একে রাস্তাঘাট ঠিক করা যাচ্ছে না, তার উপর বন্ধ করা যাচ্ছে না সরকারি অফিসে ঘুষের রেওয়াজ। এ নিয়ে বিব্রত শিলচরের বিজেপি বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপ পাল। রাখঢাক না করেই তিনি তাঁর অস্বস্তির কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আশ্বস্ত করেন, জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনকে দু’টি বিষয়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।
৫০ দিন হতে চলল রাজ্যের শাসনভার হাতে নিয়েছে বিজেপি। পরিবর্তনের বিরাট আশা নিয়ে মানুষ বিপুল ভোটে জিতিয়ে এনেছে বিজেপিকে। শিলচর উপনির্বাচন বা পরবর্তী সময়ে বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ পাল যে বিরাট ব্যবধানে জিতেছেন, তার বড় কারণ রাস্তাঘাট ঠিক হওয়ার আশা। কিন্তু ৫০ দিনেও শহরের রাস্তাঘাটে কোনও পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তনের কোনও চেষ্টা চোখেও পড়ছে না। বরং যত সময় যাচ্ছে, অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আশাভঙ্গের আশঙ্কায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ইটখলা-মালুগ্রাম-ঘনিয়ালা, হাসপাতাল রোডের মোড় থেকে কলেজ রোড হয়ে চেংকুড়ি রোডের মোড় এবং কাঁঠাল রোড এলাকার মানুষের অবস্থা চরমে উঠেছে। ভোটের আগে রাস্তা ঠিক হওয়ার যেটুকু আশা দেখা দিয়েছিল এখন তাও শেষ। পূর্তকর্তারা এক এক সময় এক একরকম কথা বলছেন। এ নিয়ে ডেপুটি স্পিকার দিলীপ পাল তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। জেলাশাসকের সঙ্গে শহরের রাস্তাঘাট নিয়ে তিনি বৈঠক করেছেন। পূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে কথা বলার জন্য জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। কোথায়, কেন কাজ হচ্ছে না বা করা যাচ্ছে না তা সঠিকভাবে এলাকার মানুষকে জানাতে বলেন দিলীপবাবু। বিষয়টি নিয়ে তিনি বিভাগীয় মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি অফিসে বিজেপি আমলেও ঘুষ ছাড়া কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়েছেন দিলীপবাবু। তিনি সে ব্যাপারেও জেলাশাসককে কড়া নজরদারির নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সেটেলমেন্ট অফিসের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। কেন রাস্তাঘাটের কাজ হচ্ছে না, তা জানতে গিয়ে পূর্তকর্তাদের দায়সারা মনোভাবে ক্ষিপ্ত বিজেপি পুরসদস্য বিজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহও। তিনি বলেন, নানা জন নানা কথা বলছেন। সেজন্য সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত। পাথর-বালি পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে কয়েকদিন আগে পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন চন্দ মালুগ্রাম-ঘনিয়ালার এক প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছিলেন। একে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন বিজেন্দ্রবাবু। তিনি জানান, কাছাড় কলেজের সামনে থেকে ঘনিয়ালা হয়ে পঞ্চানন-শিববাড়ি পর্যন্ত যে রাস্তার কাজ ভোটের মুখে ধরা হয়েছিল তার কোনও অর্থমঞ্জুরিই ছিল না। ফলে ওয়ার্ক অর্ডারের প্রশ্নই ওঠে না। কংগ্রেসিরা ঠিকাদারকে বলেছিল, ক্ষমতায় ফিরে তারা তাঁকেই এই কাজ দেবেন। তাদের মুখের কথায় ঠিকাদার মাঝপথে সামনে-পিছনে কিছুটা জায়গায় সিসি ব্লক বসান। বিজেপি ক্ষমতায় ফিরতেই ঠিকাদারের মাথায় হাত। ফলে ওই রাস্তায় কাজ আর এগোয়নি। ঠিকাদার তাঁর মালপত্র তুলে নিয়ে গিয়েছেন।
বিজেন্দ্রবাবু দ্রুত এই রাস্তার মঞ্জুরি আদায়ের জন্য পূর্তবিভাগের কাছে দাবি জানিয়েছেন। অন্যান্য রাস্তাগুলির মেরামতির জন্যও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানান তিনি। স্টিমারঘাট থেকে অন্নপূর্ণাঘাট পর্যন্ত রাস্তার জন্য ৫৪ কোটি টাকার প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কথা জানিয়ে শিলচর পুরসভার প্রাক্তন উপপ্রধান বিজেন্দ্রবাবু বলেন, এটি মঞ্জুর করে আনতে তিনি তৎপর রয়েছেন। তাঁর দাবি, জলসম্পদ বিভাগে অনেকদিন থেকে কোনও এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পদে কেউ ছিলেন না। দিলীপবাবু গত মাসে বিভাগীয় মন্ত্রীকে বলে একজন এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে শিলচরের দায়িত্বে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।