ডোকলামে বৃষ্টি, কমছে দুই সেনাই

প্রচণ্ড খারাপ আবহাওয়ায় আর যাই হোক অন্তত ‘লড়কে লেঙ্গে’ পরিস্থিতি সীমান্তে নেই বলেই জানা গিয়েছে। বৃষ্টি, ঠাণ্ডা হাওয়া এবং তুষারপাতের মধ্যে জনা ১০-১২ জওয়ানও তিন-চার ঘণ্টার বেশি টানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। উভয় পক্ষই বার বার সেনা বদলে শুধু বিতর্কিত এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখছে বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

চোখে চোখ রেখে ২৪ ঘণ্টা ডোকলামে দু’মাসের উপরে টানা দাঁড়িয়ে ভারতীয় এবং চিনা সেনাবাহিনী। গত তিন দিনের টানা বৃষ্টির জেরে দু’পক্ষই সেই পরিস্থিতি বদলাতে বাধ্য হয়েছে বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রের দাবি। সূত্রের মতে, ডোকলামে বিতর্কিত এলাকা থেকে ভারত এবং চিন সিংহভাগ সেনা সরিয়ে নিয়েছে। উভয় পক্ষেরই ১০-১২ জন করে সেনা ‘গোলমালের জায়গায়’ রয়েছেন। আশপাশের বাঙ্কারে আরও কিছু সেনা আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন, এমন দাবি প্রতিরক্ষা কর্তাদের।

Advertisement

প্রচণ্ড খারাপ আবহাওয়ায় আর যাই হোক অন্তত ‘লড়কে লেঙ্গে’ পরিস্থিতি সীমান্তে নেই বলেই জানা গিয়েছে। বৃষ্টি, ঠাণ্ডা হাওয়া এবং তুষারপাতের মধ্যে জনা ১০-১২ জওয়ানও তিন-চার ঘণ্টার বেশি টানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। উভয় পক্ষই বার বার সেনা বদলে শুধু বিতর্কিত এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখছে বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে। এক সময়ে উভয় পক্ষেরই চারশোর কাছাকাছি জওয়ান সেখানে ছিলেন। দিন পনেরো আগে চিন দাবি করে ভারত সেনার সংখ্যা কমিয়ে ৪০-এ নামিয়েছে। যা খণ্ডন করেছিল নয়াদিল্লি। এখন আবার তুলনামূলক ভাবে ভারতীয় জওয়ানের সংখ্যা বেশি বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একাংশের দাবি। তবে চিনা ফৌজ বিতর্কিত এলাকা থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেও পুরোপুরি সরে গিয়েছে বলে মনে করছেন না সেনাকর্তারা। তাঁদের মতে, কাছাকাছি কোথাও নিরাপদ আশ্রয়ে লুকিয়ে রয়েছে চিনা বাহিনীর বড় অংশ। আবহাওয়ার উন্নতি হলে ফের চিনা সেনার সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন সেনাকর্তারা। ডোকলামের উপরে নজর রাখছেন এমন এক সেনা কর্তার দাবি, ‘‘যদি আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার পরেও চিনা বাহিনী সেনার সংখ্যা না বাড়ায় তবে তা ইতিবাচক পদক্ষেপ। ভারতও সে ক্ষেত্রে যথাযথ পাল্টা পদক্ষেপ করবে।’’

আরও পড়ুন:বিজ্ঞান নয়, ইসরো ব্যস্ত রকেটব্যান্ডে

Advertisement

বিতর্কিত এলাকা থেকে সেনা সরানো হলেও ডোকলামে বাড়তি সেনা মোতায়েন এবং সরঞ্জাম মজুত করার ক্ষেত্রে দু’পক্ষই সমান ভাবে সক্রিয় বলে জানা গিয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে থেকেই ভারতীয় সেনা বাহিনীর একটি বাড়তি ব্রিগেড ওই তল্লাটে মোতায়েন হয়েছে। কৌশলগতভাবে সুবিধেজনক এলাকাতেই তাদের রাখা হয়েছে বলে সেনা সূত্রের দাবি। সব মিলিয়ে ১০-১২ হাজার সেনা ডোকলামে জড়ো করা হয়েছে। পাশাপাশি রাস্তা, বাঙ্কার, থাকার জায়গা, অস্ত্র-সরঞ্জাম রাখার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রসদ সরবরাহের জন্য লাইনও তৈরি হচ্ছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী নজরদারি চালিয়ে দেখেছে, চিনও বাড়তি বাহিনী এনেছে। ওই অঞ্চলে চিনের বেশ কিছু বাঙ্কার আছে। ভারতীয় সেনার দাবি, চিনা বাহিনী দু’তিনটি ট্যাঙ্কও সেখানে এনে লুকিয়ে রেখেছে।

এক ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্তার কথায়, ‘‘চিনা বাহিনী যেখানে এসে পড়েছে সেখান থেকে জলঢাকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিন্দু ব্যারাজ বা তোর্সা নদীর উৎসমুখ ঢিল ছোড়া দূরত্বে। ফলে ভারতীয় সেনাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেই এগোতে হচ্ছে।’’

কী সেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা?

সেনা সূত্রের দাবি, চিনারা হঠাৎ কিছু করে না বসলে যুদ্ধ পরিস্থিতি আপাতত নেই। কিন্তু ডোকলামে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কবে হবে তার ইঙ্গিতও নেই। সে কারণে ওই এলাকায় স্থায়ী ভাবে বাড়তি সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন