ভোগাচ্ছে পিএমসি-র ছোঁয়া, বুঝছেন দেবেন্দ্র

শচীন একা নন, অন্তত ১৬ লক্ষ আমানতকারীর প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা (অঙ্কটা দশ হাজার কোটি ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে) গচ্ছিত ছিল পিএমসি-তে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

মুম্বই শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪০
Share:

ছবি: পিটিআই।

প্রথম চোট পেয়েছিলেন নোট বাতিল-জিএসটির সময়ে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম ইনিংসের আর্থিক সংস্কারের ধাক্কায় কার্যত বসিয়ে দিতে হয়েছিল আটটির মধ্যে ছ’টি বাস। দ্বিতীয় মোদী সরকারের শুরুতে নতুন ধাক্কা। পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক (পিএমসি)-এর দুর্নীতি সামনে আসায় সারা জীবনের সঞ্চয় খোয়ানোর মুখে মুম্বইয়ের ভিখরৌলির বাসিন্দা শচীন মিঙ্গল। তিনি, তাঁর বাবা শ্রীকান্ত, ভাই শ্রবণ— সব মিলিয়ে পরিবারের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ডুবতে বসার পথে। ওই টাকা রাখা হয়েছিল পিএমসি-র ভিখরৌলি শাখায়।

Advertisement

পিএনবি-র পরে পিএমসি। ফের অনাদায়ী ঋণ কেলেঙ্কারি। একেবারে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের মুখেই।

শচীন একা নন, অন্তত ১৬ লক্ষ আমানতকারীর প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা (অঙ্কটা দশ হাজার কোটি ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে) গচ্ছিত ছিল পিএমসি-তে। গত মাস থেকে গ্রাহকদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অন্ধকারে। শচীন বলেন, “তিন বন্ধু মিলে আইসক্রিমের দোকান দিয়েছিলাম বলে সংসারের খরচ উঠে আসছে কোনও মতে। কিন্তু পরিবারের কারও বড় ধরনের অসুখ-বিসুখ হলে জানি না কী হবে।”

Advertisement

একই আশঙ্কা বাকিদেরও। বিশেষ করে মুলুন্দের এক প্রতিষ্ঠিত ফালুদা ব্যবসায়ী টাকা থাকা সত্ত্বেও কার্যত যে ভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন, তাতে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে আমানতকারীদের মধ্যে। মুলুন্দের ৮২ বছর বয়সি মুরলীধর ধড়া হৃদ‌্‌যন্ত্রের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রয়োজন ছিল বাইপাস সার্জারির। পরিবারের বক্তব্য, পিএমসি ব্যাঙ্কে পরিবারের প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা জমা ছিল। কিন্তু তা তোলার অনুমতি না-থাকায় বাবার চিকিৎসার কথা বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন ছেলে প্রেম। দু’লক্ষ টাকার বেশি তোলার অনুমতি দেয়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এক রকম চিকিৎসার অভাবেই মারা যান মুরলীধর।

পিএমসি কেলেঙ্কারি এই নিয়ে প্রাণ কেড়েছে চার জনের। সরকারি ভাবে প্রশাসন মানতে না-চাইলেও, মৃতদের পরিবারগুলির বক্তব্য, ব্যাঙ্কের দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসাতেই দুশ্চিন্তা-উদ্বেগে মারা গিয়েছেন চার জন। যেমন, জেট এয়ারওয়েজের প্রাক্তন কর্মী সঞ্জয় গুলাটি। ছেলে অটিস্টিক। ফি-মাসে চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এ দিকে চাকরি নেই। টাকা জোগাড়ের চিন্তাই গুলাটির প্রাণ নিয়েছে বলে মনে করেন আমানতকারীদের বিক্ষোভের অন্যতম প্রতিনিধি সতনাম সিংহ। রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করা সতনামের কারবারও কার্যত থমকে গিয়েছে। টাক্সিচালক জাহিরের টাকা জমা ছিল ওই ব্যাঙ্কের বান্দ্রা শাখায়। আটকে গিয়েছে গাড়ির কিস্তি। কবে গাড়ি তুলে নেবে বিমা সংস্থা, সেই আশঙ্কায় ভুগছেন তিনিও।

ভোটের বাজারে পিএমসি কেলেঙ্কারিতে দলের নেতা-বিধায়কদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বেজায় অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। পিএমসি বোর্ডের ডিরেক্টর হিসেবে সামনে এসেছে মুলুন্দের বিদায়ী বিধায়ক তারা সিংহের ছেলে রজনীতের নাম। ছেলে কিছু জানে না বলে দাবি করেও নিজের টিকিট বাঁচাতে পারেননি চার বারের বিধায়ক তারা। মুম্বইয়ের কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের দাবি, পিএমসি বোর্ডের সব ডিরেক্টর কোনও না ভাবে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। ঋণ নিয়েও যাঁরা ফেরাননি, তাঁরাও বিজেপি-ঘনিষ্ঠ। তাই প্রতারণার দায় বিজেপি এড়াতে পারে না বলে দাবি তুলে রোজ বিক্ষোভকারীদের ধর্নায় শামিল হচ্ছেন সঞ্জয়।

দায় এড়ানো যে মুশকিল, তা বুঝতে পারছে বিজেপিও। বিশেষ করে আমজনতার পয়সা নয়ছয় হওয়ার ক্ষোভ ভোটের বাক্সে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সতনাম সিংহেরা দেখা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে। নির্মলা কার্যত দায় ঝেড়ে ফেলেছেন। ভোট বাঁচাতে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। সতনাম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আদর্শ আচরণবিধি শেষ হলেই গ্রাহকদের টাকা ফেরানোর প্রয়াস শুরু করবে সরকার।” কিন্তু সমবায় ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ যেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে, সেখানে সরকার কী করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তাই ভোট বাজারে শুকনো আশ্বাসে কতটা চিঁড়ে ভিজবে, তা নিয়ে সন্দিহান দলের নেতারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন