National News

বিহারের পথেই অসম, গ্রেস কমতেই ধস ম্যাট্রিকে পাশের হারে

বিহারের পরে এ বার অসম! গ্রেস নম্বর বন্ধ হয়নি, কেবল কমানো হয়েছে। তাতেই অসমে ম্যাট্রিকে পাশের হার ৫০ শতাংশের নীচে নেমে গেল। যা গত দেড় দশকের মধ্যে নিম্নতম। গত বার উত্তীর্ণ হয়েছিল ৬২.৭৯ শতাংশ। এ বারে পাশের হার মাত্র ৪৭.৯৪।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ২১:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি

বিহারের পরে এ বার অসম! গ্রেস নম্বর বন্ধ হয়নি, কেবল কমানো হয়েছে। তাতেই অসমে ম্যাট্রিকে পাশের হার ৫০ শতাংশের নীচে নেমে গেল। যা গত দেড় দশকের মধ্যে নিম্নতম। গত বার উত্তীর্ণ হয়েছিল ৬২.৭৯ শতাংশ। এ বারে পাশের হার মাত্র ৪৭.৯৪।

Advertisement

আর বিহারে কী হয়েছে? সোমবার বিহার স্কুল এডুকেশন বোর্ডের (বিএসইবি) দ্বাদশ শ্রেণির ফল প্রকাশিত হয়। দেখা যায়, সেখানে পাশের হার মাত্র ৩৫ শতাংশ। গজ ২০ বছরে বিহারে এই পরীক্ষায় পাশের হার এত কম হয়নি। গত বারের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম পাশ করেছে।

অসমে কী হল?

Advertisement

২০০১ সালে কংগ্রেস ক্ষমতার আসার আগে পর্যন্ত রাজ্যে ম্যাট্রিকে পাশের হার ৩০-৩৮ শতাংশ থাকত। যা গত দেড় দশকে দ্বিগুণ হয়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সম্প্রতি বিধানসভায় হিসেব দিয়ে দেখান, অসমে ম্যাট্রিক বা এইচএসএলসি পরীক্ষায় পাশ ও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণদের সংখ্যা আসলে এত বেশি হয় না। গ্রেসের সৌজন্যে শতাংশ লাফিয়ে বাড়ে। গ্রেস নম্বর দেওয়া হয় ৫ থেকে ২০ নম্বর পর্যন্ত। তার পরেই গ্রেস নম্বর দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে কমিটি গড়া হয়। যথেচ্ছ গ্রেস বন্ধ হয়। পরের বছর থেকে তিনটি বিষয়ে সর্বোচ্চ ৫ নম্বর করে গ্রেস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও জানানো হয়, এ বছর গণিতে প্রশ্নপত্র নিয়ে সমস্যা থাকায় সর্বোচ্চ ১৩ নম্বর গ্রেস দেওয়া হবে। ইংরেজি, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানে দেওয়া হবে সর্বাধিক ১০ নম্বরের গ্রেস। তার পরেও কেউ পাশ না করলে অতিরিক্ত গ্রেস দেওয়া হবে। এ বার থেকে ফিরবে সাপ্লিমেন্টারি ও কম্পার্টমেন্টাল ব্যবস্থাও।

এ বারের মেধা তালিকার প্রথম দশে গুয়াহাটির কেউ স্থান পায়নি। মেধা তালিকায় থাকা ২৯ জনের মধ্যে ছ’জন ডিব্রুগড় ও পাঁচ জন বরপেটার। নলবাড়ির পার্থপ্রতিম ভুঁঞা ৫৮৯ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়। ৫৮৮ পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে ডিব্রুগড়ের তন্ময়ী হাজরিকা ও রাজন্যা কাশ্যপ গগৈ এবং নলবাড়ি মুকালমুয়ার নুরুল হক আলি। ৫৮৭ পেয়ে তৃতীয় হয়েছে লখিমপুরের ভার্গবপ্রতীম বরা। ৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৬৪০ জনের মধ্যে স্টার পেয়েছে ১১,৩১২ জন।

নুরুলের বাবা মুস্তাফা আলি পেটের দায়ে বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। কৈশোর থেকেই ট্রাক চালানোর কাজ ঢোকেন তিনি। এখনও তাঁর সিংহভাগ সময় কাটে ভিন্ন রাজ্যের রাস্তায়। কিন্তু নিজের সন্তানদের শিক্ষায় কোনও আপোস করেননি তিনি। দুই কন্যাকে এমএ ও বিএ পড়াচ্ছেন। কিন্তু ছেলে যে মাত্র এক নম্বর পেলেই রাজ্যে প্রথম হত- এতটা বাবার বিশ্বাসই হচ্ছে না। রঘুনাথ চৌধুরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদর্শন পাঠকও ছাত্রের কৃতিত্বে অভিভূত। এই স্কুলে এত ভাল ফল আগে হয়নি। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান দু'টিই নলবাড়ি জেলায় আসায় জেলার মানুষও উৎফুল্ল।

আরও পড়ুন: জন্ম থেকে হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই দ্বাদশ শ্রেণীতে ৬৩% পেল আঁচল

অসম হল ভারতের একমাত্র রাজ্য যারা ১৪টি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ছাপায়। আগে বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক বিষয়ে অসমীয়ার সঙ্গে পাল্লা দিত বাংলা। এ বারের ম্যাট্রিকে দেখা গেল রাজ্যে মোট ১৩,০১৫ জন অসমীয়া, ৩,৮৪১ জন আরবি ও ১,৬৩২ জন সংস্কৃত নিয়েছিল। ১৫৩৬ জন বড়ো, ১,১০১ জন হিন্দি বেছে নিয়েছিল। ১,০৮৯ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে বাংলা রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। অন্য ভাষাগুলি হল নেপালি, সাঁওতালি, পারসিয়ান, গারো, খাসি, মণিপুরি, মিজো, উর্দু। সাঁওতালি ভাষার ছাত্র ছিল এবার সবচেয়ে কম, তিন জন।

প্রথম বিভাগে পাশ করলে আগের আমলে ল্যাপটপ মিলত। মেধাতালিকায় থাকাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নাসা ভ্রমণে। আজ শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, এ বার স্টার পেলে তবে ল্যাপটপ মিলবে। বছরে এক লক্ষ টাকা কম আয়ের পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারবে। নাসা ভ্রমণের কথা এখনও ভাবাই হয়নি। হিমন্ত বলেন, ‘‘এ বারই প্রকৃত ফল দেখা গিয়েছে। ভেবেছিলাম পাশের হার আরও কমবে। আগামী কাল সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার কথা ঘোষণা হবে। অনুত্তীর্ণ ছাত্রদের দু’মাস পড়ার সময় দেওয়া হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম ১০০০ ছাত্রীকে স্কুটি দেওয়া হবে। ফল খারাপ হওয়ায় কটন কলেজের অধ্যক্ষকে শো-কজ করা হবে।’’ ফল বেরোনোর পরে মরিয়ানি ও শ্রীরামপুরে দুই ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও তাদের বাঁচানো গিয়েছে।

বিহারের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধুরীও যেমন খুশি তাঁর রাজ্যের পাশের হারে। তাঁর দাবি, ‘‘এই ঘটনা প্রমাণ করল, কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে এখানে পরীক্ষা নেওয়া হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন