Five States Election Results

ফল বলছে, মোদীর নোট বাতিলে আস্থাই রেখেছেন গরিব মানুষ

নোট বাতিলের পর যে যে স্তরে জনমত নেওয়া হয়েছে, সেখানেই বিজেপি-র সাফল্য এসেছে।

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ১৫:৫৬
Share:

সদর দফতরে বিজেপি কর্মীদের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স।

পঞ্চায়েত। পুরসভা। বিধানসভা।

Advertisement

নোট বাতিলের পর যে যে স্তরে জনমত নেওয়া হয়েছে, সেখানেই বিজেপি-র সাফল্য এসেছে। তা সে নির্বাচন দেশের যেখানেই হোক না কেন! শতাংশের হিসাবে হয় গত নির্বাচনের থেকে প্রাপ্ত ভোটে বিজেপি এগিয়ে, নয়তো প্রায় গায়ে গায়ে। আহামরি রকমের পিছিয়ে পড়তে দেখা যায়নি।

গত ১৫ দিনে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিভিন্ন স্তরে নির্বাচনের ফল প্রকাশ্যে এসেছে। মহারাষ্ট্রে বৃহন্মুম্বই-সহ ১০টি পুরসভা এবং গ্রামীণ ওড়িশায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর শনিবার উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল জানা গিয়েছে। প্রায় সর্বত্রই বিজেপি-র রমরমা।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত বছরের ৮ নভেম্বর দেশ জুড়ে ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। তার পর থেকেই বিরোধী শিবির একজো়ট হয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রচার শানিয়েছে। সংসদের বিতর্কে তো বটেই, নির্বাচনগুলিতেও প্রধান ইস্যু ছিল এই নোট বাতিল। বিরোধী দলগুলি এবং অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেছিলেন, নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষ ভয়ানক সমস্যায় পড়েছেন। এবং তার প্রভাব ভোটবাক্সে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সেই তত্ত্ব পুরোপুরি খারিজ করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নোট বাতিলের ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বটে, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই আস্থা রেখেছেন বিজেপিতে।

গত মাসেই দেখা গিয়েছে, গোটা গ্রামীণ ওড়িশা ভোটের বাক্সে বিজেপি-র প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছে। নবীন পট্টনায়কের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে তারা উঠে এসেছে দু’নম্বরে। বৃহন্মুম্বই পুরসভাতেও তারা সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়েছে শিবসেনার সঙ্গে। এমনকী, বোর্ড গড়তে সেনাকে সমর্থনও করেছে তারা। কিন্তু, নোট বাতিলের প্রভাবে কোথাও পিছিয়ে পড়তে দেখা যায়নি তাদের। অথচ, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর দিল্লি বা বিহারে প্রায় গো-হারা হেরেছে বিজেপি। ২০১৪-র নির্বাচনে বিপুল ঝড় তুলে যে ভাবে তারা ক্ষমতায় এসেছিল, তা কোথাও যেন স্তিমিত হয়ে যায়। কিন্তু, নভেম্বরের নোটবাতিল পরিস্থিতি ফের যেন তাদের লড়াইতে ফিরিয়ে দিয়েছে। শুধু লড়াইতে টিকে থাকা নয়, জয়ের স্বাদও দিয়েছে।

উত্তরপ্রদেশের ফল প্রকাশ্যে আসতে এই তত্ত্বে যেন সিলমোহর পড়ল। দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যের প্রায় ৭৮ শতাংশই গ্রামীণ এলাকায় পড়ে। সেই গ্রাম উত্তরপ্রদেশকেও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে থাকতে দেখা গেল। বুন্দেলখণ্ডের মতো সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এলাকাতেও ১৯টি আসনের প্রতিটাতেই বিজেপি জিতেছে। ঠিক তেমন ভাবেই পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের মতো বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকাতেও ১১৫ টি আসন পেয়েছে বিজেপি।

রাজধানীতে জয়ের খুশিতে মাতোয়ারা বিজেপি কর্মীরা। ছবি: রয়টার্স।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতি শহরাঞ্চলের থেকে আলাদা। সেখানে নগদ লেনদেনের উপর মানুষজন খুব একটা নির্ভরশীল নন। খুব প্রয়োজন ছাড়া নিজেদের কাছে নগদ টাকাও তাঁরা রাখেন না। কিন্তু, গ্রামীণ মহাজনদের কাছে বিপুল পরিমাণ কাঁচা টাকা থাকে। নোট বাতিলের ফলে তারাই ‘প্যাঁচে’ পড়েছে বলে স্বল্প আয়ের মানুষদের ধারণা। সত্তরের দশকে ইন্দিরা গাঁধীর ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগান যে ভাবে উত্তাল করেছিল নাগরিকদের এই অংশটাকে, সে ভাবেই মোদীর নোট বাতিলে তাঁরা খুশিই হয়েছেন। তাঁদের ধারণা, তথাকথিত ‘বডলোক’দের বিরুদ্ধেই লড়াই চালাচ্ছেন মোদী। জাতপাত-ধর্ম নির্বিশেষে মোদী সেই অংশের মানুষদের ভোটই পেয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকদের মত। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন বরাবরই জাতপাতের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে নতুন এক আর্থিক পরিচিতি পেয়েছে গ্রামীণ মানুষ। মহাজন বিরোধী সেই ভাবনাটাই মোদীর পাশে থেকেছে। এটা অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও সত্যি।

আরও পড়ুন: বেনজির গেরুয়া ঢেউ উত্তরপ্রদেশে, শোচনীয় ভরাডুবির মুখে সপা-কং-বসপা

এই মতকে সমর্থন করেছেন বিজেপি বিরোধী একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ঘরোয়া আলোচনায় তিনি বলেছেন, ‘‘নোট বাতিল গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। যদি কোনও প্রভাব পড়ে থাকে, তা গ্রামের অল্প বিত্তশালী বা মহাজনদের উপরে পড়েছে। এই সংখ্যাটা সেই অর্থে কম।’’ তাঁর মতে, মোদীর ঘোষণায় সেই অংশের আর্থিক লোকসান হয়েছে বলে মনে করেছেন গ্রামের মানুষ। এবং তাঁরা সেটাকে সমর্থনও করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মোদী তাঁর ওই সিদ্ধান্তে গ্রামীণ মানুষের মন জয় করেছেন। ভোটের বাক্সে সেটাই আমরা দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন