত চায় কোর্ট

অলোক বর্মা বিদায় নেবেন। তিনি নিশ্চিন্তে ফের সিবিআই দফতরে ফিরবেন। তার পর তিনিই হবে সিবিআই অধিকর্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১০
Share:

রাকেশ আস্থানা। —ফাইল চিত্র।

অলোক বর্মা বিদায় নেবেন। তিনি নিশ্চিন্তে ফের সিবিআই দফতরে ফিরবেন। তার পর তিনিই হবে সিবিআই অধিকর্তা।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর ‘আস্থাভাজন’ বলে পরিচিত গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস রাকেশ আস্থানার সেই আশায় এ দিন জল ঢেলে দিল দিল্লি হাইকোর্ট। সিবিআই অধিকর্তা থাকাকালীন বর্মা বিশেষ অধিকর্তা আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। তা খারিজ করতে আস্থানা দিল্লি হাইকোর্টে যে আর্জি জানিয়েছিলেন, আজ বিচারপতি তা খারিজ করে দিয়েছেন। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি নাজমি ওয়াজিরির নির্দেশ, সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে ১০ সপ্তাহের মধ্যে আস্থানা ও অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে হবে। কারণ অভিযোগ যথেষ্ট গুরুতর। বর্মার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেছিলেন আস্থানা। তা-ও দাঁড়াচ্ছে না বলে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে।

আস্থানা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এত দিন হাইকোর্টের নির্দেশে আস্থানার বিরুদ্ধে ফৌজদারি পদক্ষেপে বাধা ছিল। এ দিন তা-ও উঠে গেল। ফলে তাঁর গ্রেফতারিতেও বাধা নেই। গ্রেফতারি এড়াতে আস্থানা হাইকোর্টের কাছে দু’সপ্তাহের সময় চেয়েছেন।

Advertisement

মোদী সরকারের পক্ষে আপাতত তাঁকে সিবিআই অধিকর্তা পদে বসানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, বর্মার বিদায়ের পরে সিবিআইয়ের অতিরিক্ত অধিকর্তা এম নাগেশ্বর রাওকে অধিকর্তার কাজ দেখতে বলা হয়েছে। কিন্তু খুব শীঘ্রই নতুন অধিকর্তা নিয়োগ করতে হবে মোদী সরকারকে। আস্থানা কবে ‘কলঙ্ক-মুক্ত’ হবেন, তার জন্য অপেক্ষা করা মুশকিল।

প্রথমে বর্মার বিরুদ্ধে আস্থানার দুর্নীতির অভিযোগ, তার পরে আস্থানার দুর্নীতির তদন্তে বর্মার এফআইআর— সিবিআইয়ের দুই শীর্ষকর্তার বিবাদ প্রকাশ্যে আসতে ২৩ অক্টোবর দু’জনকেই ছুটিতে পাঠায় মোদী সরকার। হাইকোর্ট আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ায় তদন্ত চলাকালীন মোদী সরকারের পক্ষে আস্থানাকে সিবিআইতে কাজে ফেরানো মুশকিল হল। তার জন্য আস্থানাকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে সুরাহা মেলার আশাতেই বসে থাকতে হবে।

তবে তদন্তের ফলে আস্থানা সমস্যায় পড়বেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদীর বাছাই করা নাগেশ্বর রাও কি মোদীর আস্থাভাজন আস্থানার বিরুদ্ধে ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত করবেন? কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘দিল্লি হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। তবে মোদীর নয়নের মণির বিরুদ্ধে সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত করবে, আলমারি থেকে কঙ্কাল বার হবে, এ সব শুধু কল্পনাতেই হয়!’’

অনেকে মনে করছেন, দিল্লি হাইকোর্টের রায় এক দিক থেকে মোদীর জন্য ভাল হয়েছে। বর্মাকে সরানোর পরে গুজরাত ক্যাডারের আস্থানাকে সিবিআই অধিকর্তা করা হলে আমজনতার মনে প্রশ্ন উঠত, তা হলে কি রাফাল তদন্ত ধামাচাপা দিতেই মোদী বর্মাকে সরিয়ে নিজের আস্থাভাজন আস্থানাকে নিয়ে এলেন?

আস্থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যবসায়ী সানা সতীশ বাবুর থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। আস্থানার হয়ে ডেপুটি এসপি দেবেন্দ্র কুমার ও মনোজ প্রসাদ ঘুষ নিতেন বলেও অভিযোগ। বিচারপতি ওই দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর খারিজ করতেও রাজি হয়নি।

আস্থানার যুক্তি ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের ১৭এ ধারা মেনে এফআইআর করার আগে কেন্দ্রের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। হাইকোর্টের রায়, সরকারি অফিসারেরা ফৌজদারি অপরাধ করলে এমন ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন