শুকোয়নি ঘা, ফের লং মার্চে প্রস্তুত মহারাষ্ট্র

রক্তাক্ত পায়ে কৃষকের লং মার্চ কাঁপিয়ে দিয়েছে সারা দেশকে। অব্যাহত আত্মহত্যা। খরা, ঋণের বোঝা, ফড়ের দাপটের মাঝে কেমন আছেন কৃষকেরা?শেখুবাইয়ের বাড়ির পাশে তাঁর জমি। গত ত্রিশ বছর ওই জমিতে চাষ করছেন। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরে ওই জমিতে খেটেই মেয়েকে বড় করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন। এখন নিজে মাঠে খাটতে পারেন না। লোক লাগিয়ে চাষ করে যে টাকা মেলে, তাতেই পেট চলে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

দিন্দোরী (নাশিক) শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪০
Share:

সেই পা: তখন ও এখন।

ন’মাস কেটে গিয়েছে। বাঁ পায়ের পাতা এখনও ফুলে। ঘা শুকোয়নি। কাপড় ছিঁড়ে ব্যান্ডেজ জড়ানো।

Advertisement

গয়না বলতে ছিল ছোট্ট সোনার নথ। এখন নেই। পায়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে সেটি বন্ধক রাখতে হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় কাজ হয়নি। ছুটতে হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে।

মার্চের ৪০ ডিগ্রি গরমে নাশিক থেকে মুম্বই— মহারাষ্ট্রের ‘কিষাণ লং মার্চ’-এ ১৮০ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন শেখুবাই ওয়াগলে। টানা ছয়দিন হাঁটা। চটি ছিঁড়েছিল। ফোসকা, ছালচামড়া উঠে লাল হাঁ-মুখ পায়ের সেই ছবি দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির পরাজয়ের পর যে পায়ের ছবি ‘ভাইরাল’ হয়েছে আবার।

Advertisement

সেই শেখুবাইয়ের খোঁজ মিলল নাশিক থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে, দিন্দোরি-র আদিবাসী গ্রাম বারখেডায়। গ্রামের এক কোনায় মাটির বাড়ি। আলপথ ধরে অচেনা লোককে আসতে দেখে লজ্জায় বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেন বৃদ্ধা। একটাই মাত্র ভাল শাড়ি। সেটাই গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এলেন। ‘লং মার্চ’-এ এই শাড়িই তাঁর পরনে ছিল। বাড়ির দাওয়ায় বসে মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়নবীস সরকারকে গাল পাড়লেন শেখুবাই। নিজের পা-কেও। ‘‘কবে যে ঘা শুকোবে? পায়ের ছাল গেল। নথ গেল। তবু পাট্টা মিলল না।’’

একা শেখুবাই নন। নাশিক জেলার যে ৪০ হাজার চাষি ‘লং মার্চ’-এ হেঁটেছিলেন, তাঁদের শতকরা ৯০ ভাগই আদিবাসী। এবং তাঁদের দাবিই ছিল, জমির পাট্টা। ২০০৬-এ মনমোহন সরকারের অরণ্যের অধিকার আইন বলেছিল, জঙ্গলের জমিতে যারা চাষ করেন, তাদের জমির অধিকার মিলবে। ১২ বছর গড়িয়ে গেলেও শেখুবাইরা পাট্টা পাননি। বারখেডা গ্রামের শ’দুয়েক আদিবাসী পরিবার জমির পাট্টার জন্য আবেদন করেছেন। জনা সত্তর পেয়েছেন। হাপিত্যেশ করে এখনও বসে বাকিরা।

শেখুবাইয়ের বাড়ির পাশে তাঁর জমি। গত ত্রিশ বছর ওই জমিতে চাষ করছেন। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরে ওই জমিতে খেটেই মেয়েকে বড় করেছেন। বিয়ে দিয়েছেন। এখন নিজে মাঠে খাটতে পারেন না। লোক লাগিয়ে চাষ করে যে টাকা মেলে, তাতেই পেট চলে। তবে এখনও জমির পাট্টা মেলেনি। অথচ ‘লং মার্চ’এর পরে মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, চাষিদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হল।
বারখেডা গ্রামের প্রাক্তন সরপঞ্চ সিন্ধুবাই গায়কোয়াড়ও হেঁটেছিলেন তখন। তাঁর নালিশ, ‘‘পাট্টা মিললে জমিতে সেচের জল আসে। কৃষি ঋণ মেলে। ফরেস্টের বাবুদের জ্বালাতন বন্ধ হয়। না হলে যখন-তখন পোষা মুরগি, ছাগল উঠিয়ে নিয়ে যায়। গ্রামসভা পাট্টার সুপারিশ করলেও কাগজ আটকে রাখেন সরকারি বাবুরা।’’
তাহলে ‘লং মার্চ’এ লাভ হল না? শেখুবাই জবাব দেন, ‘‘আবার হেঁটে মুম্বই যাব।’’
কেন? মরাঠিতে উত্তর আসে, ‘‘পোটা সাথে।’’পেটের দায়ে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন