Delhi Violence

কোথাও হাত গুটিয়ে, কোথাও রোগী-হেনস্থা! রিপোর্টে বিদ্ধ দিল্লির ডাক্তারেরা

এরা কারা? অভিযোগ, চিকিৎসাপ্রার্থীদের ধর্মও জানতে চাওয়া হয়েছে কয়েকটি হাসপাতালে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০৬:১৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

রেহাই দিল না হাসপাতালও! চিকিৎসা করাতে গিয়ে শুনতে হল— ‘এনআরসি, সিএএ-র পুরো কথাটা কী জানেন?’’ কোথাও আবার নিখোঁজ সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন পরিবারকে রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠে সরকারি ডাক্তার বলে দিলেন, ‘‘তা-হলে আপনারাই চিকিৎসাটা করে যান! আরে, আমরা নিজের কাজটা করব, না লোক খুঁজে বেড়াব?’’ কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে হিংসাদীর্ণ দিল্লিতে সরকারি চিকিৎসকদের একটা
অংশ যা করলেন, তা আসলে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা-ই বলল ‘জনস্বাস্থ্য অভিযান’ নামে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার যৌথ মঞ্চের সাম্প্রতিক রিপোর্ট। চিকিৎসাপ্রার্থী এবং তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে তৈরি এই রিপোর্টের দাবি, চিকিৎসকদের একাংশের আচার-আচরণে ‘সেকেন্ডারি ট্রমার’ মধ্যে পড়তে হয়েছে অনেককেই।

Advertisement

এরা কারা? অভিযোগ, চিকিৎসাপ্রার্থীদের ধর্মও জানতে চাওয়া হয়েছে কয়েকটি হাসপাতালে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই ছেলে নিখোঁজ। দু’দিন দমবন্ধ করে বাড়িতে থাকার পরে এই হাসপাতাল-সেই হাসপাতাল করছিল এক উদ্বিগ্ন পরিবার। জনস্বাস্থ্য অভিযানের রিপোর্ট বলছে, ওই পরিবারকে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কোনও তথ্যই দেয়নি। অবশেষে তাঁরা ছেলের খোঁজ পান সেই হাসপাতালেরই মর্গে, যেখানকার ডাক্তার প্রথমে কোনও তথ্য না-দিয়ে শুধু বিরক্তিই প্রকাশ করেছিলেন।

একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ছড়িয়ে পড়া হিংসায় কার্যত শ্মশানের চেহারা নিয়েছে শিব বিহারের অলিগলি। প্রাণ বাঁচাতে বাসিন্দারা অনেকেই পালিয়েছেন। বন্ধ এলাকার একমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিও! তাই হিংসার জেরে আহত শিব বিহারের মতো বহু এলাকার বাসিন্দাকেই চিকিৎসা পেতে পাড়ি দিতে হয়েছিল অন্যত্র। কোথায়, আর কী ভাবে? জনস্বাস্থ্য অভিযানের রিপোর্ট বলছে, রাষ্ট্রশক্তিকে ভয় পেয়ে অনেকে সরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চেয়ে ভাড়ার অটোয় চেপে হাসপাতালে যাওয়াও নিরাপদ মনে করেছেন অনেকে।

Advertisement

বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত আইনি নথি পাওয়া নিয়েও আক্রান্তদের ভুগতে হয়েছে বলে অভিযোগ। জরুরি ভিত্তিতে কেন তাঁদের আগেই চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই রকম ভাবে
ময়নাতদন্তের পরে বহু ক্ষেত্রে নথি সংশ্লিষ্ট পরিবারের হাতে তুলে না-দেওয়া, বা অসম্পূর্ণ ভাবে ফেলে রাখার অভিযোগও উঠেছে কিছু হাসপাতালের ক্ষেত্রে। এরই মধ্যে, লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে মানবিক মুখ দেখিয়েছেন দুই চিকিৎসক। পুলিশি
নথি না-থাকায় আক্রান্তের চিকিৎসা হচ্ছে না-দেখে, তাঁরাই এগিয়ে এসে সব বন্দোবস্ত করেন। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালও জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা দিয়েছে বলে দাবি করেছে ওই রিপোর্ট।

তবু সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তেমন সুখকর নয় বলেই রাজধানীর স্বাস্থ্য পরিষেবার সার্বিক উন্নয়নে ১০টি জরুরি প্রস্তাব দিয়েছে ‘জনস্বাস্থ্য অভিযান’। যার মধ্যে কয়েকটি হল— ফর্ম পূরণ হোক বা না-হোক, চিকিৎসাপ্রার্থীকে পরিষেবা দিতে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হোক সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত যাবতীয় নথি যথাসময়ে তুলে দিতে হবে আক্রান্তের পরিবারকে। চিকিৎসা না-পাওয়া বা হেনস্থার অভিযোগ জানাতে টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হোক। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য অধিকার গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়েই দিল্লি সরকারের উচিত এলাকায় এলাকায় গিয়ে আক্রান্তের খোঁজখবর নিয়ে পরিষেবা দেওয়া। হিংসা কবলিত এলাকায় যাবতীয় প্রাথমিক সুবিধে-সহ মোবাইল ভ্যান চালুর সুপারিশও করেছে জনস্বাস্থ্য অভিযান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন