National News

ভুয়ো ভিডিয়ো নয়, মিনারে তোলা হল গেরুয়া পতাকা

৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিয়ো ক্লিপ গত কাল ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরু হয়েছিল বিতর্ক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩০
Share:

স্থানীয় সূত্রের খবর, মসজিদে তাণ্ডব চালানোর পরে গত কাল বিকেলে দুষ্কৃতীদের একটি দল স্থানীয় কয়েকটি দোকান এবং অন্তত তিনটি বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: পিটিআই।

মিনার বেয়ে তরতরিয়ে উঠছে কয়েক জন যুবক। এক জনের হাতে গেরুয়া, আর এক জনের হাতে তেরঙা। কালো ধোঁয়ায় তখন ঢেকেছে চারপাশ। এক যুবক মিনারের এক দিকে লাগানো লাউডস্পিকার খুলে ফেলে দিল নীচে। চেষ্টা করল মিনারের একটা অংশ ভেঙে ফেলতে, পারল না। তার পর ‘জয় শ্রীরাম’, ‘হিন্দুয়োঁ কা হিন্দুস্তান’ স্লোগান দিতে দিতে লাগানো হল পতাকা দু’টি।

Advertisement

৪৫ সেকেন্ডের এই ভিডিয়ো ক্লিপ গত কাল ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরু হয়েছিল বিতর্ক। কেউ বলেছিলেন, ভিডিয়োটি দু’ বছর আগের, বিহারের সমস্তিপুরের ঘটনা। ‘ভুয়ো’ তকমা লাগায় ভিডিয়োটি টুইটার হ্যান্ডল থেকে মুছেও ফেলেছিলেন সাংবাদিক রানা আইয়ুব। আজ জানা গেল, ভিডিয়োটি নির্ভেজাল। উত্তর-পূর্ব দিল্লির অশোক নগরে, পাঁচ নম্বর গলিতে গিয়ে সাংবাদিকেরা আজ দেখলেন, বড়ি মসজিদের মাথায় এখনও উড়ছে গেরুয়া পতাকা— লেখা, ‘জয় শ্রীরাম’!

আরও পড়ুন: ‘আমার বুড়ি মা পালাতে পারেনি’

Advertisement

ভিডিয়ো ক্লিপে যে ধোঁয়া দেখা গিয়েছিল, জানা গেল, সেই ধোঁয়া বেরোচ্ছিল মসজিদে লাগানো আগুন থেকেই। কাল একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের আপলোড করা নিজস্ব ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু পুলিশকে দেখা যায়নি ত্রিসীমানাতেও। পুলিশ আজও কেন ব্যবস্থা নিল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, মসজিদে তাণ্ডব চালানোর পরে গত কাল বিকেলে দুষ্কৃতীদের একটি দল স্থানীয় কয়েকটি দোকান এবং অন্তত তিনটি বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট, একটি বাড়ির মালিক মহম্মদ রশিদ সেই সময়ে সপরিবার মুরাদনগরের বিয়েবাড়িতে ছিলেন। আজ রশিদ বলেন, ‘‘ওরা কাগজ দেখানোর কথা বলছে। কিন্তু এখন আর দেখানোর মতো থাকলটা কী? সকলের আধার, ভোটার কার্ড, টাকা জ্বালিয়ে দিয়ে গেল ওরা।’’ কারা? ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও উত্তর মেলেনি পুলিশের তরফে।

গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গা নিয়ে লেখা ‘গুজরাত ফাইলস’-এর লেখিকা-সাংবাদিক রানা কাল ‘দিল্লির ঘটনা’ বলেই ভিডিয়োটি পোস্ট করেছিলেন টুইটারে। পরে একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, ঘটনাটি দিল্লির ‘অশোক বিহারের’। উত্তর-পশ্চিম দিল্লির ডিসিপি তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন, ‘অশোক বিহারের’ কোথাও এমন কিছু ঘটেনি। তাঁকে উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদমাধ্যম লেখালিখি শুরু হয়, ‘ভুয়ো খবর’ রটছে। মুম্বই থেকে রমেশ সোলাঙ্কি নামের এক ব্যক্তি অনলাইনে সাংবাদিক রানা আইয়ুবের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে দু’বছরের পুরনো বিহারের ভিডিয়ো পোস্ট করে অশান্তিতে উস্কানি দিচ্ছেন রানা।

গত কালই ওই সংবাদমাধ্যম ভুল শুধরে নিয়ে জানায়, ঘটনাটি অশোক নগরের। সত্যতা যাচাই করে ভিডিয়োটি ফের টুইট করেন সাংবাদিক রানাও। যিনি ভিডিয়ো তুলেছিলেন, তিনিও লিখিত ভাবে জানান, যে সেটি তাঁরই তোলা। আজ ওই ঘটনাস্থলে যান একাধিক সাংবাদিক। তাঁরাও ছবি-ভিডিয়ো দিয়ে জানিয়েছেন, কাল অশোক নগরের বড়ি মসজিদেই তাণ্ডব চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন