ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
ভারত প্রসঙ্গে আবার সুর নরম করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেনে নিলেন, ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আদৌ সহজ ছিল না। এর জন্য যে আমেরিকাকে মূল্য চোকাতে হয়েছে, ঠারেঠোরে তা-ও বুঝিয়ে দিলেন। তবে এ বার রাশিয়ার প্রেসি়ডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর তিনি ধৈর্য হারাচ্ছেন, বলে দিলেন ট্রাম্প।
শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ়-এ একটি সাক্ষাৎকারের সময় ভারতের প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ভারতের পণ্যে আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। এ নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন, রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ভারত। আমি ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলাম, কারণ ওরা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। এই কাজটা সহজ ছিল না।’’ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ধাক্কা খাওয়ার ফলে আমেরিকার যে ক্ষতি হচ্ছে, সরাসরি তা মানেননি ট্রাম্প। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘এটা খুব বড় একটা ব্যাপার। এর জন্য ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে।’’
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। আমেরিকার সঙ্গে প্রতি বছর ভারতের ১৬ লক্ষ কোটি টাকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চলে। কিন্তু সম্প্রতি ট্রাম্প চড়া শুল্ক আরোপ করায় সেই বাণিজ্য ধাক্কা খেয়েছে। বাতিল হয়ে গিয়েছে বহু বরাত। আমেরিকার বিকল্প হিসাবে অন্য দেশের বাজার খুঁজতে শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধের বিষয়ে নয়াদিল্লি অবস্থানে অনড়।
এই মুহূর্তে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত (প্রথম চিন)। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার তেল কেনা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখার জন্য পুতিনের দেশ তেলের দামে অনেক বেশি ছাড় দিতে শুরু করে তখন থেকে। আমেরিকার বক্তব্য, ভারত তেল কিনছে বলেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছে রাশিয়া। ভারতের তেল কেনার টাকা তাদের যুদ্ধে অর্থের জোগান দিচ্ছে। পরোক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং প্রাণহানির জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে। কিন্তু ভারত সে সব দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তারা বাণিজ্যনীতি স্থির করে। আমেরিকাও যে রাশিয়ার কাছ থেকে বেশ কিছু পণ্য কেনে, তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভারত-মার্কিন সম্পর্কের তিক্ততার কারণ অবশ্য শুধু রাশিয়ার তেল নয়। ট্রাম্প দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি করে আসছেন, আমেরিকার পণ্যে চড়া হারে শুল্ক নেয় ভারত। আবার, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর কৃতিত্বও তিনি দাবি করেছেন, যা ভারত অস্বীকার করে এসেছে। তা ছাড়া, আমেরিকার জন্য কৃষিজাত এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারও খুলে দিতে অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি। নানা কারণে তিক্ততা বেড়েছে। মাঝে এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চিনে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তিন রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ভাল চোখে দেখেননি ট্রাম্প। মনে করা হচ্ছে, তার পর থেকেই তিনি সুর নরম করতে শুরু করেছেন। এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে সমঝোতার আলোচনা চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসাবে সম্প্রতি সার্জিয়ো গোরকে নিয়োগ করেছেন ট্রাম্প। তিনিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে তিনি ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের ‘বিশেষ সম্পর্কের’ কথা উল্লেখ করে গোর বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের বন্ধুদের আলাদা উচ্চতায় রাখি। ভারত যাতে আমাদের সঙ্গে থাকে, দূরে না-সরে যায়, আমি তা নিশ্চিত করব।’’
পুতিনের উপর ধৈর্য হারানোর কথা জানিয়ে ফক্স নিউজ়ের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রুত সীমা ছাড়াচ্ছে।’’ পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা মেনে নিয়েও ট্রাম্প জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ না-হওয়ায় তিনি হতাশ। এ বার আরও কঠোর হতে হবে, মেনে নিয়েছেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের পাশে চেয়েছেন।