তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডু বিতর্ক। — ফাইল চিত্র।
ঘি তৈরি হত, কিন্তু লাগত না এক ফোঁটা দুধও! শুনতে অবাক লাগলেও ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ ভাবেই ভেজাল ঘি তৈরি করে আসছে উত্তরাখণ্ডের ভোলেবাবা ডেয়ারি! শুধু তা-ই নয়, সেই ঘি সরবরাহ হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দিরে। আর তা দিয়েই তৈরি হয়েছে মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডু! আদালতে এমনই জানাল সিবিআই। পাশাপাশি, ওই ডেয়ারিকে রাসায়নিক পদার্থ সরবরাহ করার অভিযোগে দিল্লির ব্যবসায়ী অজয়কুমার সুগন্ধকে গ্রেফতারও করেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, ভোলেবাবা ডেয়ারিতে মনোডাইগ্লিসারাইড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড এস্টার-সহ নানা ধরনের রাসায়নিক সরবরাহ করতেন অজয়।
তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডুতে অনিয়মের অভিযোগে তদন্তে নেমে আগেই ভোলেবাবা ডেয়ারির দুই প্রধান বিপিন জৈন এবং পোমিল জৈনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) জানায়, দিল্লির ব্যবসায়ী অজয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন বিপিনেরা। তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁরা পাঁচ বছরে কোনও জায়গা থেকে এক ফোঁটা দুধও সংগ্রহ করেননি। অথচ তৈরি করেছেন ঘি। গত পাঁচ বছরে তিরুপতি মন্দিরে ৬৮ লক্ষ কেজি ঘি সরবরাহ করেছে ভোলেবাবা ডেয়ারি!
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ভেজাল ঘি তৈরির এক ইউনিট তৈরি করেছিলেন বিপিনেরা। সেই ইউনিট থেকে তৈরি ঘি পাঠানো হয় তিরুপতি মন্দিরে। পাঁচ বছরে ২৫০ কোটি টাকার ঘি তিরুপতি ট্রাস্টকে বিক্রি করেছেন তাঁরা। তবে বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্তেরা দেখিয়ে গিয়েছেন দুধ কেনাবেচার ভুয়ো রসিদ। তবে স্থানীয় যে দুগ্ধ ব্যবসায়ীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে ভোলেবাবা ডেয়ারি কোনও দিন দুধ কেনেনি। দুধের বদলে পাম তেল এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ কিনে ভেজাল ঘি তৈরি করত ওই সংস্থা।
শুধু ভোলেবাবা ডেয়ারি নয়, তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডুতে অনিয়মের মামলার তদন্তে আরও দুই ডেয়ারি সংস্থার প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়। তামিলনাড়ুর বৈষ্ণবী ডেয়ারির অপূর্ব বিনয় কান্ত এবং তেলঙ্গানার এআর ডেয়ারির রাজু রাজাশেখরনের নাম জড়িয়েছে এই মামলায়। এ বার এই মামলায় আরও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করল সিবিআই।
বিতর্কের সূত্রপাত গুজরাতের একটি ল্যাবরেটরির রিপোর্ট থেকে। তাতে দাবি করা হয়, তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডুতে ব্যবহৃত ঘি-তে পাওয়া গিয়েছে মাছ, গোমাংস এবং শূকরের চর্বির নমুনা। তিরুপতি মন্দিরের রান্নাঘরে প্রতি দিন তিন লক্ষ লাড্ডু তৈরি করা হয়। তাতে ব্যবহৃত হয় ১৫০০ কেজি ঘি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্ত করছে সিবিআইয়ের বিশেষ দল।