বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে সংসদে শোরগোল বিরোধীদের। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
বিহারের সংশোধিত ভোটার তালিকার খসড়া সব রাজনৈতিক দলের হাতে তুলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। খসড়া তালিকাটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে শুক্রবার দুপুর ৩টেয়। তার আগে বিরোধীদের শোরগোলে সংসদের উভয়কক্ষই উত্তাল। খসড়া তালিকা এবং বিহারের ভোটার তালিকার সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষ আলোচনা চেয়ে লোকসভার স্পিকারকে যৌথ ভাবে চিঠি দিয়েছে বিরোধী দলগুলি। সেই সঙ্গে রাজ্যসভাতেও এ নিয়ে শোরগোল হয়েছে। বিরোধীদের বিক্ষোভ এবং মুহুর্মুহু স্লোগানে ব্যাহত হয়েছে সভার কাজ।
১ অগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশের কথা কমিশন আগেই জানিয়েছিল। সেইমতো শুক্রবার বিহারের ৩৮টি জেলার ২৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে রাজনৈতিক দলগুলির হাতে তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যের ৯০,৮১৭টি বুথের পরিসংখ্যান রয়েছে ওই তালিকায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের হাতে জেলাশাসকেরা খসড়াটি তুলে দিয়েছেন। সর্বসাধারণের জন্য ওই তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে দুপুর ৩টে নাগাদ।
এ বিষয়ে বিশেষ আলোচনা চেয়ে বিরোধী দলগুলি একত্রে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা বিহারের ভোটার তালিকার সংশোধন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ভোটের মাত্র কয়েক মাস আগে এটা করা হচ্ছে। এটা অভূতপূর্ব। কমিশন ইঙ্গিত দিয়েছে, অনুরূপ সংশোধন সারা দেশে করা হবে। এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, সময় এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে আশঙ্কার প্রেক্ষিতে আমরা সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’’ বিরোধীদের বক্তব্য, ভোটার তালিকার এই সংশোধনের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন। এতে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। দেরি না-করে তাই এ নিয়ে আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে স্পিকারের কাছে। বিরোধীদের এই চিঠিতে সই করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি (শরদ পওয়ার), শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে), আরজেডি, আরএসপি প্রমুখ। কংগ্রেসের তরফে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, উপদলনেতা গৌরব গগৈ, তৃণমূলের তরফে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, এনসিপির তরফে সুপ্রিয়া সুলেরা চিঠিতে সই করেছেন।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং এসআইআর-কে দুমুখো অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে বিজেপি। পরিচয়ভিত্তিক যাচাই করা এবং তার পর এনআরসি করার উদ্দেশ্য আগেই ফাঁস হয়েছে। আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন, এটা নীরব এবং অদৃশ্য একটা কারচুপি। এটা ছাড়া বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’’
বিহারে চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধন শুরু হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, খসড়া তালিকা প্রকাশ সেই প্রক্রিয়ারই অংশ। এই তালিকা প্রকাশের পর তা নিয়ে কোনও আপত্তি আছে কি না, এক মাসের মধ্যে তা কমিশনকে জানাতে হবে। কারও নাম বাদ দিতে হলে বা কারও নাম তালিকায় জুড়তে হলে সেই সংক্রান্ত আবেদন ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি যে কোনও ভোটার অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিহারের এই এসআইআর নিয়ে একাধিক মামলা হয়েছে। অভিযোগ, ভোটারদের কাছ থেকে ভোটাধিকার যাচাইয়ের জন্য যে নথি চাওয়া হয়েছে, সেই তালিকায় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডের মতো সহজলভ্য নথি রাখা হয়নি। আদালতে তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন।