Anurag Thakur

‘কেন্দ্রের পরামর্শে উপকৃত হবে বাংলা’

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বঞ্চনার অভিযোগ আনলেও তিনি মানছেন না। বলছেন, রাজ্য কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে চললে রাজ্যের মানুষেরই লাভ হবে। আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ সিংহ ঠাকুরের দাবি, ৪ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের অল্প অংশই গ্রামে ফেরায় শিল্পোৎপাদন শুরুতে সমস্যা হবে না। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বঞ্চনার অভিযোগ আনলেও তিনি মানছেন না। বলছেন, রাজ্য কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে চললে রাজ্যের মানুষেরই লাভ হবে। আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ সিংহ ঠাকুরের দাবি, ৪ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের অল্প অংশই গ্রামে ফেরায় শিল্পোৎপাদন শুরুতে সমস্যা হবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০২:১২
Share:

অনুরাগ ঠাকুর। ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ৫৩ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আপনাদের হিসেবে রাজ্যের পাওনা কত? কবে তা মেটানো হবে?

Advertisement

উত্তর: সঙ্কটের সময়ে রাজ্যের নগদ টাকায় যাতে টান না-পড়ে, তাই কেন্দ্রের রাজস্ব আয় কমে যাওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় করের ভাগ হিসেবে রাজ্যগুলিকে ৯২,০৭৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থ কমিশনের অনুদান বাবদ দেওয়া হয়েছে ২৮,৪৮৭ কোটি। রাজ্য ৩%-এর বদলে জিএসডিপি-র ৫% পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে। সব রাজ্য ধরলে অতিরিক্ত ৪.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মিলবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাজ্যগুলিকে আরও ১৩,৩০০ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। অতিমারি ও তার ধাক্কা সামলাতে রাজ্যগুলিকে আমরা যথাসম্ভব সাহায্য করছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যগুলির জন্য ৪,১১৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। টেস্টিং কিট, ল্যাব-এর জন্য ৪,৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: রাজ্যকে আরও ২% বাড়তি ঋণের ছাড়পত্র দিলেও কেন্দ্র ৪ দফা শর্ত চাপিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলছে, এতে মাত্র ০.৫% বাড়তি ঋণ মিলবে।

Advertisement

উত্তর: আগে যতটা ঋণ নেওয়ার অনুমতি ছিল, তার মাত্র ১৪% রাজ্যগুলি কাজে লাগিয়েছে। ৮৬% এখনও অব্যবহৃত। বাড়তি ২% ঋণের মধ্যে ১.৫%-এ কিছু নির্দিষ্ট সংস্কারের শর্ত রয়েছে। সেগুলো কী? রাজ্যের অর্থনীতির বহর বাড়াতে হবে, ঘাটতি কমাতে হবে, যাতে ঋণের বোঝা মাথায় চেপে না-বসে। পরিযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণ ও রেশন বিলিতে চুরি বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্য ও নগরোন্নয়নে জোর দিতে হবে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার করতে হবে। এই সব সংস্কারে কি বাংলার মানুষের উপকার হবে না?

আরও পড়ুন: আনলকডাউনেও কোয়রান্টিনে মা শীতলা, মহামারির দৈব যোগের শিকড় কি আলগা হচ্ছে?

এই সংস্কারের উদ্দেশ্য হল পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বৃদ্ধি। গরিব ও চাষিদের সাহায্য নিশ্চিত করা। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের ত্রাণের জন্য ১০০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। লকডাউন ও অন্যান্য পদক্ষেপ করার আগে প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সহযোগিতামূলক কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কই আমাদের মন্ত্র।

প্রশ্ন: প্যাকেজে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে মাথা গোঁজা ৮ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য নিখরচায় রেশনের ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু এখন তো তাঁরা গ্রামে রওনা হয়েছেন। তা হলে ফ্রি রেশন বিলি হবে কী করে?

উত্তর: এই কারণেই আমরা ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’-এর ঘোষণা করেছি, যাতে দেশের সর্বত্র রেশন মেলে। এখনও পর্যন্ত পরিযায়ী শ্রমিক-সহ ৮০ কোটি মানুষের মধ্যে ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন চাল-ডাল বিলি হয়েছে। মাথা-পিছু ৫ কেজি করে চাল বা গম, পরিবার-পিছু ১ কেজি ডাল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ১৯ মে পর্যন্ত জানি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যে ডাল বিলি শুরু করেনি। আমরা নজর রাখছি। রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে এগোনো হচ্ছে, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের চিহ্নিত করে সুরাহা পৌঁছে দেওয়া যায়।

প্রশ্ন: অর্থনীতির কর্মকাণ্ড শুরু করতে লকডাউন তোলা হচ্ছে, অন্য দিকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা গ্রামে ফিরছেন। এ দিকে শহরে শ্রমিকদের অভাব, ও দিকে গ্রামের অর্থনীতিতে বিপুল চাপ— কী ভাবে সামলাবে সরকার?

উত্তর: অনেকেই ঘরে ফিরেছেন, আবার অনেকেই থেকে গিয়ে কাজ শুরু করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হিসেবে, ৪ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে ৭৫ লক্ষ ঘরে ফিরছেন। বড় অংশই কাজের জায়গায় থেকে গিয়েছেন। আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়লে অনেকে হয় তো ফিরতে শুরু করবেন। গ্রামে ফেরা মানুষের আয়ের জন্য মনরেগা-য় ১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

প্রশ্ন: প্যাকেজে মধ্যবিত্তের জন্য কিছুই নেই। তাঁরা সততার সঙ্গে আয়কর জমা করেন। আগামী দিনে কিছু সুরাহা মিলবে?

উত্তর: প্রথমেই বলব, প্যাকেজে মধ্যবিত্তের জন্য অনেক সুবিধা রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলে দিয়েছে, ৬ মাসের জন্য কোনও ঋণে ইএমআই জমা করতে হবে না। প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা, নির্মাণ কর্মীদের সাহায্য, টিডিএস-টিসিএস কমানো হয়েছে। ১৭ লক্ষ চাকুরিজীবীকে লকডাউনের মধ্যে ২৭ হাজার কোটি টাকা আয়কর রিফান্ড দেওয়া হয়েছে। কৃষি, ছোট-মাঝারি শিল্পের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কার মধ্যবিত্ত উদ্যোগপতিদের জন্যই। ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের ব্যবস্থার ফলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণি উপকৃত হবে। দেউলিয়া বিধি, কোম্পানি আইনে সুবিধার ফলেও কর্পোরেট সংস্থার মধ্যবিত্ত কর্মীরা লাভবান হবেন।

(সাক্ষাৎকার: প্রেমাংশু চৌধুরী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন