মোদীকে ভয় পেয়ো না, আসছি ২০১৯-এ

সদ্য গত কালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছিলেন, মায়ের সঙ্গে প্রাতরাশ করার জন্য ভোরের যোগটি করতে পারেননি। জবাব এল, পদ্মাসনই যিনি করতে পারেন না, তিনি যোগের কিছুই জানেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০১
Share:

সদ্য গত কালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছিলেন, মায়ের সঙ্গে প্রাতরাশ করার জন্য ভোরের যোগটি করতে পারেননি। জবাব এল, পদ্মাসনই যিনি করতে পারেন না, তিনি যোগের কিছুই জানেন না।

Advertisement

প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রধান নেতা রাহুল গাঁধী যে ভরা সভায় এমন একটি খোঁচা দেবেন, তা হয়তো ভাবেননি খোদ প্রধানমন্ত্রীও। শুধু এই খোঁচার মজাটুকু নয়, নোট-বাতিলের ধাক্কার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ‘জনবেদনা সম্মেলনে’ উপস্থিত দলের হাজার পাঁচেক নেতা-কর্মী আত্মবিশ্বাসে অনেক বেশি টগবগে এক রাহুলকে পেলেন আজ। সঙ্গে পেলেন তাঁর অভয় বার্তা— মোদীকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কংগ্রেস তার নিজের পথে চলেই ২০১৯-এ ক্ষমতায় আসবে। মুছে যাবেন অহঙ্কারী ‘জাদুকর’ মোদী। এক তুড়িতে যিনি আমজনতার পকেটের টাকা কাগজ বানিয়ে ছেড়েছেন।

এ দিন সম্মেলনের শুরুতে ও শেষে, দু’বার বললেন রাহুল। দু’বারই বিজেপি দলটিকে নয়, পাখির চোখ করলেন মোদীকেই। ব্যঙ্গে, বিদ্রুপে, শ্লেষে ও কটাক্ষে সমানে বিঁধে গেলেন প্রধানমন্ত্রীকে। কথার ঝাঁঝে কখনও নস্যাৎ করলেন প্রধানমন্ত্রী যাবতীয় সাফল্যের দাবি। আবার কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশলকেই হাতিয়ার করে বোঝাতে চাইলেন, মোদী সকলের থেকে আলাদা শুধু তাঁর অহঙ্কারে। নয়তো দেশ চালাতে সক্ষম অনেক নেতা রয়েছেন বিজেপিতে। মোদীর ভাবমূর্তি তছনছ করা, এমনকী নিজের দলেই তাঁকে একা করে ফেলার লক্ষ্য নিয়েই আজ জনবেদনা সম্মেলনের মঞ্চ দাপালেন কংগ্রেস সহসভাপতি।

Advertisement

না, এ দিন তাঁকে দলের সভাপতি ঘোষণা করা হয়নি আনুষ্ঠানিক ভাবে। কিন্তু ভূমিকাটা ছিল তেমনই। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কৌশলী অনুপস্থিতিতে ‘ব্র্যান্ড রাহুল’ তৈরির মঞ্চ সাজানোই ছিল। মোদীর মুখের গ্রাস কেড়ে নেবেন, মনস্থ করেই এসেছিলেন রাহুলও। কখনও মস্করায় কখনও কটাক্ষে, কখনও আবার কথার ঝাঁঝে সেটাই করলেন দু’দফায়। এত দিন মোদী তাঁর বক্তৃতার ধরন নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন। আজ ছিল রাহুলের পালা। আতঙ্ক ও বিদ্রুপের খোরাক হয়ে ওঠার পর থেকে প্রিয় যে শব্দটি মোদী এড়িয়ে চলছেন, সেই ‘মিত্রোঁ’ শব্দটি আজ বললেন রাহুল। রীতিমতো মোদীকে ভেঙিয়ে। মোদীর ‘অচ্ছে দিন’-এর স্লোগান কেড়ে নিয়ে তাতিয়ে তুলতে চাইলেন কংগ্রেস নেতাদের। রাহুল দাবি করলেন, একমাত্র কংগ্রেসই পারে দেশে সুদিন ফেরাতে। আর সেটি হবে ২০১৯ সালেই। ভারতের মঙ্গলযানে মোদীর ছবি না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপের অন্ত নেই বলে কটাক্ষ ছুড়েও বিস্তর হাততালি কুড়োলেন রাহুল।

নোট-বাতিলের প্রশ্নে মোদীর বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাহুল আসলে এক সঙ্গে অনেকগুলি কাজ সারতে চান।
• আন্দোলনে ফিরিয়ে হতাশ ও ছত্রভঙ্গ সংগঠনকে ফের একসূত্রে গাঁধা ও চাঙ্গা করা। আড়াই বছরের মাথায় মোদীর টক্কর নেওয়ার জন্য দলকে তৈরি রাখা। •মোদী যেটাকে তাঁর সব চেয়ে বড় শক্তি বলে মনে করেন, সেটাকেই দেশের বড় বিপদ হিসেবে তুলে ধরা। ধারণাটি হল, তিনিই একা সৎ। একাই লড়ে যাচ্ছেন যাবতীয় দুর্নীতি ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।
• মোদী, তাঁর দল ও সঙ্ঘের মূল দর্শনেই আঘাত হেনে কংগ্রেসের চিরাচরিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহিষ্ণুতার পথ সম্পর্কে ভারত-ব্যাপী আবেদন জাগিয়ে তোলা।

কংগ্রেসের প্রতীক ‘হাত’ চিহ্নটিকে রাহুল এ দিন মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিহার হিসেবে তুলে ধরলেন এ দিন। তাঁর বক্তব্য, শিবঠাকুর, গুরু নানক, বুদ্ধদেব, মহাবীর— প্রত্যেকেই হাত তুলে অভয়-বার্তা দিয়ে গিয়েছেন যুগে যুগে। কংগ্রেসও বলে, ভয় না পেতে। উল্টো দিকে মোদীর নীতিই হল ভয় পাওয়ানো। সেটিকে বিদ্বেষ ও রোষে পরিণত করা। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে নোট বাতিল— সবই এই ভয় পাওয়ানোর রাজনীতি। সঙ্গে রাহুলের কটাক্ষ, ‘‘মোদী বলেন, মিত্রোঁ... আপনারা আপনাদের বর্তমান দিন, ১০-১৫ বছরে আমি চকমকে ভারত দেব। কেন? মোদী একাই পারেন, আর অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, লালকৃষ্ণ আডবাণীরা তেমন স্বপ্নের দেশ দিতে পারেন না!’’ কিছু দিন আগে ঠিক এ ভাবেই কৌশলে বিজেপির অন্দরে মোদীকে একঘরে করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা জেটলি, রাজনাথ, আডবাণীদের নেতৃত্বে জাতীয় সরকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। মোদী ডাক দিয়েছিলেন কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের। রাহুল আজ বিজেপি-মুক্ত দেশ নয়, ‘মোদী-মুক্ত’ ভারতের রসায়ন তুলে আনলেন, মমতার মতো। কমল নাথ বলেন, ‘‘আমরা মোদী-মুক্ত ভারতের কথা বলছি। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বেই সেটি সম্ভব। কংগ্রেসের সব নেতা-কর্মীকেই এক-এক জন রাহুল হয়ে লড়তে হবে।’’ সেই লড়াইয়ের মন্ত্রটিও বলে দিলেন রাহুল, ‘‘ভয় পাবেন না। মোদী চান মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের সাহায্য করে গরিব, কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসীদের ভয় পাইয়ে রাখতে। ভয় না পেয়ে ও সমাজে পাল্টা ঘৃণা না ছড়িয়েই তাঁর বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে। যত ক্ষণ না তিনি উৎখাত হচ্ছেন, তত ক্ষণ এই লড়াই চলবে।’’

কংগ্রেসের যে কোনও সম্মেলনে মাটিতে বসারই রেওয়াজ ছিল এত দিন। আজ ছিল চেয়ার। এই বদলই যেন অঘোষিত ভাবে রাহুল-জমানা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত। দলে রাহুলের ছাপ পড়তে শুরু করেছে এখন থেকেই। ইন্দিরা গাঁধীর পাশেই ঠাঁই পেয়েছেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীও।

বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘‘রাহুল তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেই মোদীকে নিশানা করছেন। এখনও তিনি ইসলাম বলতে হজরত আলি বলেন, চন্দ্রযান বলেন মঙ্গলযানকে। সিপাহি বিদ্রোহের সময় ভুল বলেন। আরও হোমওয়ার্ক দরকার এই পার্ট টাইম রাজনীতিকের।’’ বিজেপি রাহুলকে উপহাসের পাত্র হিসেবে দেখাতে চাইলেও সম্মেলেনে হাততালি ও হর্ষধ্বনির বহর, ফেরার পথে কর্মীদের অনেকের কথাবার্তায় কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট, রাহুলের স্লোগানটা বেশ মনে ধরেছে তাঁদের। ‘‘ডরো মাত্!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন