প্রাক্তন ডিজিপি-ই এখন আদরের ‘অঙ্ক স্যর’

রাজ্যের দুঁদে ডিজিপি এখন স্কুলের ছাত্রদের আদরের অঙ্ক স্যর।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

ক্লাস নিচ্ছেন অসমের প্রাক্তন ডিজিপি মুকেশ সহায়। নিজস্ব চিত্র

পুলিশপ্রধান হিসেবে স্কুলের অনুষ্ঠানে এসে শুনেছিলেন সেখানে অঙ্কের শিক্ষক নেই। তাই কথা দিয়েছিলেন, কখনও সুযোগ পেলে নিজেই স্কুলে অঙ্ক শেখাতে আসবেন। কথা রাখলেন ১৯৮৪ ব্যাচের আইপিএস মুকেশ সহায়। অবসর নেওয়ার পরেই তিনি হাজির হলেন গুয়াহাটির ভরলুমুখ থানার পাশে সোনারাম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

Advertisement

রাজ্যের দুঁদে ডিজিপি এখন স্কুলের ছাত্রদের আদরের অঙ্ক স্যর।

রাজ্য পুলিশের মাথা হিসেবে তাঁর আমলে অনেক জঙ্গি মূলস্রোতে ফিরেছে। শুরু হয়েছে আলোচনা। নাগরিকপঞ্জির প্রথম খসড়া প্রকাশের সময়েও রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে সফল তিনি। একাধিক বার অসমিয়া ও অ-অসমিয়াদের টানাপড়েন সামলেছেন। অসম লোকসেবা আয়োগে টাকার বিনিময়ে চাকরি কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস হওয়া ও জনা বিশেক আমলা, পুলিশকর্তাকে হাজতে ঢোকানোও মুকেশ সহায়ের আমলের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

Advertisement

অবশ্য উর্দিতে না থাকলে বিনয়ী, হাসিমুখ সহায়কে দেখলে শিক্ষক মনে হওয়াই স্বাভাবিক। বিহারের ছাপড়া জেলার বাসিন্দা সহায় বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন পদার্থবিদ্যা নিয়ে। পছন্দের বিষয় ছিল অঙ্ক। তাই সোনারাম স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়ে যখন শুনলেন দু’বছর ধরে স্থায়ী অঙ্কের শিক্ষক ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিক স্কুল চলছে, তখনই জানিয়ে দেন হাতের কাজ মিটলেই তিনি ওই স্কুলে অঙ্ক করাবেন।

কর্তারা অমন কত কথাই তো দেন। কিন্তু সহায় যে সত্যিই সোনারাম স্কুলের সহায়তায় হাজির হয়ে যাবেন তা ভাবতে পারেননি শিক্ষকরা। গত মাসের শেষে অবসর নেন সহায়। তার পরেই হাজির হয়ে যান স্কুলে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কনকলতা দেবী জানান, গত বিশ দিন ধরে তিনি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন। সহায়কে দেখে কে বলবে তিনি সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা? মনে হচ্ছে ছাত্রদের আদরের পোড়খাওয়া শিক্ষক।

সহায় নিজে বললেন, “ছাত্রজীবনে পছন্দের বিষয় ছিল অঙ্ক। তাই ছাত্রদের সেটাই শেখাতে এসেছি। আর ওদের শিক্ষকও ছিল না। আনন্দের কথা সম্প্রতি আরও এক জন অঙ্ক শিক্ষক যোগ দিয়েছেন স্কুলে।”

কিন্তু পুলিশ থেকে পণ্ডিতমশায়! সমস্যা হচ্ছে না? আদতে ছাপড়া জেলার বাসিন্দা মুকেশবাবু সংস্কৃত শ্লোক আওড়ে বলেন, “আত্মার যাতে আনন্দ সেটাই করা ভাল। ছাত্রদের সঙ্গে মিলেমিশে এই যে অঙ্ক করছি, তার আনন্দই আলাদা।”

কত দিন শিক্ষকতা করবেন স্কুলে? সহায়ের কথায়, “আমি আগামী কালের কথা ভাবি না। আমি বর্তমানে বাঁচি। এখন পড়াতে ভাল লাগছে। কত দিন পড়াব এখনই বলতে পারছি না।” অঙ্ক শেখানোর বিনিময়ে কোনও সম্মানদক্ষিণা নিচ্ছেন না তিনি। তাঁর মতে, “অবসরের পরে বসে থেকে সময় কাটাতে হচ্ছে না। একঝাঁক তরতাজা মনের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছি। এটাই বড় কথা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন