তিস্তা ভরবে না তোর্সার জলে, আশাহত ঢাকা

তিস্তার বদলে তোর্সা— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিকল্প প্রস্তাব কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে ঢাকার উৎসাহে। সরকারি ভাবে তড়িঘড়ি এখনই কোনও বিবৃতি দিচ্ছে না বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়— বিবেচনার যোগ্যই নয় এই প্রস্তাব।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৪১
Share:

তিস্তার বদলে তোর্সা— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিকল্প প্রস্তাব কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে ঢাকার উৎসাহে। সরকারি ভাবে তড়িঘড়ি এখনই কোনও বিবৃতি দিচ্ছে না বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়— বিবেচনার যোগ্যই নয় এই প্রস্তাব।

Advertisement

মমতার এই বিকল্প প্রস্তাবকে দিল্লি যে গুরুত্ব দিচ্ছে না, যৌথ বিবৃতিতে তা বোঝানো হয়েছে। গুরুত্ব দিতে নারাজ ঢাকাও। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে দিল্লিতে আসা বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তা জানান, নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণ স্বীকার করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে আসায় তাঁরা আনন্দিত হয়েছিলেন। সকালে সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ভাবে তাঁকে পাশে নিয়ে তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার আশ্বাস দিলেন, তাতে তাঁদের উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। শনিবার শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে মমতা যখন রাষ্ট্রপতি ভবনে এলেন, তখনও ঢাকার কূটনীতিকরা ভাবছেন— সব ঠিক এগোচ্ছে। কিন্তু মমতা যে কথা হাসিনাকে বললেন, তাতে আনন্দের আর কিছু রইল না। তাঁর কথায়— ‘‘তোর্সার প্রস্তাব বিবেচনার উপযুক্ত নয়। ৩৪ বছর ধরে কষ্টকর আলোচনার পরে তিস্তা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের কূটনীতিকরা একটা জায়গায় পৌঁছেছেন। তোর্সা নিয়ে আমরা আবার সেই প্রক্রিয়া শুরু করব নাকি?’’ বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তা জানান, এ ছাড়াও নানা কারণে তোর্সার জল কখনওই তিস্তার জলের বিকল্প হতে পারে না।

আনন্দবাজারকে তার কারণ ব্যখ্যা দিলেন বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রকের এক সাবেক কর্তা, যিনি তিস্তা নিয়ে দিল্লির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছেন। বর্ষীয়ান এই আমলার কথায়, তিস্তা ও তোর্সার অববাহিকা এক নয়। তিস্তার জল শুকিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে এই নদীর অববাহিকায় একটা বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তার মধ্যে রংপুর জেলার একটা গোটা বিভাগ রয়েছে। ভূপ্রকৃতিগত কারণে তোর্সার বাড়তি জল খাল কেটেও আনা সম্ভব নয়। ওই কর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল থেকে তোর্সা ছাড়া জলঢাকা ও রায়ডাক নদী বাংলাদেশে বয়ে এসেছে। কিন্তু খুব বেশি দূর না এসেই তারা বিভিন্ন নদীতে মিশে যাওয়ায় তিনটি নদীর অববাহিকা ছোট। এই কারণে এগুলি বাংলাদেশে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নদী হিসাবেই বিবেচিত হয় না। তিস্তার অববাহিকা কিন্তু অনেক বড়। আর এই অববাহিকায় দ্বিতীয় কোনও বড় নদী না-থাকায় তিস্তার জলের কোনও বিকল্প নেই। তোর্সা, জলঢাকা বা রায়ডাকে ভারত বাড়তি জল দিলেও তিস্তা অববাহিকার দুর্দশা ঘুচবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: গো-রক্ষার নামে তাণ্ডবের নিন্দা করলেন মোহন ভাগবতও

ঢাকার ওই প্রাক্তন আমলা জানান, যৌথ নদী কমিশন গড়ে ১৯৮৩ সাল থেকে তিস্তা নিয়ে আলোচনা চলছে দিল্লি ও ঢাকার। মমতার প্রস্তাব মেনে তোর্সা-জলঢাকা-রায়ডাক নিয়ে ফের নদী কমিশন গড়ে আলোচনা শুরু করতে হলে, জল কবে পাবে বাংলাদেশ? তিনি জানান, সুতরাং সময়ের কারণেও এই প্রস্তাবটি অর্থহীন। কারণ— তিস্তা অববাহিকার যা পরিস্থিতি, তাতে এই অঞ্চলে এখনই জল না-এলে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাঁর আক্ষেপ— দু’দেশের কূটনীতিকদের কথায় মনে হয়, তিস্তা চুক্তি শুধুই শেখ হাসিনার ভোটে জেতার চাবিকাঠি। এই অঞ্চলের মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়টি কেউ উল্লেখই করেন না।

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের আর এক কর্তার কথায়, ‘‘হাসিনার সফরে বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্যের মধ্যে একটাই মন খারাপের বিষয় তিস্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য। এ যেন ভাত চেয়ে চুয়িংগাম পাওয়া। বিষয়টি কী ভাবে লঘু করা যায়, আমরা এখন সে চেষ্টা করছি।’’ তাঁর কথায়, মমতা তো কার্যত জানিয়েই দিলেন— তিস্তার জল মিলবে না। তবে তার পরেও তিস্তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আন্তরিক আশ্বাসেই ঢাকা ভরসা রাখছে বলে ওই কর্তা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন