ছেলে এসপি না হলে সৎকার নয় বলজিতের

জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি-যুদ্ধে নিহত পুলিশ সুপারের দেহ সৎকার করতে অস্বীকার করল তাঁর পরিবার। গত কাল পঞ্জাবের গুরদাসপুরের দীনানগর থানায় হামলার সময় জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয় পঞ্জাব পুলিশের এসপি ( গোয়েন্দা) বলজিৎ সিংহের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

দীনানগর (পঞ্জাব) শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৯
Share:

বলজিৎ সিংহ

জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি-যুদ্ধে নিহত পুলিশ সুপারের দেহ সৎকার করতে অস্বীকার করল তাঁর পরিবার। গত কাল পঞ্জাবের গুরদাসপুরের দীনানগর থানায় হামলার সময় জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয় পঞ্জাব পুলিশের এসপি ( গোয়েন্দা) বলজিৎ সিংহের। কিন্তু আজ তাঁর অন্ত্যেষ্টি করতে অস্বীকার করেছেন নিহত পুলিশ কর্তার স্ত্রী কুলবন্ত কউর।

Advertisement

কুলবন্ত জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলের এসপি পদে আর দুই মেয়ের তহসিলদার পদে চাকরি না হওয়া পর্যন্ত স্বামীর দেহ সৎকার করতে দেবেন না তিনি। বলজিৎ আর কুলবন্তের তিন সন্তান। এক ছেলে, মণীন্দ্র সিংহ (২৪) ও দুই মেয়ে প্রমীন্দ্র কউর (২২) এবং রবীন্দ্র কউর (২০)।

কালকের জঙ্গি হামলায় নিহতদের নিকটাত্মীয়কে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে পঞ্জাব সরকার। সেই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণও। কিন্তু সেই আশ্বাসে ভুলছেন না কুলবন্ত। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, তাঁর শ্বশুর অর্থাৎ বলজিতের বাবার মৃত্যুর পরে বলজিতের সরকারি চাকরি পেতে প্রায় দু’বছর সময় লেগে গিয়েছিল। তাই তিনি চান না, তাঁর পরিবারও সেই একই হেনস্থার মুখোমুখি হোক। আশির দশকে, সন্ত্রাস দীর্ণ পঞ্জাবে খলিস্তানি জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন বলজিতের বাবা আচ্ছার সিংহ। জঙ্গিদের ঘটানো বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল আচ্ছারদের গাড়ি। তিনিও পুলিশে চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পঞ্জাব পুলিশে চাকরি পান বলজিৎ। সেটা আশির দশকের মাঝামাঝি। ১৯৯১ সালে তরণ তারণে এক জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় বলজিতের এক তুতো ভাইয়েরও। তিনিও পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। এসএসপি আশিস চৌধুরি অবশ্য আজ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, নিহত এসপি-র স্ত্রীর দাবি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

Advertisement

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল আজ জানিয়েছেন, হামলায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে তিিন আগামী কাল দেখা করবেন। এসপি বলজিৎ সিংহের পরিবারের সঙ্গে কাল প্রয়াত তিন হোম গার্ড, দেইস রাজ, বোধ রাজ ও সুখদেব সিংহের বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও দেখা করবেন বাদল। আগামী কালই আবার পাক হাইকমিশনার আব্দুল বসিতের সঙ্গে একটি বৈঠকের কথা ছিল বাদলের। কিন্তু কালকের জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে সেই বৈঠক তিনি বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দীনানগর থানার কাছ থেকেই আজ সকালে উদ্ধার হয়েছে দু’টি গ্রেনেড। তড়িঘড়ি সে দু’টিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কাল যে ব্যক্তির মারুতি-৮০০ চুরি করে জঙ্গিরা পালিয়েছিল, সেই কমলজিৎ সিংহ মাথারু আজ হাসপাতালে শুয়ে জানিয়েছেন কালকের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। নিজে একটা রেস্তোরাঁ চালান। আর তার সব্জি কেনার জন্যই কাল সাত সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কমলজিৎ। জানিয়েছেন, দীনানগর থানা তাঁর বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। কাল যখন গ্যারাজ থেকে গাড়ি বের করছিলেন, তার পর পরই হামলা চালায় জঙ্গিরা। গাড়ি থামানোর জন্য উইন্ডস্ক্রিনে গুলি ছোড়ে তারা। জঙ্গি হামলা হয়েছে বুঝতে পেরে গাড়ি ঘোরাতে গিয়েছিলেন কমলজিৎ। কিন্তু জঙ্গিরা সেই সময় তাঁর উপরও গুলি চালায়। তাঁর কাঁধ আর হাতে গুলি লেগেছিল। কমলজিতের কথায়, ‘‘মরার ভান করে পড়ে ছিলাম। তাতেই জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা পাই। আমায় রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলেই গাড়িটা নিয়ে পালায় ওরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন