কপ্টার কাণ্ড

মোদীকে বাঁচাতে নেমে বহিষ্কৃত দিদির সাংসদ

এ যেন সুপ্ত আগ্নেয়গিরির হঠাৎ বিস্ফোরণ! তোপ দাগা হচ্ছিল নরেন্দ্র মোদীর দিকে। আর তখনই মোদী বিরোধীদের আক্রমণের অভিমুখ ঘোরাতে একা কুম্ভের মতো লড়াইয়ে নেমে পড়লেন দিদির দলের সাংসদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৪:৩১
Share:

বহিষ্কারের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সুখেন্দুশেখর রায়। সোমবার সংসদে। ছবি: পিটিআই।

এ যেন সুপ্ত আগ্নেয়গিরির হঠাৎ বিস্ফোরণ! তোপ দাগা হচ্ছিল নরেন্দ্র মোদীর দিকে। আর তখনই মোদী বিরোধীদের আক্রমণের অভিমুখ ঘোরাতে একা কুম্ভের মতো লড়াইয়ে নেমে পড়লেন দিদির দলের সাংসদ। গাঁধী পরিবারের বিরোধিতায় জোরালো লড়াইয়ের শেষে রাজ্যসভা থেকে সারাদিনের জন্য বহিষ্কৃতও হতে হল তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়কে।

Advertisement

কপ্টার কাণ্ড নিয়ে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলতে বিজেপি সরব হবে, সেটাই স্বাভাবিক। সে ভাবেই শুরু হয়েছিল দিনটা। কিন্তু রাজ্যসভায় কংগ্রেস কে জি বেসিন বিতর্কে মোদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পাল্টা কপ্টার কেলেঙ্কারির তদন্ত চেয়ে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর যে সবাইকে ছাপিয়ে যাবেন, তা কে জানত! পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে গাঁধী পরিবারের উদ্দেশে বার বার কটূক্তি করতে থাকায় গোটা দিনের জন্য বহিষ্কার করা হয় সুখেন্দুবাবুকে। তবে তিনি আজ যে ভাবে গাঁধী পরিবারের উদ্দেশে একের পর এক তির্যক মন্তব্য হেনেছেন, তাতে বিরোধীরা পরিকল্পিত রণকৌশলের ছাপ খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘এ হল বিজেপির পাশে দাঁড়াতে মোদীভাই-দিদিভাইয়ের আঁতাঁত। মোদী প্যাঁচে পড়তেই, তাঁকে বাঁচাতে নেমে পড়েছে তৃণমূল।’’

পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচারে এসে দুর্নীতি নিয়ে মমতাকে সরাসরি নিশানা করেছিলেন সনিয়া গাঁধী। প্রত্যাঘাতে রেজ্জাক মোল্লার সমর্থনে জনসভা করে কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সনিয়াকে আক্রমণ করে বসেন মমতা। এমনকী, দলের সাংসদদের নির্দেশ দেন, গাঁধী পরিবারের প্রতি সৌজন্যতার দিন শেষ। ভোটের শেষ পর্বের আগে সংসদে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে।

Advertisement

কর্ত্রীর ইচ্ছায় কর্ম। তাই নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে কলকাতা থেকে দিল্লি উড়ে আসেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সুখেন্দুশেখর রায়কে। সকালে কপ্টার কাণ্ড নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার জন্য নোটিস দেন সুখেন্দুবাবু। যদিও আলোচনার কোনও সুযোগ পাননি তিনি। বরং মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে কে জি বেসিন কেলেঙ্কারির অভিযোগকে ঘিরে কংগ্রেস ও বিজেপি সাংসদদের হইচইয়ে মুলতুবি করে দিতে হয় জিরো আওয়ার।

এর পর প্রশ্নোত্তর পর্বে কপ্টার কাণ্ড নিয়ে সুখেন্দুবাবুকে বলার সুযোগ করে দেন চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি। বিজেপিও এ পর্যন্ত কপ্টার কাণ্ডে সনিয়ার নাম তুলে সরব হয়নি। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী সনিয়ার নাম নেওয়ায় পরে তা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু সুখেন্দুবাবু বলতে উঠে কপ্টার দুর্নীতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করা দূরে থাক, শুরু থেকেই গাঁধী শব্দটি ব্যবহার করে নাম না করে আক্রমণ শানান সনিয়া গাঁধীকে। তৃণমূল শিবির জানত, গাঁধীর নাম উঠলেই প্রতিবাদে সরব হবে কংগ্রেস। হয়েছেও তাই। সুখেন্দুবাবুর মুখে একাধিক বার গাঁধী শুনেই ওয়েলে নেমে পড়েন ক‌ংগ্রেস সাংসদরা। আর তৃণমূল সাংসদের সমর্থনে সরব হয় বিজেপি।

এখানেই অবশ্য থামেননি সুখেন্দু। অন্য বিষয়ের আলোচনাতেও তিনি বার বার উঠে দাঁড়িয়ে গাঁধী শব্দটি ব্যবহার করতে থাকেন। দাবি তোলেন আলোচনার। আনসারি সুখেন্দুকে একাধিক বার বসতে বললেও, তা অগ্রাহ্য করেন তৃণমূল সাংসদ। কপ্টার দুর্নীতিতে গাঁধীদের জড়িত থাকার অভিযোগে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। এর পর রাজ্যসভার ২৫৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী সুখেন্দুশেখরকে সারা দিনের জন্য বহিষ্কার করে দেন হামিদ আনসারি। সুখেন্দুবাবু বেরিয়ে যেতেই তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় অরুণ জেটলিকে। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক জন সদস্য কপ্টার কাণ্ড নিয়ে আলোচনা চাইছেন। আর দৃষ্টি ঘোরাতে কংগ্রেস কে জি বেসিন নিয়ে সরব হয়েছে।’’ আর কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘মমতা ভয় পেয়েছেন। সারদা থেকে নারদ-দুর্নীতিতে জর্জরিত তৃণমূল এখন বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁতে ব্যস্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন