সংঘাতে আছে। সংস্কারে নেই। কাল থেকে ফের বসছে সংসদ। উত্তরাখণ্ড থেকে ইশরত জহান— বিভিন্ন প্রসঙ্গে সরকারকে কোণঠাসা করতে মুখিয়ে রয়েছে বিরোধীরা। সেই সঙ্গে রাজ্যে-রাজ্যে খরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্র ব্যর্থ হয়েছে— এই অভিযোগ তুলেও সরব হবে কংগ্রেস, বাম ও অন্য বিরোধী দলগুলি। জবাব দিতে তৈরি বিজেপিও। দু’পক্ষের প্রস্তুতির ছবিটাই বলে দিচ্ছে, এ বারের অধিবেশনেও জল ঢালতে চলেছে রাজনীতির কাজিয়া।
উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি তুলেছে কংগ্রেস। পাল্টা আক্রমণে যেতে কংগ্রেস ও সংযুক্ত মোর্চার আমলে কোন রাজ্যে কত বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে— সেই তালিকা নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে বিজেপি। ফলে এ বারের অধিবেশনের বেশির ভাগটাই অচল হয়ে থাকার আশঙ্কা। এর মধ্যেও অবশ্য অর্থ বিলের পাশাপাশি দেউলিয়া বিল, কারখানা আইন সংশোধনের মতো কিছু সংস্কারের বিল পাশ করিয়ে নিতে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করছে মোদী সরকার। তবে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মানছেন, পণ্য-পরিষেবা কর বিলে কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়া কঠিন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার মন্ত্র আওড়ানো মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সব থেকে বড় অস্ত্র এ বার অরুণাচল ও উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি। তারা এ নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনা চেয়ে নোটিস দিলে বিজেপি নেতৃত্ব প্রথমে যুক্তি দেন, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। সংসদে আলোচনা সম্ভব নয়। কিন্তু কংগ্রেস, বাম, জেডি(ইউ)-সহ বিরোধী দলগুলি অনড় থাকায় বিজেপি এখন বলছে, হোক আলোচনা। তাঁরাও পাল্টা তথ্য দেবে, নেহরু জমানায় ৭ বার, ইন্দিরা জমানায় ৪৫ বার, রাজীব জমানায় ৬ বার, মনমোহন জমানায় ১০ বার এবং পি ভি নরসিংহ রাওয়ের আমলে ১১ বার ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। বাম-জেডি(ইউ)-এর মতো দলগুলিকে জবাব দিতে মোরারজি দেশাই বা সংযুক্ত মোর্চার আমলে কত বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে, সেই তথ্যও তুলে ধরবে বিজেপি। উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি যে উচিত কাজ ছিল, সেই যুক্তিও দেওয়া হবে। তবে পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়লে কংগ্রেস সংসদ অচল করে দিতেও তৈরি।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, সনিয়া গাঁধী অরুণাচল-উত্তরাখণ্ড, ইশরত জহান থেকে শুরু করে খরা পরিস্থিতি নিয়ে দলের নেতাদের আক্রমণাত্মক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খরা পরিস্থিতি নিয়ে বাম ও অন্য দলগুলিও সরব হতে চায়। মোদী আজ ‘মন কি বাত’-এ খরা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জল সংরক্ষণের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তাঁর সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলতে বদ্ধপরিকর সনিয়ার দল।
কংগ্রেস আজ সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছে, ইশরত জহান ভুয়ো সংঘর্ষ মামলা নিয়েও তারা সংসদে আলোচনা চাইবেন। প্রশ্ন তোলা হবে, কেন ওই মামলার শুনানি হচ্ছে না। কংগ্রেসের দাবি, শুনানি শুরু হলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে অভিযুক্ত হিসেবে তলব করা হবে। তাই মোদী সরকার কখনও ডেভিড হেডলির বয়ান দেখিয়ে, কখনও ইউপিএ-আমলের হলফনামা দেখিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে, ইশরত ও তার সঙ্গীরা লস্কর-জঙ্গি ছিল। কংগ্রেসের যুক্তি, জঙ্গি হলেও কাউকে সাজানো সংঘর্ষে গুলি করে খুন করার অধিকার মেলে না। তাকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করতে হয়। মোদী জমানায় এখন ওই মামলায় অভিযুক্ত অফিসারদের গুজরাত পুলিশে বা সিবিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। কপিল সিব্বল বলেন, ‘‘ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ডেপুটি পুলিশ সুপার বয়ান দিয়েছিলেন, তৎকালীন ডিজি বানজারা কালো দাড়ি (অমিত শাহ) ও সাদা দাড়ি (মোদী)-র অনুমতি নিয়েই ইশরতদের বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট, এসআইটি এবং সিবিআই তদন্ত এ’টি ভুয়ো সংঘর্ষ বলেই রায় দিয়েছিল।’’